....

সমালোচনার ঝড় যত থাকবে ধরে নিতে হবে সাহিত্য তত ঋদ্ধতার দিকে যাচ্ছে : কবি আশুতোষ বিশ্বাসের সাক্ষাৎকার

কবি আশুতোষ বিশ্বাস

সা ক্ষা  কা 

দিব্যক
ছোটবেলায় কী হতে চাইতেন? মানে ‘এইম ইন লাইফ’ রচনায় কী লিখেছেন,তা নয়; বরং মনের ভেতরে সুপ্তবাসনা ছিলো কি কোনো কিছু হবার জন্য?

আশুতোষ বিশ্বাস
ছোটবেলায় আমি হতে চাইতাম পাখি। হতে চাইতাম আমার প্রাইমারী স্কুলের যাওয়ার পথের বটগাছ। যে গাছে বহুবিচিত্র প্রজাতির দেশীয় পাখির বাসা ছিল। আর তাদের বাসায় স্থিত ডিম অথবা ছোট্টপাখির শাবক আমাকে যেন চি-চি করে ডাকছে, সেই ডাক আমিই শুনতে পেতাম। ওরা যেন আমাকে বলত— আর ক’টা দিনের অপেক্ষা— আমার ডানায় নরম পালক গজাচ্ছে, আর একটু বড় হলেই আমি আকাশে উড়ান দিতে পারব। উড়ান দিয়ে আসার ফিরতি পথে সেই পাখির শাবক আমাকে জানাবে আজ কোথায় কতদূর সে গিয়েছিল— ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমী, রাজপুত্র, প্রাণ-ভোমরা সবকথাই সে জানাবে। আমি স্কুল ফেরত অবাক বিস্ময়ে বাসাটির দিকে তাকিয়ে থাকতাম পাখি শাবকটির চি-চি স্বরের জন্য। একদিন সত্যিই আর পাখির কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম না। আমি দূরের যেখানে ঝিল আছে সেই ঝিলের দিকে যাব ভাবতাম কিন্তু বাবা মা প্রতিবেশির ভয়ে যাওয়ার সাহস পেতাম না— কি করব রাত্রে ঘুমের গভীরে সেই পাখিদের সঙ্গে খেলতাম, কত কথা হত !
আর সত্যিকার কী হব আমার সেরকম কোনো পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা ছিল না— যেমন হয়েছে যেমন চলেছে তেমনই চলেছি। ক্লাস ফোরের পর ক্লাস ফাইভ হয়, সেটা ফাইভে উত্তীর্ণ হয়ে জেনেছি। আগেভাগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমার কোনদিনই ছিল না। তবে মনের মধ্যে একটা বাসনা মাঝে মাঝেই উঁকি মারত— লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা লেখা, লিখতামও । কিন্তু কেউ জানত না। জানানো বা কেউ জেনে যাবে—এই ভয়টা সব সময় কাজ করত। একান্নবর্তী অতি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে দুপুর আর রাতের খাবারে একটু শাকভাজা আর ধোঁয়া ওঠা ফ্যানাভাতের স্বপ্ন আমার এবং আমাদের সুখস্বপ্নের মধ্যে একটি অন্যতম সেরা স্বপ্ন ছিল। তাই আমার কাছে একটি কবিতা লেখা মানে আমি বিগর্হিত কাজ করে ফেললাম। ‘বর্ণলিপি’ নামের তখনকার কেনা খাতায় স্কুলের কাজ আর পড়ার বইয়ের লেখালেখির জন্যই বরাদ্দ, কাজেই আমি সেই খাতার মধ্যে একটি জলজ্যান্ত পৃষ্ঠায় মনের আজগুবি খেয়ালের কথা লিখে পাতা নষ্ট করব, তারপর খাতা ফুরিয়ে গেলে বাবাকে, মাকে কী বলব, খাতা ফুরিয়ে গেছে !

দিব্যক
একজন  লেখকের  ভেতরের ‘মানুষসত্তা’কে  কীভাবে  ব্যাখ্যা  করেন?

আশুতোষ বিশ্বাস
আমার মতে মানুষ প্রাণী হলেও বিশেষ ধরনের প্রাণী। এই প্রাণী স্বপ্ন দেখে, দেখতে পারে। দেখায়। এই সুন্দর পৃথিবীতে সেই স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষ সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ স্বপ্ন দেখবে এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবে। সামর্থ্য অনুযায়ী সে মানুষ তার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত অন্যের সামনে আনবে। মুখ আর পয়োমুখের পার্থক্য যে আছে তা দেখাবে। সংসার সমরাঙ্গনে একজন সাধারণ মানুষ তথা লেখক-শিল্পী-সৃজনক্ষম প্রতি মুহূর্তেই নিজেকে ভেঙে গুঁড়িয়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখছেন, এই অর্থে তারা প্রত্যেকেই স্রষ্টা। একজন লেখকের ভেতরের মানবিক সত্তা আপামর মানবিক সত্তায় ভোরের প্রশান্তি এনে দেবেন—যাতে রাতের অন্ধকারটুকু কাটানোর সাহসে উড্ডীন থাকতে পারি আমরা।

দিব্যক
জন্ম-মৃত্যুর  মাঝখানের  জীবন  সম্পর্কে  আপনার  অনুভূতি  কী?

আশুতোষ বিশ্বাস
জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানে প্রতিটি মানুষের বহতা জীবন-নদী, জীবনের খরপ্রবাহে দ্রুত বয়ে চলার অঙ্গীকার দিয়ে অথবা অঙ্গীকার নিয়ে এসেছি। এখানে এসে মুর্গ-মসল্লমের আমিষ ঘ্রাণে ধীরে ধীরে খোঁড়া শম্বুকের চলনে অভ্যস্ত হয়ে ‘পেছনে আসছি’ বলার মধ্যে যতটা চালাকি ততটাই আহাম্মকি। মহাশূন্য থেকে ধেয়ে আসা জীবন তার চক্র সম্পন্ন করে অন্যচক্রে ঘুর্ণন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়াই জীবনের উদ্দেশ্য। মিছামিছি পথে দেরি করা ‘রাখালের’ জন্য শাস্তি থাকেই আর ‘সুবোধ’ নির্ভীক সামনে এগিয়ে যায়। জীবন জীবনই— ছোট বড়ো বলে পথের প্লাটফর্মে থমকে দাঁড়ানোর কিছু নেই।

দিব্যক
লেখার ক্ষেত্রে আপনার কোনও প্রেরণার জায়গা আছে কি?

আশুতোষ বিশ্বাস
আছে। দুব্বোঘাস। প্রখর রোদ্রের দাবদাহে সে ভ্যানিস, আবার বর্ষার জল পেয়ে গিজগিজ মাথা তুলে দাঁড়ায়। পথিক খালিপায়ে দুব্বোঘাসের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষণিক আরাম নেয়, মাথার ওপরে চনমনে রোদ— আমার পদতলে দুব্বোঘাস তার সবটা মোলায়েম স্নিগ্ধতা আমাকে দেয় ।

দিব্যক
বর্তমানে  বাংলা  সাহিত্যের  আলোচনা-সমালোচনা  চর্চা  কতটা  গঠনমূলক হচ্ছে?

আশুতোষ বিশ্বাস
বর্তমানে বাংলা সাহিত্যের আলোচনা-সমালোচনাচর্চা সবসময় গঠনমূলক না হলেও শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তাকে গঠনের হাতিয়ার করে নিতে পারে। নেয়ও। প্রচন্ড ঝঞ্ঝায় কারো ঘরের চাল উড়ে গেলে যেমন বুঝি ওড়া চাল জোড়া না লাগানো বেমানান— তেমনি সমালোচনা এবং আলোচনার মধ্যেই সুস্থির চাল সংস্থাপনের গোপনবার্তা ডাক দিয়ে যায়। সমালোচনা বা আলোচনার ঝড় যত থাকবে ধরে নিতে হবে সাহিত্য ততবেশি ক্ষুরধার আর ঋদ্ধতার দিকে যাচ্ছে, মানুষকে জাগাচ্ছে।

দিব্যক
‘কবিতায় ছন্দ’ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?

আশুতোষ বিশ্বাস
জীবনের ছন্দই কবিতার ছন্দ। দ্রুত ধীর আর মধ্যম লয়ের মধ্যেও লয়ের কম বেশি তো থাকেই। ছান্দসিকেরা মোটাদাগের ছন্দের এই বিভাজন করে দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এর মধ্যেও যে আরও বিভাজন হতে পারে, থাকতে পারে—আছেও। একজন মানুষ সকাল থেকে সন্ধে রাত থেকে ভোর কত বিচিত্র লয়ে কথা বলে যাচ্ছেন, হেটে যাচ্ছেন। আমাদের আধুনিক নামাঙ্কিত জীবনচর্যায় প্রতি মুহূর্তে নতুন কোন এষণায় মনের পংখীরাজ ডানা মেলতে চাইছে। আট বা নয়ের দশকে যে ধরনের ছন্দ যে ধরনের কণ্ঠস্বর নিয়ে কবিরা-শিল্পীরা চমকিত সচকিত করেছিলেন আপামর শ্রাবণিককে, আজ কিন্তু সেই চমকিত কাব্যস্বর আজকের শব্দগ্রহীতার কানে সেভাবে সংবেদন দেয় না। সেই পুরোনো কান আরও পুরোনো কণ্ঠধ্বনিকে নতুন করে আয়ত্ব করতে চাইছে। গদ্যের কড়া হাতুড়ির ঘায়ে কবিরা নতুন করে খুঁজছেন গদ্যের মিত্রাক্ষরতাকে। মিলনাত্মক ছন্দের দিকে আজকের কবি-শিল্পীরা মুখ ফেরাতে চাইছেন— কিন্তু ফ্রেম আলাদা। আমাদের সময় যখন উলুখাগড়া, ছন্দহীন জীবনের অস্থিরতা—তখন একটু মিলনাত্মক পয়ারের দিকে ঝুঁকলে ক্ষতি কি !
  
দিব্যক
ছোটবেলায় কি লেখালিখি করতেন?

আশুতোষ বিশ্বাস
হ্যাঁ, আগেই বলেছি, ক্লাস থ্রি-ফোর থেকেই লিখতাম। লুকিয়ে লুকিয়ে। কাউকে দেখানোর সাহস ছিল না। সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ত, কেরোসিনের লম্ফ মৃদু জ্বালিয়ে মাটির ঘরের এককোণে শুয়ে শুয়ে লিখতাম। বাড়ির বড়রা ভাবত আমি ক্লাসের পড়াই পড়ছি। খুব ভোরবেলায় স্বপ্ন দেখে জেগে উঠতাম, স্বপ্নে লিখতাম— ভোরবেলা ঘুম ভেঙে মনে হত আমি কোথায় এলাম।

দিব্যক
লিখতে কেমন লাগে?

আশুতোষ বিশ্বাস
ভাবনার সাথে তাল মিলিয়ে লেখা হয়ে ওঠে না। পেটের ক্ষিদে মেটাতে বেশিরভাগ সময়টা বিক্রি করে ফেলা হয়েছে, কাজেই লিখতে ভাল লাগলেও সবসময় লেখা হয়ে ওঠে না। আকাশের মেঘের মত কখনও-সখনও দূর দূরান্ত থেকে আকাশ ভেঙে কথা আসে, লেখা আসে— তখন লিখতে বেশ লাগে।

দিব্যক
আপনি কী ধরনের বই পড়তে পছন্দ করেন?

আশুতোষ বিশ্বাস
মূলত কবিতা, যে কবিতায় অনির্দেশের ইশারা চকিতে মনের অন্তঃস্থলে জাগে, ঝড়োরাতে দোদুল্যমান পাখির বাসা অক্ষত থাকার বাসনায় কাঁপে। সেই বই— তা গল্প হোক বা কাব্য হোক।

দিব্যক
এখন কোন বইটা পড়ছেন?

আশুতোষ বিশ্বাস
একটা গদ্যগ্রন্থ ‘শ্মশান মিথ পুরাণ ইতিহাস’ নামের, পরিশ্রমী যুবা লেখক আলোক সরকারের গবেষণাধর্মী লেখা।
আর সঙ্গে আছে শৈলেশ্বর ঘোষের রচনা সমগ্র। 

দিব্যক
আপনি বারবার পড়েন, এমন কবির নাম জানতে চাই।

আশুতোষ বিশ্বাস
আমি বার বার পড়ি, ঘুরে ফিরে পড়ি— জীবনানন্দ দাশ, আল মাহমুদ।

দিব্যক
বর্তমান  সময়ের  কবিতার  বিরুদ্ধে  জনবিচ্ছিন্নতা  ও দুর্বোধ্যতার  অভিযোগ  বিষয়ে  কিছু  বলেন। কবি  কি পাঠকের  রুচির  সাথে  আপোষ করে  কবিতা  লেখা উচিত?

আশুতোষ বিশ্বাস
কবি তাঁর চেতনার অন্তর্গত রক্তের কারণেই বিচ্ছিন্ন, নির্জনপ্রিয়— কাজেই কবিদের বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার যে অভিযোগ তা শুধু আজ নয়, বলা যেতে পারে তা চিরকালীন। আমাদের বাংলা কাব্য সাহিত্যের প্রথম কবিতাগুলিই (চর্যাপদ) তো ছদ্মনামে লেখা, কবি নিজেকে জনসমক্ষ থেকে লুকিয়ে রেখে এইসব লিখেছেন। আর দুর্বোধ্যতার বিষয়ে এটাই বলা যায়— কবির লিখিতমুদ্রার আসল অর্থ আমরা মানে সাধারণ পাঠক বুঝে উঠতে পারছি না, কারন আমরা কবির মনের সমমনস্ক হয়ে উঠতে পারি নি বা পারছি না। কবিকে দোষ দিয়ে বেড়াচ্ছি। পাঠকের রুচির সাথে আপস করে সিনেনিউজ বা সিরিয়ালের গল্পকে বাড়িয়ে বাড়িয়ে বড় করা যায়। সংবাদপত্রের ধারাবাহিক  মুচুমুচে মসল্লাদার রচনাকে মাসের পর মাস ‘ক্রমশ’ লিখে বাণিজ্যিক লাভালাভের ক্ষিদে মেটানো যায়— কবিতা লেখা যায় না, কবিতা হয় না।

দিব্যক
লেখা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে  অন্তর্জালকে  কীভাবে দেখছেন?

আশুতোষ বিশ্বাস
সময়ের সাথে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে না চলার মত ভুল আমাদের আধুনিক সময়ের কোন মানুষের না করাই শ্রেয়। সময়ের দাবিকে মেনে নিয়েই সময়ের হাতে হাত রেখে চলার আর এক নামই আধুনিকতা। কাজেই আন্তর্জাল আমাদের এই আধুনিক সময়ের যাপনচক্রে জড়িয়ে আছে, থাকছে আরও থাকুক। এতে মোদ্দাকথা নানাবিধ পেশা এবং মননের কাজে গোটা দুনিয়াকে চোখের পলকে হাতের মুঠঠিতে আনতে পারার এতবড় সুযোগ আমরা হাতছাড়া করব কেন? না না কক্ষনও নয়। আন্তর্জাল আমাদের আধুনিক সময়ের কাছে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ।

দিব্যক
আপনার কি বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক বিশ্বাস আছে?

আশুতোষ বিশ্বাস
আছে।

দিব্যক
আপনি কি এক বসায় কবিতা লেখেন, না কি বারবার সংশোধন করেন?

আশুতোষ বিশ্বাস
এক বসায় ফ্রেম করি আর এক বসায় ফ্রেমে শব্দের নুড়ি বালি দিয়ে ভরাট করি তারপরের বসায় দেখি আমার নির্মিত ঘরে আলো বাতাস প্রবেশ করে বসতযোগ্য বাড়ি হয়ে উঠল কী না! বার বার এই বাড়ির ম্যাপের সংশোধন সংযোজন করি।

দিব্যক
আপনার প্রেমের কবিতাগুলো কি কল্পনাসৃষ্ট না কি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ?

আশুতোষ বিশ্বাস
দুটোই। বাস্তব এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সঙ্গে কল্পনার সুঁই-ধাগার ফোঁড়।

দিব্যক
আপনি দিনের কোন সময়টাতে লিখতে পছন্দ করেন? কোনো রুটিন আছে কি এ ব্যাপারে?

আশুতোষ বিশ্বাস
না কোন রুটিন নেই। তবে দিনেরবেলাতে লেখা হয় না। যেটুকু হয় রাত্রে–- গভীর রাতে, যখন ‘আমি’-কে একান্ত আমার মত করে পাই।

---------------------------------------------------
পরিচিতি: আশুতোষ বিশ্বাস, জন্ম ১৯৭২ সালের ২১ ডিসেম্বর, মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা থানার অন্তর্গত মানিকচক কলোনি নামক গ্রামে।স্থানীয় মানিকচক হাই মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক সমতুল হাইমাদ্রাসা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লালগোলা এম এন একাডেমি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশুনো। জিয়াগঞ্জ শ্রীপৎ কলেজ থেকে বাংলা সাম্মাণিক ডিগ্রি নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যয়ন। এম.ফিল ডিগ্রিলাভ। ইউ জি সি নেট পরীক্ষা পাশ করে কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার মাধ্যমে পুরুলিয়া জেলার মানভুম মহাবিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে স্থায়ী অধ্যাপনার চাকুরি গ্রহণ, সেই সূত্রে পুরুলিয়ার মানবাজার সাব-ডিভিশনের স্থায়ী বাসিন্দা ২০০৫ সাল থেকেই। পুরুলিয়া জেলার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কবি সমর সেনের ওপর গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ। একটানা আটবছরের অধিক সময় মানভুম মহাবিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ সামলানো, সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ফ্যাকাল্টি হিসেবেও দীর্ঘদিন অধ্যাপনা।‘পুরুলিয়ার জেলার ছৌনাচ ও তার শিল্পীসমাজ’ নিয়ে ইউ জি সি-র অর্থানুকূল্যে একটি মাইনর রিসার্চ ওয়ার্কের কাজ সম্পন্ন করা। গবেষণাধর্মী সমালোচনামূলক প্রবন্ধ ছাড়াও কবিতা রচনায় নির্ভেজাল আনন্দ পাই। প্রথম কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ ও কবিতা রচনায় ‘বাস্তবিক সবুজ’ ছদ্মনামের আশ্রয় ছিল বর্তমানে ছদ্মনাম বিমুক্ত। সাহিত্যের আলোকপত্র চতুর্মাসিক ‘তারারা’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, ২০০৩ সাল থেকে নানান চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে এখনও চলছে।
এই পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি নিম্নরূপ : 
১। ‘একটি বিশেষ ঘোষণা’, / বাস্তবিক সবুজ / প্রকাশক : ‘অক্ষর সংলাপ’ (অক্টোব্র, ২০২০)
২। ‘থ্যাঁতলানো মন বিষয়ক’, / বাস্তবিক সবুজ / প্রকাশক : ‘অক্ষর সংলাপ’ (জানুয়ারি, ২০২১)
৩। ‘লুপ্তশস্যবীজ’, / বাস্তবিক সবুজ / প্রকাশক : ‘অক্ষর সংলাপ’ (ফেব্রুয়ারি, ২০২১)
৪। ‘সন্দেহশয্যা’, / বাস্তবিক সবুজ / প্রকাশক : ‘অক্ষর সংলাপ’ (মে, ২০২১)
৫। ‘চন্দনকাঠে রাঁধা হরিণীর মাংস’, / বাস্তবিক সবুজ / প্রকাশক : ‘সাঁঝবাতি’ (জুলাই, ২০২১)
৬। ‘শীতকাল এসে গেল স্বাগতা’, / আশুতোষ বিশ্বাস/ প্রকাশক : ‘প্রতিভাস’ (জানুয়ারি, ২০২২)
প্রবন্ধগ্রন্থ / সম্পাদিত গ্রন্থ
১। ‘একালের কবিতা পাঠকের অনুভবে’, আশুতোষ বিশ্বাস/ প্রকাশক : বামা পুস্তকালয়, (২০০৬)
২। ‘বিশ্বম্ভর নারায়ণ দেবের কবিতা’, আশুতোষ বিশ্বাস/ প্রকাশক : সাঁঝবাতি’, (জানুয়ারি ২০২২)
৩। ‘উনিশের কবিতা সমীক্ষা’, আশুতোষ বিশ্বাস এবং দেবব্রত বিশ্বাস/ প্রকাশক : ‘ব্যঞ্জনবর্ণ’, (জুলাই ২০১৫)/(যৌথ সম্পাদনা)
৪। ‘ডাকঘর : অনন্ত জীবনবীক্ষা’, আশুতোষ বিশ্বাস এবং দেবব্রত বিশ্বাস/ প্রকাশক : ‘প্রজ্ঞাবিকাশ’, (মার্চ ২০১৪)/(যৌথ সম্পাদনা)  
৫। ‘রথের রশি: সাম্যভাবের সংলাপ’ আশুতোষ বিশ্বাস এবং দেবব্রত বিশ্বাস/ প্রকাশক : ‘প্রজ্ঞাবিকাশ’, (জুলাই ২০১২)/(যৌথ সম্পাদনা)  
৬। ‘উনিশ-বিশের কবিতা : ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার’, আশুতোষ বিশ্বাস/ প্রকাশক : মানভুম মহাবিদ্যালয়/(ফেব্রুয়ারি ২০১২)/সম্পাদনা
৭। ‘স্বাধীনোত্তর বাংলা উপন্যাসের বিবর্তন’, আশুতোষ বিশ্বাস/ প্রকাশক: ‘ব্যঞ্জনবর্ণ’, (মে ২০১৪/ সম্পাদনা
৮। ‘একালের নির্বাচিত: বাংলা ছোটগল্প: পাঠকের অনুভবে ১’, আশুতোষ বিশ্বাস/প্রকাশক: ‘প্রজ্ঞাবিকাশ’, (জুলাই ২০১৫)/ সম্পাদনা 
৯। ‘বাংলা আধুনিক কবিতা: সমর সেন’, আশুতোষ বিশ্বাস, প্রকাশক: ‘অক্ষর সংলাপ’, (মে, ২০২২)
১০। ‘বাংলা কবিতার চলন বিচলন’, আশুতোষ বিশ্বাস, প্রকাশক: ‘সাঁঝবাতি’, (জুন, ২০২২)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

5 মন্তব্যসমূহ

  1. মেহেদী হাবিব মেজর৩০ জুলাই, ২০২২ এ ৩:৫৬ PM

    খুব সুন্দর বক্তব্য

    উত্তরমুছুন
  2. একজন নতুন লেখকের সাথে পরিচিত হলাম৷ ভাল্লাগলো

    উত্তরমুছুন
  3. যথার্থ উপলব্ধি। এরকম বিনয় সমকালে বাংলাদেশের লেখকদের মাঝে দুর্লভ।

    উত্তরমুছুন
  4. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  5. অসম্ভব ভালো সাক্ষাৎকার আশুতোষদা।

    ‘ছোটবেলায় আমি হতে চাইতাম পাখি। হতে চাইতাম আমার প্রাইমারী স্কুলের যাওয়ার পথের বটগাছ। যে গাছে বহুবিচিত্র প্রজাতির দেশীয় পাখির বাসা ছিল। আর তাদের বাসায় স্থিত ডিম অথবা ছোট্টপাখির শাবক আমাকে যেন চি-চি করে ডাকছে, সেই ডাক আমিই শুনতে পেতাম।’

    এ যে কী পরম বিস্ময়মাখানো আনন্দ, বিশ্বাসের ওম। উহু! আমিও যে শূন্য বাসা, ডিম, ছানা, ছেড়ে যাওয়া পালকের পাশে বসে থাকতাম 🙂♥️

    উত্তরমুছুন

অস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।