....

রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রসঙ্গে | উপল আদিত্য ঐক্য




শিল্পের প্রয়োজনীয়তা টা কোথায়? নিশ্চয় এর সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে একটা কথা হয়তো বলা যায় General Discussion এর মাধ্যমে কিন্তু কোন কিছু না বলেই ভাবের প্রকাশ একমাত্র শিল্প' দ্বারাই সম্ভব। মানুষের মুক্তি, অসহায়ত্ব কিংবা আনন্দ-বেদনা যখন কবিতাগানে কিংবা নাচে ফুটে ওঠে, তা তখন General Discussion লেভেলে থাকে না, তা তার অতীত হয়ে যায়। এখানেই শিল্পের প্রয়োজনীয়তা, এখানেই এর প্রকাশ। অর্থাভাবকে বা এর রূপকে প্রকাশ করাই শিল্পের প্রধান কাজ
আচ্ছা, রূপকে সুব্যক্ত করাই যদি শিল্পের প্রধান কাজ হয়ে থাকে; তবে বর্ষার গানে কেন আমি বর্ষার বেগে ছুটবো না? কেন আমি ধীরে ধীরে বইবো উতল হাওয়ার মত??
এসময়, একটি কথা বারবার মনে পড়ছে, রবীন্দ্রনাথের আমলে রাগ সঙ্গীতের দাপটে অন্যান্য সঙ্গীত চুপছে গিয়েছিল। তখন গান হত কম, রাগরাগিণী নিয়ে টানাটানি হত বেশি। ওস্তাদের ম্যাজিক দেখবার ভয়ে স্বয়ং শরচন্দ্র পর্যন্ত বলেছিলো, “তোমার ওস্তাদ থামবে তো?” (ঠিক কাকে বলেছিল, তা এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি না)
আর, এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ / রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে গায়কীর যে আন্দোলন অন্যান্য সঙ্গীত-প্রেমীদের, তাও নিশ্চয়ই অপ্রাসঙ্গিক নয়
বেশ বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ / তাঁর সঙ্গীতকে আমরা ঠিক কোন কাঠামোতে  ফেলে তাতে সামাজিক পরিবর্তনের সিল মেরে দিচ্ছি , তা মোটেও clear নয় আমার কাছে। তা কি আদৌ কাঠামোতে ফেলবার যোগ্য ??
 অধিকাংশ এদেশীয় শিল্পীরা যেভাবে তাঁর গান পরিবেশন করছেন, না সেখানে আছে আনন্দ, না আছে শক্তি
গায়কের চিত্ত হতে গানের আনন্দই বিচিত্র তানের মধ্যে প্রসারিত হইতেছে। যেখানে সেই আনন্দ দুর্বল, শক্তিও সেখানে ক্ষীণ

এখন আসি শুদ্ধ ভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবার পক্ষের কথায়অধিকাংশরাই বলেন একটা কথা যে , অন্য ভাবে গাইতে গাইতে তাঁর গানের মূল সুরে পরিবর্তন চলে আসতে পারে, যার ফলাফল খারাপ
এটি ছাড়া আর কোন যুক্তি খাটে না। এই মুহুর্তে হয়তো একমাত্র তিনিই বলতে পারতেন কি সঠিক। তবুও তাঁকে পড়বার পরে আমার মনে হয়েছে যে, হয়তো আজকের যুগের গায়িকা জয়তী চক্রবর্তীর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালে (যিনি ভাবকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে গান করেন, স্বরলিপির সাথে আমি তাঁর বেশ কিছু জায়গায় যোগ কমই দেখেছি) কিংবা সুমন চট্টোপাধ্যায়ের 'ভালোবেসে সখী' গানটি শোনালে হয়তো রবীন্দ্রনাথ তাঁদের তাই গ্রহণ করতেন; যদিও মূল সুরে অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি আছে
ভাবকে প্রাধান্য দিয়ে গান করলে, কেবল সেই সঙ্গীতেই বাজে ঝংকার; বস্তু-বিচারের বাঁধন - চিন্তার বাঁধন সঙ্গীত কে বাঁধতে পারে না। কথাটি রবীন্দ্রনাথের। আর, স্বরবিতান বস্তু-বিচারের বাঁধন ছাড়া আর কি হতে পারে ???
তাই, এই স্বরবিতান নিয়ে এত টানাটানি করবার তো কোনই প্রয়োজন বোধ করছিনা
আমি বারবার বলছি, শিল্পের মূল হচ্ছেঅনুভুতি”, কাঠামো ঠিক থাক আর নাই থাক। সঠিক অনুভুতি প্রকাশ পেলে আর তেমন কোন ক্ষতি নেই
গানের রূপ ভাব যদি দুই প্রকাশমান হয় তবে তা বিশুদ্ধ ভাবে গাওয়া হল কি না তা খুব একটা আবশ্যিক নয়
তাই আজ প্রয়োজন সর্বত্র তাঁর গান গাওয়া-শুধু হারমোনিয়াম আর তবলা দিয়ে নয়, হাতের কাছে পাওয়া সব Instrument দিয়ে
এখন প্রশ্ন, তাহলে কি ব্যান্ড আকারে বা Western Music এর আদলে রবীন্দ্রসঙ্গীত Present করতে বলছি বা রূপ দিতে বলছি ? ? ?
একদমই না, কারণ, আমাদের সংস্কৃতি আর পশ্চিমা সংস্কৃতির মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছেভাববাদকে ঘিরে। মূল দ্বন্দ্বের বিষয় এটি হতে পারে
আমি বলছি না যে Western Instrument Add করা যাবে না, কিন্তু সুচারু রূপেই কেবল তা গ্রহন/ব্যবহার করতে হবে
গানের ভাবখানি যেন ব্যান্ডের উন্মাদ শব্দে অথবা রাগরাগিণীর রোষানলে পড়ে মৃত্যুবরণ না করে, এই কথাটি শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত- নয়, আমাদের সকল সঙ্গীতের জন্যে উপযুক্ত
মোদ্দা কথা, ঠিক Fusion বা নিরীক্ষা ধর্মী না, কিন্তু নতুনত্তের সাথে

সে আমলে রবীন্দ্রনাথ প্রচণ্ড দাপটে থাকা রাগসঙ্গীত নিয়ে লিখেছিলেন, “ যে রাগরাগিণীর হস্তে ভাবটিকে সমর্পন করিয়া দেওয়া হয়েছিলো, সে রাগরাগিণী বিশ্বাস-ঘাতকতা পূর্বক ভাবটিকে হত্যা করিয়া স্বয়ং সিংহাসন দখল করিয়াছে। আজ গান শুনিলেই সকলে দেখিতে চায় জয়জয়ন্তি,বেহাগ। আরে, মহাশয়, আমরা এমন কি ঋণে বদ্ধ জয়জয়ন্তির কাছে যে তাহার নিকট অন্ধ দাসত্ববৃত্তি করিতে হইবে? যদি মধ্যমের জায়গায় পঞ্চম দিলে ভালো শোনায়, তাহাতে বর্ননীয় ভাবের সহায়তা হয় তবে আমি তাই বহাল রাখিব তাতে জয়জয়ন্তি রাগ মরুক আর বাঁচুক। আমি জয়জয়ন্তির কাছে এমন কী ঘুষ খাইয়াছি যে এমন প্রাণপণ করিব? ”
এখন কিছু word change করে দেখি, যেমনরাগরাগিণীর জায়গায় স্বরবিতান”, “সকলের দেখবার তালিকায় মুলসুর(স্বরবিতানুসারে)” বাকী গুলি প্রায় ঠিক আছে। দেখুন তো কি হয়?
হয়তো বিস্ময় ভরে তাকাতেও পারেন, হ্যাঁ তো, কোন Contradiction তো দেখছি না
সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে বলবেন, না না, তা ঠিক না
কারন?
কারন, তিনি রবীন্দ্রনাথ !!!???
ভুল আমাদেরই যে আমরা তাঁকে সেই পূজার জায়গাটি তে বসিয়েছি, যদিও তিনি আর যাই থাকুক দেবতা ছিলেন না
পূজার ঘরে তো সকলে যাবার অধিকার রাখে না বা অনেকে সেচ্ছায় যান না। আর, তখনই শুরু হয় অন্ধ ধার্মিকের শাস্ত্রকথা আর মুক্তির আকাশ হয় রুদ্ধ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ