....

পাণ্ডুলিপি থেকে : লোকাল ট্রেনের জার্নাল / সাম্য রাইয়ান




কবিতার পূর্ণদেহে নদীর নিজস্ব ঘ্রাণ  


পৃথিবীর সব ফুল একদিন শুকিয়ে যাবে। এই সত্য জেনে গেছি আমি। তবু বাড়ন্ত আকাশের দিকে হাত বাড়াই। এইটা স্বপ্ন না কি? ইত্যাবসরে আমার দেখা হয় না কোনো ফুলের সাথেই। কাগজের ঠোঙা ভরিয়ে ফেললাম খড়কুটো দিয়ে। সন্ধ্যার গায়ে কালোজামা দিয়ে আকাশ নিজেকে গোটাচ্ছে। পৃথিবীর সব হরিণ একদিন শিকারীর দিকে প্রেম নিয়ে ধেয়ে যাবে। যে প্রেমগুলো আমার দিকে ছুঁড়ে মেরেছিলো, তার স্মৃতিচিহ্ন আজও পাঁজরে লেগে আছে।


হারানোর উপাখ্যান বেশি থাকে যাবতীয় পুস্তকের পাতায়। আর গাছের পাতায় লেখা থাকে প্রাপ্তির প্রণালী; তাতে ভার বেশি হলে সরবে বা নীরবে চোখের জলের মতো ঝরে যায় শীতের শেষে।

একদা হরিণীর খোঁজে শিকারী সেজেছিলাম, বুমেরাং গুলি পাঁজরের ভাঁজে এখনো নিখোঁজ!

ভাই ও বোনেরা আমার, নিজের সম্পর্কে বলি- আমি এক আততায়ী, অরণ্যের জ্ঞাতি।
(অরণ্যের জ্ঞাতি)

বিবাহিত মোরগের হাতে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে এক সকালে বিনয় চলে গেল। তারপর নগর থেকে লাল পাহাড়ের দিকে নাতিদীর্ঘ ভ্রমণ। এই লাল পাহাড়ের যেন কী নাম! ধিয়াং বলছেন, হোয়াট মাই নেইম ইজ! আমি তার জানি না কিছু। সময়ের জামা খুলে নিস্তরঙ্গ সকালে আমি সূর্যের বাড়ি পাহাড়া দিই। আমার প্রেম শুধু এক জোনাকীর সাথে। ওর, আলো নিয়ে, ভালো হয়ে, ধিয়াং ছোঁয়াব আর জীবনবাবুর শঙ্খ দেখাব; অথবা উড়ে যাওয়া চিল...

আমার ভ্রমণ মানে সঞ্চিত ছুটিতে পাহাড়ে পিকনিক আর নতুন শার্টের বিমোহিত ঘ্রাণ যেখানে প্রতিদিন জমা হয় সময় ও সুযোগ হারানোর নাতিদীর্ঘ গল্প।
(নাতিদীর্ঘ ভ্রমণ)

শুকনো গাছের মাথায় টোপর পড়াল কে? সবুজ আর হলুদরঙা টোপর থেকে বেরিয়ে আসা ঘাসের কম্পণ শোনা যায়। নিস্ফল হ্রেষা আর অজস্র কম্পণের পাশে দাঁড়িয়ে একটা দূরন্ত বিকেল আকাশের কতা ভেবে যাচ্ছে। চারপাশে অজস্র অস্তিত্ব রক্ষার সুতো বাঁধা গাছ নির্বিকার। আপনি কিছু বলুন মহামান্য; কাউকে কিছু বলুন। সেলাই মেশিনে কত ‘যুক্ত’ হবো আর, ‘মুক্ত’ করুন এবার। হৃদয় ঝাপসা হয়ে আসছে দিনদিন; ঠিকঠাক ‘অনুভব’ করি না। শীতার্ত অনুভূতি বুঝি ভোতা হয়ে এলো। টাইপরাইটারে বর্ণ পরার মতো ঠকঠক শীত পড়ছে তবু- কুয়াশা ঢেকেছে হৃয়, তোমাকে হাতড়ে পাচ্ছি না!

গত শীতে আমার সই ছিল; এই বছর শীত কই! দূর্বাঘাসের সাথে শিশিরবিন্দুর যৌথজীবনের মতো রৌদ্রযাপন কালে দেহে তরঙ্গ তুলেছিল তাপ, মনোমিটারের লাফালাফি তখনও থামেনি; তারপরের পরিণাম জেনে গেলে চোখে কুয়াশা প্রাচীর।

শীত মানে সই কাল; যুথবদ্ধ প্রণয়ে লেপের ওম।
(শীতের সই কাল)

তীরবর্তী যতো প্রাণ, দেখছে - নদী থেকে মাত্রই উঠে এলো এক শব্দ। এরপর ক্রমিক সংখ্যার মতো একের পর এক শব্দ উঠে আসছে তীরে; শব্দপ্রবাহ তৈরি হচ্ছে। স্নান সেরে উঠে আসা শব্দের দেহ থেকে ফোঁটাফোঁটা জল পড়ছে; ছড়িয়ে পড়ছে ঘ্রাণ। কবিতারও পূর্ণদেহে লেগে যাচ্ছে নদীর নিজস্ব ঘ্রাণ। ঝড়াক্রান্ত জলতরঙ্গে ভাসে জরাক্রান্ত মানুষ। প্রস্ফুটিত শীতের সকালে সে নিজেকে আত্মহন্তারক ভাবে। মনভূমি জুড়ে এমন বাবনা বুনে সে ফিরে আসে হাওয়াবাগানের দিকে। হাওয়াবাগানজুড়ে শুধু নীলকান্ত এক, আমাদের রাণী-মা।

কারা সঙ্গ দিতে আসে রাতে নদীর বুকে? তারা, সংসার বৈরাগী, ঘরভাঙা মানুষ না কি আত্মহন্তারক? যে যার মতো সময়ের বিন্যাসে আসে, জলতরঙ্গে ভাসে; কাঁদে বা হাসে! তার পরের হিসাব নদীও মনে রাখে না।
...
রাতের সঙ্গম-শেষে শীতের ভোরে যারা মাতামুহুরীর জলে স্নান সেরেছেন তাদের শরীরে অনুভূত তাপই সাক্ষ্য দেবে-নদী ও নারীর ঘ্রাণ সম্পূর্ণ মৌলিক।
(নদীর নিজস্ব ঘ্রাণ)

দেয়ালভর্তি শুধু শুভবার্তা লেখা। শুভর শুভাগমনে শুভেচ্ছাজ্ঞাপন। কেউ পড়ে না সেসব তীব্র অভিমানে। শুভ, চলে যাও! যাদের চোখের দিকে তাকালে সন্ধ্যা নামে তারা স্বপ্ন দ্যাখাতে পারে ফুরিয়ে যাওয়া গন্তব্যের। চারদিন চারদিকে হেঁটে গেলে শুধু ধূ ধূ প্রান্তর। নিঃশব্দে প্রাচীর ভেঙে পড়রেছ, বাঁশীর শব্দে। নিরো, স্বপ্নসুর বাঁধো; রাঁধারমন গীত হবে। খসে যাওয়া ডানা, ভুলে সে বেদনা, ঘোড়া হাকিয়ে পাখি, স্বপ্নে ঘুম হবে, ঘুমালে স্বপ্ন হবে।

ক্ষণস্থায়ী ঘুমের স্বপ্নগুলো নিরাপদ অথচ বিভ্রন্তিময়...
...
সেডিল ঘুমে স্বপ্নরা হর্সপাওয়ার নিয়ে বাতাসের তাড়া খায় আর হিমালয় দেখার বাসনায় যাত্রা করে উত্তর-দক্ষিণ রেখা বরাবর...
(স্বপ্নঘুম কিংবা ঘুমের স্বপ্ন)

বিন্যস্ত গ্রামোফোনের মায়াপাশে শুয়ে আছে ছাইরঙা ড্রামা। পোশাক বদলের বেগে আবেগ বদল হচ্ছে,সাথে বদলে যাচ্ছে স্মৃতি, বিলীন প্রেমিকার মুখ! ভ্রমণব্যাগে শুধু মুখোশ; মুখোশে ভরা। নিতাশা পাখিটি আর আসে না টমেটো ক্ষেতে। আশ্চর্য বদলে গেছে দিন, কালের হিসেবে। পাখিরও মেটে না দেনা ঘর বদলের। অবসাদে অবশিষ্ট পাতারা ঝরে যায়। বিস্তীর্ণ বেলাভূমিজুড়ে, পঞ্জিকার প্রতিটি তারিখজুড়ে রয়ে যায় গান। যে গানের ছায়াপথ ধরে ভ্রান্তি সেন কাপড় শুকাতে দেয়।

কতটুকু বদলে গেলে কেউ চেনে না পথ, পূর্বেকার আস্তানা? হিসেবের কাতায় চলতে থাকে মনোমিতি পাঠ; মিলে কখনো অথবা পৌনঃপুনিক আয়োজন।

সারাক্ষণ অদল-বদল খেলা আহ্নিক গতির ধারায়...
(অদল-বদল খেলা)

একটা প্লাস্টিকের পাখি নাচিয়ে নেচে নেচে যাচ্ছেন জীবন্ত বাবা। শরীরের বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে তার বেরিয়ে পড়ছে লুকানো ঘাসফুল; শার্টের পকেট থেকে প্রজাপতিছানা... কতো বা আটকাবেন তিনি? পকেটে হাত দিয়ে আটকাতে চান প্রজাপতি, ঘাসফুল আর ছেলের জন্য সদ্য কেনা খেলার সরঞ্জাম। দশ হাতে যখন আসে ভাটার টান, দু’হাতে তখন ক’টা আটকাও বাজান? গুচ্ছ গুচ্ছ বেলুন, পাখি বাবার মাথার উপরে উঠে যাচ্ছে আর বাবা তার দুই হাত ছুঁড়ছেন শূন্যে...

বাবা প্রায় বলত- বাজান, সবকিছু কিনে দেব বছরের শেষে; নতুন জামা, বাটা জুটা, ফুলপ্যান্ট, সানগ্লাস আর ফনিক্স সাইকেল। কিন্তু দিয়ে যেতে পারেননি সব। তার আগে আমি বাবাকে দখিনের গোরে নতুন মাটিতে শুয়ে দিয়ে এসেছি নভেম্বরের শীতের সন্ধ্যায়।
(ফনিক্স সাইকেলের স্মৃতি)

হাহাকার জমা আছে মনে। কতোটা চাই, ফিরে পেতে। পাওয়া হয় না। কতো স্মৃতি জমিয়ে রেখেছি মায়াপাশে। এই বৃথাবাক্সে জমিয়ে রাকা স্মৃতিচিহ্ন। হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন, ‘তোমার অভাব বড় বোধ করে এ শহর ... আজও তোমার অভাবে কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।...’ বলুন, এতোটা অভাব বোধ নিয়ে কী করে গান গাইবে পাখি? আমি তবু কিছু সুর বাক্সবন্দী করে রাখি। কিছু হাহাকার মাটিতে গেঁথে প্রতিদিন জল দিই, আলো-বাতাস দিই; কোনো একদিন, যদি তুমি আসো-

খালি হাতে ফিরে আয় ঘরে, রানু
তোরে আমি মন দেব ধন দেব
বুক জুড়ে ভরে দেব আরাধ্য স্বপন

ফিরে যদি এসো তবে ফুল দেব হাতে
পরম সোহাগ দেব তারা ভরা রাতে।
(ফিরে আয় ঘরে, রানু)
[উদ্ধৃত সকল কবিতা ভাগ্যধন বড়ুয়ার ‘নদীর নিজস্ব ঘ্রাণ’ কবিতার বই থেকে নেয়া হয়েছে।]





রাত্রি একটা অনাহুত বেদনার নাম

ঘুম ভেঙে গেলে বুঝি কান্না পায়! না হলে জন্মক্ষণে তুমি কেঁদেছিলে কেন? ইচ্ছে জানাবার মতো সময় আমাদের হাতে ছিল না কখনো; মতামতের উর্ধ্বে ছিল জন্মগ্রহণপ্রক্রিয়া।  তাই অনিচ্ছুক ছেলেগুলো শুধু থামিয়ে দিতে চায় জীবনমেশিন।  অনিচ্ছুক হলে কাজে উপদ্রবহীনতাকেও মনে হতে পারে অসহ্য উপদ্রব; নিরাময় পাই না তখন কাছেকূলে।  চোখের সীমায় শুধু দেবদ্যুতের হাতল হয়ে ঝুলতে থাকে একান্ত রেললাইন; হাতল টানলে দুইশ’ টাকা জরিমানা...

পাতার শরীর থেকে জল গড়িয়ে পড়া দেখতে দেখতে
কোনো একদিন আমিও হয়ে যাই জল, গড়িয়ে পড়েছি
পাতার শরীর থেকে, মাতৃগর্ভ ছেড়েছি দারুণ একাকী!
(পাতার শরীর থেকে জল গড়িয়ে পড়া দেখতে দেখতে)

মধ্যরাতে জগতবিদীর্ণ ডাক শুধু শেয়ালই জন্ম দিতে পারে; এমন ধারনা করতাম একসময়।  সময় আর আমি পরস্পর দুই পায়ের মতো পাশাপাশি চলতে চলতে জেনেছি, প্রকৃত বিচারে- কিছুই এখনো জানা হয় নাই।  শুধু রূপবতী খন্ড বৈচিত্রের প্রেম জিইয়ে রেখেছে; সত্যি বলছি- অকারণ।  শৈশবে বইতে ভালোবাসা আর মমতার কথা জেনেছি।  সেইসব পাক-পবিত্র ট্যাবুকে খুঁজতে অনেকটা দিন বৃথা হয়রানি শেষে জানলাম, এখন হৃদয়পুরে মমতা নেই কোনো।  প্রকৃতপ্রস্তাবে, মমতা একটি পেত্মীর নাম।

 এখন নতুন ভয় নিয়ে ঘুমাতে যাই প্রতি রাতে
শিকারী প্রাণীর মতো তাড়া করে, ঘুমাতে পারি না।একেকটা দিনের সম্ভাবনা নিমেষে উড়িয়ে দ্যায়অজস্র সশস্ত্র ভূত... মানুষ ভূত হিংস্রতা নিয়ে।আমি রাত্রি ভয় পেতাম, মানুষ পাশে থাকলে ভয়কেটে যেত, ঘুমাতে পারতাম নিশ্চিন্তে, নির্ভার হয়ে।এখন আমি মানুষ ভয় পাই! এই ভয় নিয়েপালিয়ে বেড়াই ঘরময়, সারা শহরে দিনরাত্রি!(রাত্রির সাথে সখ্যতা ছিল না আমার কোনোকালে)

পরবর্তী জীবনের জন্য অনাড়ম্বর নির্জনতাটুকুই শুধু জমা আছে। উত্তরের পথ ধরে শীতের আসা-যাওয়া জমা আছে।  জমা খরচের খাতা মনে আছে একবার দেখতে গিয়েছিলাম।  নিদারুণ সেই জামংরুল বন, শুকনো পায়ের হাওয়া, বুকের ভেতরে নদী; অগণন স্রোতচিহ্নে নদীতীর ভরে আছে।  জলের শব্দে শরীর ভেজানোর প্রয়োজন ফুরিয়েছে।  তাবৎ রূপের দেশে এই কথা শুধু কবি বলে এক লোক বিড়বিড় করেন।  জল হামিংবার্ড নয়, ওরকম ডানাধিক প্রেম নিয়ে উড়ে যাবে গাইতে গাইতে।

জানি সবাই, জল ছাড়া ভেঙে পড়ার আর কোনো শব্দ শোনা যায় না।
গোপন ক্ষয়, ঘুম থেকে জেগে ওঠার মতো নিস্তরঙ্গ; অবধারিত।
কেবল জানালায় দেখা দৃশ্যগুলো চলে যায় সশব্দে; জানিয়ে দ্যায়
দৃশ্যের বাইরে কোনো জগৎ নাই।  ভেঙে পড়া যাবতীয় রূপ থেকে
দূরে কোথাও- গোপন ক্ষরণে, চিরাচরিত নির্জনতায় ঝরে পড়ে
বৃক্ষের পাতা... সোনালি সোনালি রোদ ছুঁয়ে অবাক শীতের রোদ হয়ে।
(জল ছাড়া ভেঙে পড়ার আর কোনো শব্দ শোনা যায় না)

বিন্যস্ত ফুলবাগানের পাশে বিশ্বাস বাবু থাকতেন।  পুরোনো দালান।
বিকেলে খেলার মাঝে বল ছুটে গেলে চিৎকার করে উঠতেন। দালানের প্লাস্টার খসে খসে ঝরে ঝরে মরে মরে পড়ত।  আশ্চর্য! কারও মধ্যে কোনো অনুতাপ নাই, অপরাধবোধও নাই।  মৌসুমী বাতাসের মতো মৌসুমী কম্পনের খবর আসে পত্রিকার পাতায়। পুরোনো পাতা, খাবার বিছানো টেবিল।  ভাবি কোনোদিন যদি সত্যি ভূমি কম্পিত হয় আবেগে, কী হবে কী হবে।  চায়ের দোকান থেকে মায়ের রান্নাঘর আলোচিত।  বিশ্বাস বাবুর বন্ধু প্রবীণ সরকার বলেন, ‘বিশ্বাসের পুরোনো দালান, ভেঙে পড়তেই পারে।’

অবশেষে ভেঙে পড়েছিল
বিশ্বাসের কঠিন দেয়াল।
ঝরে পড়ে পাখির বাসা
আর নিতান্তই অবহেলায়
বেড়ে ওঠা বাহারিলতার ঝাড়।
ভিনদেশী পাখি হয়ে উড়ে গেল
মৌসুমী বাতাসের আহ্বানে...
(নিঃসঙ্গতা)

[উদ্ধৃত কবিতা ও কবিতাংশগুলো কবি সৈয়দ সাখাওয়াৎ এর কবিতাবই ‘খণ্ড খণ্ড রাত্রির আলাপ' থেকে নেয়া।]




একটা সত্যি কথা বলো

স্বপ্ন দেখলাম৷ স্বপ্নে তোমাকে দেখলাম৷ একটা পাখি দেখলাম৷ দূরন্ত৷ ভোরের ডানায় ছুটে বেড়ায় সে পাখি৷ কী নাম তার? ঘুম ভেঙে গেল৷ এটা তো সুবিধের হলো না৷ চোখ বাঁকা হয়ে আসে৷ রিকশায়, যেন সে রিকশা নয়, পঙ্ক্ষীরাজ; হাওয়া, হাওয়ায় সে চুল উড়ছে; যেন সে চুল নয়, পঙ্ক্ষীরাজের ডানা! উড়ে আসছে! দেখলাম৷ অথবা পাখি হতে পারে৷ তুমি কী? আজ সত্যি করে বলো৷ একটা সত্যি কথা বলো৷ কী লাভ নিজেকে লুকিয়ে! কী হয়, কী হয়, কী! যদি মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়, সাথে সাথে ডেকে নিও তবে, সঙ্কোচ রেখো না মনে৷ সারারাত জাগিয়ে ঝিরঝির বৃষ্টিতে ভিজে, তোমার জ্বর আসে না? আসে না তোমার জ্বর! যাও— ঘরের ভেতরে ঢোকো৷ জামা ছেড়ে দাও৷ কারো ডাকে সাড়া দিও না৷ যে ডাকছে, ডাকুক সে— ডেকে ডেকে চুপ হয়ে যাক৷ কণ্ঠনালী ছিঁড়ে রাস্তায় উঠোনে ফুটপাতে পড়ে থাকুক, শেয়াল-কুকুরে খুবলে খাক তাকে৷ কে তাকে জন্ম দিয়েছে ফের, সেই যে জুলাই মাসের গল্প, তুমি তো জানোই সব৷ তবুও বলতে হচ্ছে৷ যদিও সবটা বলতে হয় না, জানি৷ কলম ভালো হলে আমি প্রচুর লিখতে পারি৷ জমে গেলে প্রেম, গাইতে পারি গান৷ একটা সিগারেটের জন্য কি নাচতেও পারি? রাতের সমাপ্তে এ কী হলো আমার? ভরপেট দানাপানি দিলে গুলিও করে দিবো বুঝি! সেদিন তোমার কথা বললাম৷ প্রথমবার৷ তোমার অবশ্য জানবার কথা নয়৷ কাউকে বলি না কিছুই৷ মুখ বন্ধ হয়ে যায়৷ গলা আটকে আসে৷ দমবন্ধ লাগে৷ কী অস্থির, কী অস্থির! ভাষায় প্রকাশ করা যায় না৷ তা ভাষায় প্রকাশ করা হয় না৷ আমি কি চাইলে পারতাম না সেই গানটি আবার গাইতে, কোনোদিন— কোনো একদিন, পারতাম না গাড়ি চালানো শিখে নিতে? কেন এরকম হলো? কেন এত বিষণ্ন হলো গান? আজ অব্দি একটি বাক্যও তোমাকে নিয়ে লেখা হলো না, যেখানে তোমাকে দেখা যায়, যেন আয়না৷ দেখাতে জানে সে, দ্যাখে না৷ সে বাক্য পারিনি লিখতে৷ সে দুখের কতোটা জেনেছি বলো! আমি তোমার কোন সৌন্দর্যকে অস্বীকার করবো? কোন বেদনাকে আড়াল করবো? কোন অশ্বডিম্ব দেবো উপহার? সিগারেটের স্বাদ মরে গেছে আর মদের গন্ধও, ফিকে-ম্লান হয়ে গেছে৷ তুমি আসো নাই৷ তার মানে কী? এইবার সত্যি কথাটা বলো৷ আমি জানতে চাই৷ জানতে জানতে আমি মাটিতে নুয়ে পড়তে চাই, শুয়ে পড়তে চাই, তোমার জীবনের পাশে…

একটা চিঠি লিখবো ভাবছি তোমাকে৷ আজ প্রথমবার না যদিও৷ এমনটা আমি অনেকদিন থেকেই ভাবছি৷ এ-ই ধরো দশ বছরের কাছাকাছি তো হবেই৷ যতোদিনে তোমার সন্তান বাড়তে বাড়তে তোমার সমান হতো৷ তুমি দাড়িয়েই থাকতে ডালপালা মেলে; তোমার পাখনাগুলো, যেন তুমি রিকশায় আসছো প্যারিস রোড ধরে; বাতাশে, হ্যাঁ খুব বাতাশ তখন; তোমার চুলগুলো উড়ছে৷ উড়ছে প্রজাপতি আর মৃদু জলের বুদবুদ জমছে দুরুদুরু বুকে৷ কীরকম না? আর তুমি হাসছো! অথবা তাকিয়ে দেখছো সব, জলবৎ তরলং৷ অথবা চিৎকার করে বলছো, ‘সিগারেট কমাতে হবে৷’

তোমার জন্য কোনো চিঠিই আমি লিখবো না কোনোদিন৷ অন্য সবার জন্য লিখবো কি? অন্য কাউকে লিখবো— সেই কথাটি, যা তোমাকে লেখা হয়নি! কাউকে বলবো সে কথা? জুয়ায় হেরে গেছে তুমুল কুয়াশাভোর, সব খুইয়েছে— নিঃস্ব হয়েছে৷ কাউকে লিখবো না চিঠি৷ তোমার ট্রেন ধরবার তাড়া৷ চলে যেতে হলে ব্যাগ গুছিয়ে নিতে হয়৷ তোমার ব্যাগে কী? ব্যাগভর্তি গুডবাই নিয়ে চললে কোথায়? ভেবে ভেবে আমার ঘুম আসে না৷ সারা রাত আমার ঘুমই আসে না৷ তাই তোমাকে কক্ষনো চিঠি লিখবো না৷



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

6 মন্তব্যসমূহ

  1. এই লেখকের আরও লেখা পড়ার ইচ্ছা হচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা পাওয়া যাবে। ধন্যবাদ সম্পাদক মহোদয়।

    উত্তরমুছুন
  2. গদ্যতিনটা ছোট হইচে৷ আরেকটু বড় হলে ভালো হতো৷

    উত্তরমুছুন
  3. এটা কি ধরনের লেখ? না হইছে কবিতা, না হইছে গল্প৷ এটা কোন কিছু হইল?

    উত্তরমুছুন
  4. আহা, মনে হইতাছে লেখতে খুব কষ্ট হইছে৷ কি লেখেন ভাই, কোন স্বাদ নাই৷

    উত্তরমুছুন
  5. নিম্নমানের লেখা। কিছুই হয় নাই। আবার সেসব ছাপানোও হয়। কী আশ্চর্য?

    উত্তরমুছুন

অস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।