....

শুরু অথবা শেষের উপাখ্যান

ছবি: আন্তজাল থেকে গৃহিত
রুদ্র মোস্তফা

সেদিন কত তারিখ ছিল সৌমিকের মনে নেই । আজ কত তারিখ তাও সে জানে না । কম্পিউটারের মনিটরের কোণায় অবশ্য দিন তারিখের ফিরিস্তি ভাসছে । কিন্তু সৌমিক তা বিশ্বাস করতে পরছে না । মনে হচ্ছে তার জীবনে পরিচিত একটি  বিষয়ই বার বার রূপ বদল করে ঘুরে ফিরে আসছে । সে কোন শতকের ? তা সে মনে করতে পারছে না । ইখতিয়ার উদ্দীন বখতিয়ার খিলজী যে তারিখে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি পুড়িয়েছিল সে তারিখটা , বাবরি মসজিদ যে তারিখে ভেঙে ফেলা হয়েছিল কিংবা যে তারিখে পাকিস্তানীরা এদেশের অসংখ্য মা বোনের সম্ভ্রমহানী করেছিল সবগুলো তারিখকেই সৌমিকের কাছে একই মনে হচ্ছে । তার কাছে মনে হচ্ছে প্রতিটি ঘটনার সাক্ষী সে ।ঐযে সবাই যে তারিখটা মনে করতে পারে ঐযে যেদিন হিন্দু মুসলমানের সাথে বড় ধরণের দাঙ্গা হয়েছিল সেই তারিখটা আর কক্সবাজারের রামুর তারিখটাকেও একই মনে হচ্ছে তার কাছে ।  ইরানের ভাষা যেদিন বর্বর আরবরা দখল করেছিল সেদিনও কি সৌমিক পাশে ছিল না ? ফেরদৌসীকে কে বলেছিল আরব ভাষায় নয় লেখ নিজের ভাষায় । তোমার নিজের ভাষা উদ্ধারের সময় এসেছে । প্রায় দু'শ বছর আরবরা ইরানের ভাষা গলাচেপে ধরেছিল । শ্বাসরোদ্ধ সে ভাষার পুনরুদ্ধারে কি সৌমিকের ভূমিকা নেই ? আর বাংলা ভাষার গলা যেদিন পাকিস্তানীরা চেপে ধরেছিল সেদিন ও কি  সে ভূমিকা রাখে নি ? সেদিনের তারিখ আর আজকের তারিখে কি কোন তফাৎ আছে ?

দিন তারিখ মনে নেই । হবে কোন একদিন, একজনের সাথে সৌমিকের বন্ধুত্ব হয়েছিল । বন্ধুত্বের শুরুটা লেখা লেখির মাধ্যমে। গোহার গাত্রে সে প্রথম লিখেছিল অসাম্প্রদায়িকতা বিষক কিছু কথা । কথাগুলো খুব জনপ্রিয় হয়েছিল । অথবা জনপ্রিয় নয় শুধূ তার বন্ধুরই ভাল লেগেছিল। শিকার করতে এসে কিংবা কোন সম্পর্কের সূত্র ধরে সে লেখাগুলো পড়েছিল । ব্যাস । ভালো লেগেছিল তার লেখাগুলো । সে সৌমিককের লেখার প্রশংসা করতে শুরু করল। কি যেন  সে লিখেছিল ? ' একটা সূর্য । তা থেকে ঠিকরে পড়ছে আলো । আলোর নিচে একদল মানুষ । তারা হাতে কাটা পাথরের মূর্তিকে পূজা করছে । পূজারীদের চোখ বাঁধা বনজ বাকলে । পাশেই  পড়ে আছে মুণ্ডুহীন মানুষের দেহ ।' গোত্রে গোত্রে ছবিটি নিয়ে ব্যাপক সাড়া পড়ে গিয়েছিল ।

তখনই ছেলেটির সাথে বন্ধুত্ব ।হ্যাঁ মনে পড়েছে । তার নাম ছিল সাকাত । সে ছিল অন্য গোত্রের  । গোহার গায়ে হায়রোগ্লিফিক্স লিপিতে তার লেখাগুলো দেখে সে তার প্রেমে পড়ে যায় । প্রেম ? হ্যাঁ প্রেমই তো ! বন্ধুত্ব কি প্রেম নয় ? উঁচু পাহারের গা ঘেঁষে যে ঝর্ণা বয়ে চলতো সেখানে তারা বসতো । এই বর্বর জীবন  থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় তা নিয়ে তারা ভাবতো । সাকাত মাঝে মাঝেই অন্যমনস্ক হয়ে যেত । একদিন সে বলল, আমাদের গোত্রে তোমার লেখা নিয়ে বেশ আলোচনা হয় । তুমি  দেবতার অসাড়তা নিয়ে যে চিত্র আঁকো তাতে তারা খুব রুষ্ট । কিন্তু খুব কাছ থেকে তোমার চিত্রকর্ম আমি দেখেছি । যে জীবন আমি খুঁজে বেরাচ্ছি সে জীবনেরই বস্তুকথা তোমার ঐসব লেখায় । চিত্রকর্মে । আমাদের এই বর্বর জীবন থেকে পরিত্রাণের জন্য তোমার এই লেখাগুলো যে কত জরুরী তা বলে বোঝাতে পারব না । বলতে দ্বিধা নেই সৌমিক ,আমি তোমাকে হত্যা করতে এসেছিলাম। আমি একজন ঘাতক । আমাকে ওভাবেই তৈরি করা হয়েছে । কিন্তু তোমার কাছে এসে যে জীবনের সন্ধান আমি পেলাম হাজার মৃত্যুতেও সে জীবনের স্বাদ ফুরুবে না । কি বলছ তুমি ?

তারপর সে চলেগিয়েছিল উঁচু নিচু পাহাড়ের খাঁচ কেটে কেটে । খবর পেয়েছিল সৌমিক ,তাকে নাকি তীর বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছিল। দেবতা আর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সে নাকি প্রতিবাদ করেছিল । কী ভয়ংকর কথা !

তারপর ...তারপর...হ্যাঁ , তারপর অনেকদিন কেটে যায় ...অনেক...অনেক দিন ।

সৌমিক আবার লিখতে শুরু করেছিল । সম্ভবতো বখতিয়ার খিলজী তখন বঙ্গ বিজয় করেছে । চারপাশে তখন বিজয়ের উল্লাস । আর সাধারণ মানুষের চোখে তখন কয়লা পোড়া কান্নার শব্দ ।

সৌমিকের হাত দু'টি কেটে ফেলার জন্য তখন এক যুবককে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল । যুবক এলো । যুবককে দেখে সৌমিক চমকে উঠল । একি সাকাত ! সাকাতও চমকে উঠলো । তুমি ? পরস্পপর কুশলাদি বিনিময় হল । সৌমিক জানতে চাইল এতদিন কোথায় ছিলে ? সে জবাব দিল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি যে দেশলাইয়ের কাঠি দিয়ে পুড়ানো হয়েছে সেই দেশলাইয়ের কাঠির কারখানায় কাজ করতাম । আবার তোমাকে হত্যা করতে এলাম । কিন্তু তুমি তো আমার বন্ধু, তোমাকে কি করে হত্যা করি ?এমন কিছু শুনাও বন্ধু যার জন্য মৃত্যুকে আবারও সহজ করে মেনে নিতে পারি । সৌমিক তাকে তার সদ্য লেখার কিছুটা অংশ শুনিয়েছিল : 'সবচেয়ে বড় কথা সাম্প্রদায়িকদের কখনো একক রাজনৈতিক দল থাকে না । স্বার্থের প্রয়োজনে তারা সুবিধাবাদী যে কোন দলেই ঢুকে পড়তে পারে । তবে সম্প্রদায়গত দিক দিয়ে তারাঐক্যবদ্ধ । গোড়ামীতে তারা বংশপরম্পরায় পারস্পরিক বন্ধু'  -

সৌমিকের কথা শুনে সাকাত তখন বলেছিল, সব কিছুই হচ্ছে ক্ষমতার জন্য । তবু চলছে সবকিছু ধর্মের নামে । তুমি কিছুকাল নিজেকে আড়াল করে রাখো ।

হয়তো তখন সৌমিক নিজেকে আড়াল করে লেখেছিল । তা না হলে বাংলা সাহিত্যে দেড়শত বছরের একটা অন্ধকার যুগ কি করে এল । না কি কর্তব্যের অমোঘটানে সাকাত তার হাত দু'টিই কেটে নিয়েছিল যে হাত আবার নতুন করে গজিয়েছে ?

হবে হয়তো । তা না হলে অসাম্প্রদায়িকতার এই হাত দুটি ধরেই তো সে সাকাতকে নিয়ে নতুন পথ তৈরি করতে পারতো । তা কি সে পেরছে? বাবরি মসজিদ যারা ভেঙেছিল তাদের দলে কি সাকাতও ছিল না ?

স্পষ্ট মনে পড়ছে সৌমিক তখন পত্রিকাতে লিখেছিল,

'বাজারে এখন আর আলতা পাওয়া যায় না । এক সময় রক্তের বিকল্প হিসেবে বাজারে আসে আলতা । এখন আলতার জায়গা দখল করেছে রক্ত । প্রতিটি সাম্প্রদায়িক মানুষ খুব আয়োজন করে মানবতার স্লোগান দিচ্ছে । প্রত্যেকের মহামানবগণ তাদের জন্য এনেছেন শ্রেষ্ঠ মানবতা । তারা শুধু মানবতা ফেরি করছে । সাদা -কালো মানবতাকে বাজার উপযোগী করতে মাঝে মাঝেই রঙের প্রয়োজন হয় ।মরা মানুষের হাড়-কঙ্কাল রঙিন করার জন্যেও।

তো ভাবনা কী ! রঙের চেয়ে খাঁটি বস্তু তো আছেই । এত নির্ভেজাল রং দিয়ে যদি 'অর্ধ সত্যে কামাচ্ছন্ন ইতিহাস'কে পূর্ণ সত্যে আচ্ছন্ন না করা যায় তো কি দিয়ে করা যাবে ? স্বর্গের চৌকাঠ তবে যে ধূসর হয়ে যাবে । মহা মানবরা মহান আর্তি নিয়ে মহা শ্রষ্ঠাকে বলবে, দেখেছেন, গাধাদের কাণ্ড কারখানা ! রং আর আলতাও চেনে না !

মহা মানবদের জীবন মহান করতেই আমাদের মহান সাম্প্রদায়িকেরা বাজার থেকে আলতা সরিয়ে ফেলেছেন ।'

তখন সাকাতের সাথে আবার সৌমিকের দেখা হয়ে গেল । সে তখন বলল, অনেক খুঁজে তোমাকে পেলাম । বাজারে আলতা কিনতে এসেছিলাম । কিন্তু পাচ্ছি না । আলতার বোতল ভর্তি রক্ত । কিছু একটা কর । তুমরা যদি শান্তিপ্রিয়ভাবে আলতার বোতল থেকে রক্ত সরাতে না পারো তাহলে আর কে পারবে বলো ? আমরা সরাতে গেলেই বিপত্তি বাধবে । কিছু একটা করো ।

এরপর ...তারপর...এইতো সেদিন সৌমিক ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল। ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে । সেটা এরকম: 'ছাত্ররাজনীতির জনপ্রিয়তা কখনোই বর্তমানে থাকে না । ভবিষ্যতের বর্তমানে তা অতীতের অনুপ্রেরণা । ছাত্ররা যখন বড় বড় সফলতা অর্জন করে তখন তা তাদের সময়কার ক্ষমতাশীলদের সাথে লড়েই অর্জন করতে হয় । ক্ষমতাশীলদের কাছে কখনোই ছাত্ররাজনীতির বর্তমান দিকটি ভাল লাগার কথা নয় । ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতেই ক্ষমতাশীলরা বারবার নির্মান করেন ছাত্ররাজনীতির নোংরা নকশা । ,৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে প্রগতিশীল ছাত্ররা যেমন ছিল , তেমনি ছিল এন এস এফ এর গুণ্ডাবাহিনী । কারা তৈরি করেছিল ঐ গুণ্ডাবাহিনী ? এখনো বড় বড় অর্জন ছাত্র রাজনীতির সুফলতা থেকেই আসছে । কিন্তু ক্ষমতাশীলরা বা মাথামুটা ব্যক্তিরা তা বোঝতে পারছে না । কারণ তারা কখনোই বোঝার চেষ্টা করে না । ২৭/৪ ধারা, উন্নয়ন ফি কমানোর আন্দোলন, ১/১১এর অবসান ঘটানো, সবই একদিন ইতিহাস হবে । দেখবে তখনো একদল বলবে আগের মতো ছাত্ররাজনীতি নেই । আজ যারা অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে কাল তারা বিস্মৃতির মিছিলে সামিল হবে । যেমন বিস্মৃতির মিছিলে ব্যস্ত এখন এন এস এফ এর গুণ্ডা বাহিনী । আর মিডিয়ার লোকদের উপর এক চেটিয়া দোষ দেয়া মুটেই ঠিক হবে না । তারা যদি ভাল ভূমিকা না রাখতো তবে আমাদের দেশটা সত্যি রসাতলে যেত । তাদেরো সীমাবদ্ধতা আছে । মানতে হবে । দেশের বিরোধীদল নিছক বিরোধীদল । সত্যিকরারের বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করছে কে? অবশ্যই মিডিয়া এবং সাংবাদিকরা । সাগর রুনি কেন হত্যা হলো ? তাদের বিচারই তো ঠিক মতো হচ্ছে না । আইনের শাসন ভয়ানক বাজে অবস্থায় আছে । এই অবস্থায় ছাত্ররাজনীতিই পারে দেশের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে । মিডিয়া এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতা তাতে অনেকাংশে প্রয়োজন । এন এস এফ এর গুণ্ডা বাহিনীদের ছবি কারা পত্রিকায় ছাপছে ? কারা তা প্রচার করছে ? সাংবাদিক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার লোকজনই ।তবে এন এস এফ এর গুণ্ডাবাহিনী স্বাধীন দেশে ক্ষমতাশীলদের বদলবাজীর খপ্পরে পড়ে নাম পাল্টেছে মাত্র । বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা অস্ত্রের মহড়া দেয় তার ক্ষমতাশীলদের ছায়ায় থেকেই দেয় । তাদের একচেটিয়া দোষকীর্তনের মধ্যে ছাত্ররাজনীতি সীমাবদ্ধ নয় । এটা ভুললে চলবে না ।'

লেখাটা পড়ার পর একটি ছেলে স্ট্যাটাসে লাইক দিয়েছিল । মন্তব্য করেছিল । এভাবে তার সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল । ছেলেটা তার নাম বলেছিল ইমন । কিন্তু সৌমিক জানতো সে ইমন নাম বললেও সে আসলে সাকাত । সৌমিক রাতভর লিখে চলতো  প্রায় প্রতিটি বিষয়ে ইমন অথবা সাকাতের আশ্চর্য রকমের আগ্রহ দেখে সৌমিকের লেখার পিপাসা বেড়েই চলেছিল । সময় গড়াতে থাকলো টুকরো আনন্দের ভিতর দিয়ে । অথবা সময় গড়ায় নি । শুধু রূপ বদল করেছে মাত্র । এমনি রূপবদলের মুহূর্তেই ঘটল কক্সবাজারের রামু , উখিয়াতে বোদ্ধদের উপর হামলা ।

বিধ্বস্ত সৌমিক আবার লিখে চলল । চমৎকার , চমৎকার সব লেখা । কিন্তু সে লেখায় ইমন অথবা সাকাতের কোন লাইক সে পেল না । মনে মনে সে ক্লান্ত হযে পড়ল । এসব লিখে কী হয় ? কই মৃত্যুর মিছিল তো থামছে না ।

এরই মাঝে একদিন ফোন এলো ইমন অথবা সাকাতের । সৌমিক আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল । সে বলল, ঢাকা আসছি । কাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা । পরীক্ষা শেষ হবে বিকেলে । সকালে ঢাকা ইউনিভার্সিটির, বিকেলে জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির । পরীক্ষা শেষে আপনার সাথে দেখা করবো । কোথায় থাকবেন আপনি ?

সৌমিক জবাব দিয়েছিল, সরোয়ার্দী উদ্যানে ।

দেখা হয়ে ছিল ইমনের সাথে সৌমিকের । হ্যাঁ সৌমিকের ধারণাই ঠিক সাকাতই রূপ-গন্ধ বদলে ইমন হয়েছে ।

কেমন আছ সাকাত ? ইমন একটুও না চমকিয়ে জবাব দিয়েছিল ভাল আছি । এরপর তারা অনেক কথা বলেছিল । সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে । কিন্তু বৌদ্ধদের প্রসঙ্গ আসতেই ইমন চমকে উঠল । সৌমিক কিছুটা বিস্মিত হলো । কই এর আগে এরকম প্রসঙ্গে সাকাত তো কোন দিনও চমকায় নি ! তবে কি তার কোথাও ভুল হচ্ছে ? সৌমিক ভাল করে ইমনকে দেখল । মাথার চুল ছোট ছোট করে ছাটা । মুখে বিশেষ ভঙ্গিতে রাখা দাড়ি । গায়ের পোষাকও কিছুটা আলখাল্লা ধরণের ।  সৌমিক বিস্মিত না হয়ে পারল না । কই সাকাতের সাথে কতবার তার দেখা হয়েছে । কই এ ধরণের পোষাকতো সে পড়ে নি। তাছাড়া এবার সাকাত সঙ্গে করে লোক নিয়ে এসেছে কেন ? এর আগে যতবার তার সাথে  দেখা হয়েছে সে তো একাই এসেছে । সাথে যে এসেছে তার পোষাকও একই রকম । সৌমিক একটা ঘোরের জগতে চলে গিয়েছিল । ঘোর যখন কাটল তখন সে দেখে পুলিশ ইমনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে । একজন পুলিশ এসে বলল, সৌমিক আপনাকে ধন্যবাদ । মস্তবড় এক অপরাধীকে ধরিয়ে দিয়েছন আপনি। জানেন এ ছেলেটা কে ?

কে ?

জঙ্গিসংগঠনের সক্রিয় সদস্য । বৌদ্ধদের উপর হামলার সাথে এ জড়িত । এসেছে পরীক্ষা দিতে । ব্যাগে নিষিদ্ধ লিফলেট পাওয়া গেছে । ব্যাটা বলে কিনা সে জঙ্গি সংগঠন করে না । তার নাম সাকাত না । সে ইমন । ব্যাটা আমাদের চোখ ফাকি দিবে ! ফাকি প্রায় দিয়েও ফেলেছিল । ঐযে সেদিন ক্যাম্পাসে  বললেন সাকাতের সাথে আপনার ফেসবুকে আলাপ হয় , তা শুনেই আমরা আপনার আইডি চেক করি । কারণ আমাদের কাছে সাকাত সম্পর্কে  বেশ কিছু অভিযোগ জমা ছিল । তাছাড়া আপনি যে ধরণের লেখা লেখেন তাতে আপনার উপর নজর রাখাটাও আমাদের কর্তব্য ।

সৌমিক বলল, সাকাতের কাছে যে নিষিদ্ধ লিফলেট আছে আমি কি তার এক কপি পেতে পারি ।

পুলিশের লোকটি একগাল হেসে বলল, অবশ্যই পেতে পারেন ।

সৌমিক লিফলেটটি হাতে নিয়ে চমকে উঠল। কই এতো লিফলেট নয় ! সাকাতের অব্যক্ত কথার অন্তর্জলি । সৌমিক পড়তে শুরু করল : সৌমিক, ক্ষমা করো । আমাকে যুগে যগে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে সাম্পদায়িকতাকে রক্ষা করার জন্য । আমার মগজ এতবার ধর্ষিত হয়েছে যে সেখানে কোন সৌন্দর্যই আর চমক সৃষ্টি করে না । তুমি সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে লেখো । আমাকে নিয়োগ করা হয়েছিল তোমার সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করে তোমাকে হত্যা করার জন্য । তোমার লেখাগুলো পড়া এবং সেখানে মন্তব্য করা ছিল আমার প্রতিদিনের এসাইনমেন্ট । আমি তা পালন করেছি । তীব্র বিশ্বাস থেকে যে ঘৃণা জন্মে নিজেকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে ফেললেও অস্তিত্বের আনাচে কানাচে সে ঘৃণার ছিঁটেফোটা থেকেই যায় ।' তবে তোমার লেখা আমাকে ভাবিয়েছে । আমি পরাজিত হয়েছি তোমার চৈতন্যের কাছে বারবার । ক্ষমা করো বন্ধু ।
-সাকাত।



[ লেখক পরিচিতি: রুদ্র মোস্তফা জন্মগ্রহন করেন ২৫-০৫-১৯৮৫ খ্রি. তারিখে। বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত আছেন। ]


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ