....

লিংকনের কেরিক্যাচার : ডিসেম্বর ২০২০ | মাহফুজুর রহমান লিংকন


দিললিপি

কবি সবুজ, কবি সাম্য’র মা এবং আমার মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, ভালো খবর।
কয়েক মাস থেকে বাম হাতের তীব্র যন্ত্রণায় ভুগছি, খারাপ খবর! ডাক্তার দেখাবো এমন পরিস্থিতে নাই। অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড সমস্যায় আছি কয়েক মাস যাবত! এই সব নানাবিধ সমস্যা যে শুধু কয়েক মাস থেকে তা নয়, বরং এ সব আমার নিত্যকার সঙ্গী! একজন কবির জন্য এ নোতুন কিছু নয়, তবে দোষের কথা এই যে— কবি যদি তাঁর এই দারিদ্রতা কাটাতে গিয়ে, বিলাসবহুল জীবনের খোঁজে চলমান সময়ের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দেন! বলছি না, কবি সারা জীবন দারিদ্রতার মধ্যেই থেকে যাক, কিংবা মেনে নিতে শিখুক। একটু খোলাসা করেই বলি—

কবি অভাবের তাড়নায় একজন বন্ধুর কাছে ঋণ নিতেই পারে। আবার সে ঋণ পরিশোধে বিলম্ব হতেই পারে, আমি এতে বিস্মিত হই না! কিংবা কবি ঋণ নিয়ে ভুলে গেছেন, আবারো তাঁর কাছে ঋণ চেয়ে বসলেন, এতেও আমি বিস্মিত হই না! শিল্পের ধ্যানমগ্ন ঋষি ক্ষুধার জ্বালায় কিংবা সংসারের নিত্য নৈমিত্তিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে কার কাছে কি নিলো আর কবে নিলো সেটা মনে না রেখে যদি ভুলে যান তাতে কিছু আসে যায় না৷ কিন্তু যখন শুনি, কবি শিল্পের মুক্তি দেবার কথা বলে অর্থনৈতিকভাবে সবল হবার চেষ্টা করছেন— আমি ব্যথিত হই! একজন কবি, তাঁর চেয়ে বয়সে তরুণ/প্রবীণ/অজ্ঞ আর এক কবির কাছে চাকুরী দেবার কথা বলে/নানান মিথ্যে বাহানায় অর্থনৈতিকভাবে সবল হবার চেষ্টা করছেন— এ কথা শুনে আমি কষ্ট পাই! নষ্ট হ’য়ে যাওয়া সমাজে আলোকবর্তিকা কবিকে নষ্ট ভাবতে আমার বুকের ব্যথা চিনচিন করে আবার ওঠে...

কবির চারিত্রিক গঠনের বিবৃতি দেবার তুই কে রে?
—এমন কথা যদি আপনার মনে আসে, তাইলে ক্ষমা করবেন! আমি অই কাজ করতে লিখতে বসি নাই। শুধু বলতে চেয়েছি, সমাজ আপনাকে পথ প্রদর্শক ভাবে, আপনার চলন-বলন তেমনই হওয়া দরকার যেমনটা আপনাকে যুতসই লাগে। বাকিটা আপনার মর্জি আর ইতিহাস তো রইলোই...


কিছু সংবাদ দুঃসংবাদ বটে

কিছুক্ষন আগে জানতে পারলাম বন্ধুজন মাসুদ মারা গিয়েছে...
এই সব সংবাদে মন এতো খারাপ হয়... নিজেকে অনেক তুচ্ছ মনে হয়! 
মাসুদুর রহমান মাসুদ

কেমন আছি? এই প্রশ্নের উত্তরে মাঝে-মাঝেই আমি বলি— বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড় ম্যাজিক! ভালো আসলে আমরা কেউ নেই৷ ভালো আছি, এমন ভান করি মাত্র!
তখন কুড়িগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমীর রমরমা অবস্থা৷ সেসময় মাসুদের সাথে আমার পরিচয়। শিল্পকলা চত্বরে  মাঝে মাঝেই মুক্তা ভাই, আলমগীর এবং মাসুদের সাথে আড্ডা হতো। রাজনীতি-শিল্পনীতি-সাহিত্যনীতি-ধর্ম-দর্শন সবকিছু নিয়ে চলতো আলোচনা… পরবর্তীতে কয়েক বছর পর কুড়িগ্রামে আবার যখন যাই , তখন মাসুদ কুড়িগ্রাম ২নং ওয়ার্ডের কমিশনার এবং প্যালেন মেয়র … আমার দেখা বুর্জোয়া রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত কোন ব্যক্তির মধ্যে মাসুদের মতো শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি এত যত্নশীল ব্যাক্তি আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলাদেশের চলমান নষ্ট সময়ে সাধারণত কমিশনার/মেম্বার, মেয়র/চেয়ারম্যান তারাই যারা এই নষ্ট সময়ের স্রোতে ভেসে ভেসে মজা লুটছে। জনগণের মাঝে সবচেয়ে খারাপ ইমেজের মানুষগুলোই এখন জনপ্রতিনিধি কিন্তু বন্ধু মাসুদ কেমন করে যেন মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে জানান দিত- “আছিতো!”
আমার জানা মতে কুড়িগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মিরা  সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞে মাসুদের কাছে গিয়ে ফেরত এসেছে, এমন সংখ্যা খুব কম! 
“ভালো থাকিস ওপারে”- এমন কথা আমি বলি না! বরং বলি- “হৃদয়ে থাকিস বন্ধু, যত্নেই রাখিব তোকে!”
ফের যদি দেখি নষ্ট- ভ্রষ্ট মানুষগুলোর মাঝে দাঁড়িয়ে কেউ বলে “আছিরে...” তবে বেঁচে উঠব...


ভাড়া বাসায় চাঁদ বিলাস 

ঢাকায় যে দীর্ঘ সময় ধরে ভাড়া বাসায় আমি আছি, এই সময়ে একদিন শুধু চাঁদ দেখতে ছাদে উঠেছিলাম! সেদিন কেন যেন মনে হচ্ছিলো চাঁদটা আমারে ব্যঙ্গ করে বলছে, “ভাড়াটিয়ার আবার চাঁদ দেখার সখ হইছে! আমারে দেখার ভাড়া দিবি?” খুব লাজুক হেসে বলেছিলাম, আর আসব না!
আজ মনে হয় কথা রাখতে পারব না, ঘুম না এলে আমার কষ্ট বেড়ে যায়। ছাদে গিয়েই দেখি, চাঁদ বাবাজি আমার কথা মনে রেখেছে কিনা! ছাদে উঠে চাঁদের দিকে না তাকিয়ে শুরু হলো কবিতা পাঠ...


জিজি

জিজি তোমার দেখা পাইনা অনেকদিন
কেমন আছো তুমি?
মনে পড়ে কি আমার কথা? বরানগর?
দুহাত নেড়ে কথা বলছ, এই ছবিটা
দেখতে পাই শুধু।
আছো কেমন? ভালবাসছো কোন ছেলেকে?
তোমার কথা চৈত্রমাস দুহাত দিয়ে
ধরে রেখেছে---
এদিকে আমি রদ্দি এক ভাষায় খুব
গাল খেয়েছি
সমালোচক নিয়েছে এহাত---
ঘুমের বড়ি খাই না আর, এ বছরটা
কাফে-র থেকে কাফেতে শুধু ঘুরে মরেছি...
তোমাকে চাই প্রবলভাবে তোমাকে চাই জিজি।

ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতা পড়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেল চরিদিকে। ভাবছিলাম, কবি জীবনের কথা! কোথাও স্বস্তি নেই এই জীবনের! এমন অকপটে শুধু কবিই সত্যিটাকে আওড়াতে পারে…আহা! এই জীবনে কবিতা যাপন করা ছাড়া আমার আর কিবা করার ছিলো? চারিদিকের অন্ধকারাচ্ছন্ন এই সমাজে কবি যখন একা, তখন শৈশব-কৈশোরের ছবির মানুষগুলোই বেঁচে উঠার প্রতিমা হয়ে ওঠে কবির কাছে। আরাধনা চলে কবিতায় নিরন্তর...! ঘুমহীন রাত্রির উৎসব সাজাতে, একটা শব্দের খোঁজে এক জীবন শেষ করে দেন কবি! তবুও আলো ছড়িয়ে যান, ভালোবাসা বিলিয়ে যান। শব্দের সাথে খেলতে গিয়ে কবি যখন নিজের ভিতরের চোখ দিয়ে দ্যাখেন, গোটা চৈত্রমাস প্রতিমার কথাগুলো ধরে রেখেছে নিবির আলিঙ্গনে, অতি বুদ্ধিজীবী নির্বোধ লোকে তারে বলে- স্বপ্ন! এখানেই কবি হয়ে উঠেন কল্পনাবাজ! অথচ, কবি নিজে সেই  চৈত্রের নিবির আলিঙ্গন দেখেই বুনেছেন তাঁর মায়াজাল! এই দ্যাখা আর অতি বুদ্ধিজীবী নির্বোধের দ্যাখায় যে তারতম্য সেখানেই আমি বলি- কবির কোন কল্পনা শক্তি নেই! কারণ- আপনি বনলতা কে খুঁজে-খুঁজে হয়ে উঠেছেন গবেষক/বুদ্ধিজীবি আরো কত কি, আর কবি হৃদপিণ্ডের দরজা খুলে দিয়ে “বনলতা” কে দেখেই তাঁকে দিয়েছেন অমরত্ব! 

আজ চাঁদ লজ্জা পাচ্ছে ...তাকিয়ে দেখি, বালিকা বধুর মতন লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। বললাম- লজ্জা পেয়ো না, এই শহরে আমি শুধু ঘরভাড়া নিয়ে থাকি, তাতে কি? গোটা বিশ্ব আমার!
আজ বড় অহংকারী মনে হচ্ছে নিজেকে! চাঁদ এবার মুখতুলে লাজুক হাসিতে বলে- 
“হুম! কবি সারা জাহানের! আসুন, আপনাকে জ্যোৎস্না জড়িয়ে ভালোবাসা জানাই...”


এই সময়ের গল্প 

বর্জন নাকি আলিঙ্গন? গোটা জাতি কাঁপছে... একজন আর জনকে প্রশ্ন করছে, জানতে চাচ্ছে, ফিসফাস চলছেই— আপনি কি চান? ফেসবুকের প্রোফাইল পিক “...লাভ চ্যালেঞ্জ” দেন না কেন? আরো কত্ত কি... দুইচারজন বন্ধু-বান্ধব আমার কাছেও জানতে চায়, কি বলা যায় বলেনতো কবি? কি স্ট্যাটাস দিব?

যারা জানতে চেয়েছিলেন কি করবেন? তাঁদের জন্য গোপাল ভাঁড়ের একটা গল্প বলছি— 

রাজা  কৃষ্ণচন্দ্র বউয়ের যন্ত্রণায় মহা বিরক্ত। এ থেকে পরিত্রানের উপায় না পেয়ে মন্ত্রীকে বললেন সমস্যার কথা আর চাইলেন সমাধানের উপায়। মন্ত্রী বরাবরের মতোই ভাবতে লাগলেন- ব্যাটা গোপালকেও ফাঁসাতে হবে, রাজাকেও বাঁচাতে হবে। অনেক ভেবে, মন্ত্রী বললেন- উপায় একটা আছে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র  উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন- বলো, বলো মন্ত্রী কি উপায়? মন্ত্রী মুচকি হেসে বললেন- রাজ্যে একটা মেলার ব্যবস্থা করুন...!  “এতে কি হবে?”- ভর্ৎসনা করে রাজা আবারো জিজ্ঞাসা করলেন। 
এবার মন্ত্রী বিনয়ের সুরে বললেন- আজ্ঞে জাহাপানা, পুরোটাই শুনুন। রাজ্যে ঘোষণা দিন মেলা শুরু হবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সাথে এও ঘোষণা করে দিন মেয়েরা এই মেলায় যেতে পারবে না। এতে রানীমা আর মেলায় যেতে পারবেনা আপনি মহা সুখে মেলায় আনন্দ করতে পারবেন, আবার রানীমার যন্ত্রণায় হাত থেকে রেহাইও পাবেন।
- আর যদি রানী যাবার বায়না ধরে?
মন্ত্রী এই কথার অপেক্ষায় ছিলেন, গোপাল কে বিপদে ফেলার মোক্ষম সুযোগ এটাই, দেরি না করে তৎক্ষণাৎ বললেন - গোপাল আছে কি করতে জাহাপানা? অই সামাল দেবে রানীমাকে...

প্রস্তাব রাজার পছন্দ হয়ে গেল। গোপাল কে ডাকা হলো। বিস্তারিত বলা হলো তাকে। সাথে এও জানানো হলো,
“যদি কোন ভাবে কোন মেয়ে মেলায় প্রবেশ করে তাহলে, গোপালের মাথা কাঁটা যাবে”। 
রাজ আজ্ঞা যথাযথ, মেনে নিয়ে রাজ্যে ঘোষণা হলো। মেলা চলতে লাগলো রীতি নীতি মেনে... রাজা মশাই মহা আনন্দে মেলায় যান, সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি সেখানেই থাকেন... আনন্দ! মহানন্দ! 
কয়েক দিন যেতেই, রানীর চোখে বিষয়টা ধরা পরলো... আমি এই রাজ্যের রানী! রাজা আনন্দ করবে আর আমি করব না! কি এমন আছে সেখানে যে রাজার চোখে-মুখে এতো আনন্দের ছড়াছড়ি। যেতেই হবে, দেখতে হবে এর বিস্তারিত সমাচার... যেমনি ভাবা, তেমনি কাজ! রাজামশাই ঘরে ফিরতেই রানী বায়না ধরে বললেন, আগামী কাল আমিও যাব তোমার সাথে মেলা দেখতে...
রাজা শুধু হেসে বললেন- আচ্ছা তা যেও। কিন্তু আমার একটা অন্য কাজ আছে, আমার সাথে তোমাকে নিতে পারব না। আমি বরং গোপাল কে বলে দেই, ওই তোমাকে নিয়ে যাবে। আমি কাজ সেরে মেলাতে তোমার সাথে মিলিত হব।
গোপাল ভাঁড়কে ডাকা হলো রাজ দরবারে, স্বয়ং রাজা মশাই বললেন, গোপাল উপায় খুঁজে বের কর। মনে আছে তো কোন মেয়ে যদি মেলায় প্রবেশ করে তোমার মাথা কাঁটা যাবে। 
 আজ্ঞে! মনে আছে মহারাজ! 
তাহলে, তুমি যাও। উপায় খুঁজে বের করো নতুবা রানীকে নিয়ে সকালে মেলায় যাবার জন্য প্রস্তুত হও সাথে তোমার মাথা সেনাপতির তরবারির নিচে দেবার আয়োজনও করো... 
গোপাল ভাঁড় মহা চিন্তায় পরে গেল! চিন্তার শেষ নাই, রাজার হুকুম বলে কথা! আবার রানীর ইচ্ছাও ফেলা যায় না! 

খাবারের সময় গড়িয়ে যায়। স্বামী এখনো খেতে আসলো না দেখে, গোপাল গিন্নী তাকে খুঁজতে লাগলেন। খুঁজে-খুঁজে দেখা গেল, গোপাল ভাঁড় পুকুর পারে বসে চাঁদ দেখছেন আর কি যেন ভাবছেন। খাবারের কথা বলার সাথেই গোপাল মহা বিরক্ত হয়ে বললেন,
যাওতো গিন্নী, এখন ঝামেলা করিও না।
গোপাল গিন্নী অনেক অনুনয়ের সুরে স্বামীর চিন্তার কারণ জানতে চাইলেন। চিন্তাগ্রস্ত গোপাল হঠাৎ কেঁদে ফেলে, গিন্নীকে সব খুলে বললেন। সব শুনে গোপাল গিন্নী বললেন, বুদ্ধি কি তোমার শুধু একার আছে? তুমি খাও, খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো, বাকিটা আমি দেখছি...
শত আশ্বাসের মাঝেও গোপাল স্থির হতে পারলেন না। তবে, গিন্নীর কথায় তিনি খেতে চললেন। খেয়ে শুয়েও পরলেন এবং ঘুমিয়ে গেলেন...
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গোপাল ভাঁড় দেখতে পেলেন, ঘরের সামনে অনেক জাতের কাঁটা একসাথে করে বেঁধে রাখা হয়েছে। তিনি হতভম্ব হয়ে গেলেন, চিৎকার করে গিন্নীকে ডেকে জানতে চাইলেন কে করেছে এই কাজ। 
গোপাল গিন্নী তাকে শান্ত থাকতে বলে, খুলে বললেন সমস্ত কিছু। জানালেন, সারা রাত সে ময়নার কাঁটা, গোলাপের কাঁটা, বাবলার কাঁটা, বড়ইয়ের কাঁটা সংগ্রহ করেছেন। আর গোপালকে কি করতে হবে তাও তিনি তাকে বুঝিয়ে দিলেন। সব শুনে গোপাল মহা খুশি। কোমরে দড়ি বেঁধে কাঁটার স্তুপের দড়ির সাথে একত্রে করে, কোমরের পিছনে কাঁটার  স্তুপ টেনে নিয়ে চললেন রাজবাড়ির দিকে...
রানী অপেক্ষায় ছিলেন, গোপাল কে দূর থেকে দেখে তিনি ছুঁটে আসলেন।
গোপাল, তুমি এভাবে আমাকে নিতে এসেছো কেন?
গোপাল খুব বিনয়ের স্বরে বললো, 
আজ্ঞে, রানী মা আপনাকে একথা বলা যাবে না। আমি সে কথা আপনার সামনে বলতে পারব না। 
কেন, বলা যাবেনা গোপাল। তুমি এক্ষুণি বলো...
আজ্ঞে রানীমা। আপনি যদি কথা দেন, আমার কথা শুনে আপনি আমাকে কতল করার হুকুম দেবেন না, তাহলে আমি বলতে পারি।
তুমি নিঃসংকোচে বলো গোপাল। তোমার কিছু হবে না... 
তখন গোপাল ভাঁড় মাথা নিচু করে বললেন-
“রানী মা, মেলায় ধরধর- মারমার কার পাছা যে কে মারে তার কোন ঠিক নাই। আমার পাছা যেন কেউ মারতে না পারে সে জন্যই আমি আমার পিছনে কাঁটার স্তুপ নিয়ে মেলায় যাই”। 
রানী প্রচণ্ড লজ্জা পেলেন, সাথে ভয়ও। কিন্তু মুখে কিছু না বলে ভিতরে চলে গেলেন আর দাসীকে দিয়ে গোপালকে জানানো হলো- রানীমা মেলাতে যাবেন না! 
রাতে যখন রাজা ফিরলেন, রানী বারবার শুধু রাজার পিছন দিকে চেয়ে দেখতে লাগলেন। আর মনে মনে ভাবতে লাগলেন
“ আহারে! রাজার “পাছা” বলে কথা, বেচারা কতই না ব্যাথা পেয়েছে, তবুও হাসছে। ছি! কি লজ্জা! কি লজ্জা!” 

সারা পৃথিবী জুড়েই ধরধর-মারমার চলছে। কার পাছা যে কে মারছে আসলেই তার ঠিক নেই। এখন আপনার/আমার ইচ্ছা, আপনি/আমি চাইলে রানীর ভুমিকা নিয়ে পাছা মারা যাবার ভয়ে ঘরে ঢুকে যেতে পারি। মন মহাশয়, চাইলে গোপাল ভাঁড় হয়ে নিজ পাছা সামাল দেবার জন্য বাবুমশাই সেজে পিছনে হাত রেখে চলতে পারি। অথবা রাজার ভূমিকাও আমরা নিতে পারি, সেটা কেমন? সে কথা আপনি ভেবে নিজ দায়িত্বে জেনে নিন... ভাবুন, ভাবুন…


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ