হৃদভূমে জন্ম নেবে কি ইচ্ছার বর্ণমালা
কি মমতায় বেঁধে ফেলেছো।
তবে কি আবার মন পাখি খুঁজবে আলো
আলোর শেষে।
একদিন রূপালী বর্ষা ধারা
নামবে তেপান্তরের বিলে, সে লিলুয়া হাওয়ায়
ক্লান্ত ছায়ায় রৌদ্র পোড়া গন্ধ মুছে ফেলে
আবার বুকের টেনে নেবে। বলবে
নীল মাখ প্রিয় দু’হাতে। বিশ্বস্ত চোখে
যে ঢেউ জেগে উঠতো গোপনে, সেখানে গভীরে নামো আরো গভীরে।
রাতভোর গল্প হবে, আবার বিষন্নতা কাটিয়ে
লেকের ধারে আবৃত্তির আয়োজন জুড়ে
থাকবে নিরূপম প্রার্থনা।
আবার সুরের পাখি ঝরাবে পালক
আমি পড়ব ধারাপাত তুমি খুঁজবে অরণ্য চোখে।
দু’হাতে কুড়াবো রাশি রাশি শিউলি
ঘাস ফুলে ভরা আঁচল ছেড়ে
প্রিয় ঘ্রাণ মেখে নিও, আবার
শারদ সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বলবে
এই নিপবন এই গড়ের মঠকে স্বাক্ষী মেনে।
কিন্তু মনকে চিনি ভালো করে
সে কোষে জাগবেকি স্পন্দ
দীপালী আলোয় হৃদভূমে জন্ম নেবে কি
ইচ্ছার বর্ণমালা।
একদিন ভালোবাসা ছিল
একদিন জমা ছিল প্রেম বিশাল আটলান্তিকের মত
উচ্ছাস ছিল, ছিল কৌতুহল অসীম।
একদিন কথা হোত গোপনে
বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে,
ধ্রুবতারা জ্বলতো চোখের তারায়
বৃষ্টির উদ্যানে ম্লান ছিল অবিরাম,
একদিন পড়তাম ধারাপাত বর্ণমালা
ব্যাকরণ আর শ্লোক বেলা।
একদিন গল্প হত রাত ভোর
একদিন হেঁটে যাওয়া ছিল সবুজ ঘাসে
সরষে ক্ষেতে, মটরশুটির বনে
বটের নীচে অতি গ্রীষ্মে অথবা অতি হেমন্তে।
একদিন অপেক্ষায় ছিল ভীষণ সুখ
প্রাপ্তীর টান ছিল চুম্বকের মত, হারানোর ভয় ছিল
তবে কোন সংশয় করেনি পিছুটান।
একদিন তোমার জন্য জমানো বরফ ছিল চোখে
রূপোলী ভোর, সদ্য ম্লান, পূজোর ফুল
ধূপ ছিল সন্ধ্যায়, নিশি প্রদীপ, গানের আসর ছিল।
একদিন তোমার জন্য ফুল ফুটতো বাগানে, প্রজাপতির ডানায়
খচিত প্রাসাদ ছিল
আকাশ থাকতো নীল, বলাকার নীল মেখে নিতো ডানায়
আকাশ মেঘলা হরে বিষন্ন মন হয়ে যেত লীন।
একদিন পাহাড়ের বুকে
তারারা জ্বালতো দীপ
জোছনা গলে পড়ত পাদদেশে
সুগন্ধীর বাতাস ছিল, ঢেউ ছিল বুড়ি ভৈরবে
একদিন তোমার জন্য কোলাহল ছির স্কুল মাঠে
অশান্ত দুপুর বেলা, স্কুল ফাকি ছিল
একদিন ভুল করে চিঠি লিখতাম
তোমার জন্য ভুল কলে ফেলতাম পাকা খাতায়।
একদিন ভালোবাসা ছিল
একদিন ভালোবাসতাম আমি তোমাকে।
অহোরাত্র জেগে পাহারায় অনাদিকাল
আগ্নেয়গিরি সমস্ত জ্বলন্ত আভা এই হাতের
মুঠোয় তুলে এনেছি। তোমাকে খুশি করার জন্য
হিমালয় খুড়ে অতল গহ্বরের সবচেয়ে শীতল জলে অবগাহন।
দ্যাখো একটুও ফাকি নেই, তপ্ত বালু রাশির উপর দাঁড়িয়ে
তবু করিনি এক খণ্ড মেঘের আশা। প্রার্থনা করেছি
যদি মুক্ত বলাকা হতে পারি
একবার তোমার স্বর্গীয় সংসারে
উঠোনে ছড়ানো পৌষ ধানের পাশে লুকিয়ে দেখে নেবো এক পলক
বিপুল জলরাশির উপর দাঁড়িয়ে, নায়াগ্রার জলপ্রপাত
বুকে ধারণ করে দানবের মত শক্তিশালী
তবু, যখন তোমার সামনে
এই অসীম ধরণী নত নয়! আমি তো ধূলিকণা।
শুনেছি মালিনীর বেশে খুব ভোরে সদ্য ঘ্রাণ মেখে নিতে
যদি প্রজাপতি হতে পারি
অহোরাত্র জেগে পাহারায় অনাদিকাল, দেখে নেবো
দলগুলো কিভাবে ম্যালে চোখ তোমার অনিন্দ্য অনুপ্রবেশে।
একদিন হতে চাই ঘাস নরম উদ্যান
হেঁটে চল এই বুকের জমিনে
আর কোন প্রার্থনা নেই।
নিরূপম প্রার্থনা ছিল
অভিবাদন এই মেঘ বৃষ্টি জল ধারায়
এই সমুদ্র ম্লান জল কল্লোল এই অসীম নীল
অথই গভীরে নামা শুধু তোমাকে দেবো বলে
কি নিরূপম প্রার্থনা ছিল
মুঠো খুলে দেখি সবটাই ছাই
মেঘেরা দল বেঁধে ফিরে গ্যাছে
তবে কি ডেকে ফিরে গ্যাছে
পড়ে আছে হলুদ পত্রাঞ্জলি
কি অন্ধকার কি মুষল ধারায় ভিজছে অধরা
তোমাকে দেবো তাই
রুমাল খুলে দেখি বিবর্ণ বিষন্ন পুষ্পাঞ্জলি
তোমাকে দেবো বলেই
কি আরাধনাই না করেছিলাম
আকাশ হলো কালো কাক
বৃষ্টি ধুয়ে দিচ্ছে তো দিচ্ছে
কিন্তু অন্তর দেয়ালে লেপ্টে থাকা কাজল
তার কি হবে
পড়ে থাকা অবস দেহ তবু প্রচেষ্টা নিরন্তর
তবু তোমাকে দেবো বলেই
নিঃশ্বাস এখনও জীবিত।
কখনও জানা হবে না
আজ জ্যাকসন হাইটের সব আলো গুলো যেন
নিভে গ্যালো একসাথে! নীরবতার একরাশ কালো ধোঁয়া
সাঁঝের বেলাটাকে গাঁঢ় থেকে আরও গাঢ় করে তুলল!
আমি জীবন জীবিকায় নিয়ত- ন’টা পাঁচটা
আফিস করে চলেছি, ক্লান্তির অভাবে অথবা
খুব অজান্তে, হয়তো ব্যস্ততার নিয়ম-অনিয়মে
কোন শারদীয় পড়ন্ত বিকেলে-
ক্যামন আছে সে- আর জানা হ’ল না।
আর একটি বারের জন্যও জানা হবে না; সুমিতা
তুমি ক্যামন আছো। আজ আমার প্রতিটি কোষে
রক্ত কণিকায় মাতাল অনুভূতি, নিঃশব্দ পথে
অজানা পথিক।
আমার চেতনার বিছানা জুড়ে নেমে আসে
আঁকা আঁকি আর কাদা মাটির এলমেল গল্প গুলো।
সন্ধ্যা বাতি জ্বালতে যখন দেশলাইয়ের জন্য
আমার বাড়ীর দরজায় দাঁড়াতে- আমি আবেগাপ্লুত
অপলক নিস্তব্ধ বালক, ভালোবাসার কী আকুতিই না ছিল!
রন্ধ্রে রন্ধ্রে- উপলব্ধিতে, অনুভূতির ভ্যাজানো দুয়োর
খুলে যায়...।
তুমি যোজন দূরে, আর এই আমি পড়ে আছি আটলান্টিকের
এপারে- সংসার ব্যঞ্জনায়, নাট্য রচনায় কাটে,
ছেঁড়া ছেঁড়া স্মৃতির অন্তরাতে বেঁধে সুর- বাঁধি তোমাকে,
তবু কখনও জানা হবে না সুমিতা তুমি ক্যামন আছ!
0 মন্তব্যসমূহ
অস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।