....

গল্পকার জুলকারনাইন স্বপনের সাক্ষাৎকার


[ কবি ও গল্পকার জুলকারনাইন স্বপন জন্মগ্রহন করেন ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ আগস্ট, কুড়িগ্রাম জেলায়৷ পিতা মরহুম আব্দুল কুদ্দুস খাঁন ও মাতা সাকীনা খানম৷ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত দীর্ঘদিন ধরে। কুড়িগ্রামের অন্যতম সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘প্রচ্ছদ’ এর সভাপতি৷ মূলতঃ নাটক লেখা ও নির্দেশনার কাজ করেন। চাকুরীসূত্রে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ ও চরাঞ্চলে নিয়মিত পদচারণা৷ সেখান থেকেই নিত্য তুলে আনেন লেখার উপজীব্য। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত একমাত্র গল্পের বই ‘অতলে জীবন’; ২০১৩-এ প্রকাশিত হয়েছে পূর্বা প্রকাশনী থেকে৷ এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে দুইটি যৌথকাব্যগ্রন্থ যথাক্রমে ‘কাঠপোকাদের দখলে নীরবতার আশ্রম’ ও ‘কিছু মেঘ ছায়ার শরীর’৷ সম্পাদনা করছেন সাহিত্যপত্রিকা ‘শব্দপরিব্রাজক’৷ দিব্যকের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও প্রকাশের অনুমতি দেয়ায় আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ৷ —সম্পাদক ]

সা ক্ষা ৎ কা র

দিব্যক

স্বপন ভাই, কেমন আছেন?

জুলকারনাইন স্বপন

ভালো আছি।

দিব্যক

করোনাকাল কীভাবে কাটাচ্ছেন?

জুলকারনাইন স্বপন

বেশিরভাগ সময় বই পড়ে কাটাচ্ছি।

দিব্যক

আপনার জন্ম কুড়িগ্রামে এটা ভাবলে আমাদের অনেক ভালো লাগে, গর্ব হয়। আপনি কুড়িগ্রামকে কীভাবে অনুভব করেন?

জুলকারনাইন স্বপন

আমার সকল অস্তিত্বজুড়েই কুড়িগ্রাম। কুড়িগ্রাম ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়। প্রতিটি মানুষই তার জন্মস্থানকে ভালোবাসে। আমার ক্ষেত্রে অবশ্য একে জন্মস্থানেরও অধিক মনে হয়। এককথায় বলা যায়, কুড়িগ্রাম আমার পৃথিবী।

দিব্যক

আপনি পড়ালেখা করেছেন কোথায়? ছাত্রজীবন কেমন উপভোগ করেছিলেন?

জুলকারনাইন স্বপন

আমি পড়ালেখা করেছি মূলত কুড়িগ্রাম এবং রংপুরে, স্বল্পসময় রাজশাহীতে। ছাত্রজীবন ছিল আমার জীবনে দুর্দান্ত সময়।

দিব্যক

আপনি কবিতা এবং গল্প লেখেন। আপনার লেখালিখিকে কুড়িগ্রাম কোনভাবে প্রভাবিত করে কি?

জুলকারনাইন স্বপন

লেখক হিসেবে কুড়িগ্রাম অবশ্যই আমাকে প্রভাবিত করে, কারন আমার শৈশব ও যৌবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে এখানকার প্রকৃতি আর মানুষের সাথে। শুধু লেখক নয়, মানুষমাত্রই তার শৈশব ও যৌবনের স্মৃতিকে সংগোপনে লালন করে সারাটি জীবন। এবং তা দ্বারা কোন না কোনভাবে প্রভাবিত হয়। তবে আমার সব লেখার ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটি ঘটে না।

দিব্যক

আমরা জানি, লেখালেখির পাশাপাশি আপনি দীর্ঘকাল ধরে নাট্যচর্চায় নিয়োজিত আছেন। তো মঞ্চ নাটকের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।

জুলকারনাইন স্বপন

মঞ্চ নাটকের কথা বলতে গেলে দু’ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে হয়, পজিটিভ এবং নেগেটিভ। পজিটিভ কথা হলো, বর্তমান সময়ে নাটক মঞ্চায়নের জন্য বা নাটকের উন্নয়নের জন্য যে বিষয়গুলো জরুরী যেমন সাউণ্ড লাইট কস্টিউম ইত্যাদির অনেক উন্নতি ঘটেছে এবং এই প্রক্রিয়া যেহেতু চলমান, তাই বলতে পারি আগামীতে আরও উন্নতি ঘটবে- ঘটানো সম্ভব। যা দ্বারা নাটক আরো সমৃদ্ধ হবে। তেমনি মঞ্চের ব্যাপারে  লক্ষ্যণীয় যে, সারাদেশে অনেক উন্নত মঞ্চ তৈরি হয়েছে। যদিওবা কুড়িগ্রামে সে ধরনের কোনও থিয়েটারবান্ধব মঞ্চ আজও তৈরি হয়নি। 
আর নেগেটিভ কথা বলতে গেলে বলতে হয়, নাটকে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়। বর্তমান বৈষয়িক এই প্রতিযোগিতার যুগে সাধারণত কেউ এই অলাভজনক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় দিতে আগ্রহী হয় না। ফলে একটি নাটক তৈরি করতে গেলে যে শিল্পী ও লোকবল প্রয়োজন তা সচরাচর পাওয়া যায় না। সবাই এখন খুব অল্প সময়ে লাইমলাইটে আসতে চায়। ফলে তারা টেলিভিশনের নাটকের প্রতি বেশি আগ্রহী। বিশেষ করে প্রান্তিক অঞ্চলে এইসব সমস্যা আরও প্রকট। আরেকটি ব্যাপার হলো, টিভিতে যে ধরনের সিরিয়াল প্রচারিত হয়, তা দ্বারা বেশিরভাগ মানুষই সংক্রমিত। যার ফলে মঞ্চনাটকের দর্শকও কমে গেছে। আর তাছাড়া অর্থনৈতিক সমস্যাও প্রকট। একটি নাটকের আয়োজন করতে গেলে যে অর্থনৈতিক সাপোর্ট দরকার তার যোগান দেয়াও অনেক কষ্টকর।
তারপরেও আমি নিরাশ নই। এইসব সঙ্কটের কারণে নাট্য আন্দোলন থেমে যাবে তা মনে করি না। নাট্য আন্দোলন কোনো না কোনো ভাবে, মানুষের দ্বারা সংগঠিত রূপে এগিয়ে যাবেই।

দিব্যক

আপনার সম্পাদিত ‘শব্দপরিব্রাজক’ কি বন্ধ হয়ে গেছে?

জুলকারনাইন স্বপন

না- বন্ধ হয়নি; প্রকাশের ইচ্ছা আছে। আসলে গল্পকে প্রাধান্য দিয়ে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। কুড়িগ্রামে তো গল্পের কোনো পত্রিকা নেই, তাই চেয়েছিলাম ‘শব্দপরিব্রাজক’ একটি গল্পপ্রধান পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হোক। যদিও গল্পের পাশাপাশি কবিতাও প্রকাশ করেছিলাম তবে মূল ঝোঁক ছিলো গল্পের দিকেই। কুড়িগ্রামে মানসম্মত গল্পলেখকের সংখ্যা এতোই কম যে, একটি গল্পের পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক ও মানসম্মত গল্পের অভাবে দু'টি সংখ্যার পর আর প্রকাশ করতে পারিনি। আরেকটি বড় কারণ হলো, পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করতে যে আর্থিক যোগানের প্রয়োজন তা ব্যক্তিগতভাবে সবসময় পুরোপুরি করে ওঠা সম্ভব হয় না। গল্পপ্রধান পত্রিকার অভাব আজও কুড়িগ্রামে রয়েছে। সেজন্যই শব্দপরিব্রাজক আবারও প্রকাশ করার ইচ্ছে আছে।

দিব্যক

একটি কবিতা অথবা গল্প লিখে ফেলার পর আপনার অনুভূতি কেমন হয়?

জুলকারনাইন স্বপন

যে অপার্থিব অনুভুতি আমাকে আলোড়িত করে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যে কোনো শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিল্পী বা লেখকেরই বুঝি এমন অনুভূতি হয় তার নিজের মতো করে। যেটি তিনিই শুধু অনুভব করতে পারেন।

দিব্যক

লেখালেখির ব্যাপারটা আপনার পরিবার কীভাবে গ্রহণ করেছিলো?

জুলকারনাইন স্বপন

অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক। যেহেতু আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন এবং সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন সেই সুবাদে বই পড়া বা লেখার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অনুপ্রেরণা তার থেকে পেয়েছি। তিনি নিজেও অনিয়মিতভাবে প্রবন্ধ লিখতেন। এ বিষয়টিও আমাকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। 

দিব্যক

নতুন যারা লিখছেন তাঁদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

জুলকারনাইন স্বপন

লেখাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করা। এবং বেশি বেশি করে বই পড়া। এর কোনও বিকল্প নেই।

দিব্যক

দিব্যকের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকুন।

জুলকারনাইন স্বপন

তোমাকেও ধন্যবাদ মাইকেল। দিব্যকের পথচলা শুভ হোক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. স্বপন ভাইয়ের সাক্ষাৎকার পড়লাম। ভাল লাগল। অনেক অজানা বিষয় জানা হল। তার কথাগুলো বেশ চিন্তা জাগানিয়া এবং নির্মম হলেও সত্য। যেমন তিনি বলেছেন "কুড়িগ্রামে সে ধরনের কোনও থিয়েটারবান্ধব মঞ্চ আজও তৈরি হয়নি।" আসলেই তো কথা সঠিক। তিনি আন্তরিক বলেই এই মর্মান্তিক কথাটি উচ্চারণ করতে পেরেছেন। তাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই।

    উত্তরমুছুন
  2. স্বপন সাহেবের ভাবনার স্পষ্টতা মুগ্ধ করল। ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন

অস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।