অলসদুপুর।
ঝুলবারান্দায় বসে বিদ্যাসাগর রচনাবলী
পাতার পর পাতা উল্টিয়ে যাচ্ছি, সবটা পড়া হয়নি আগে
অবসরের এ কঠিন সময়েও সাহস হচ্ছে না পূনর্বার পড়বার।
হাতের সিগারেটটায় সুখটানের প্রস্তুতি নিতেই ফোন আসে—
ছাই সমেত খসে পড়া কুন্ডলী থেকে
পরিধেয় বাঁচাতে সটান আমি—
শার্টটা, লুঙ্গীটা
আহ্! তেরো টাকার সিগারেট এখন পনেরো
দশ টাকারটা তেরো— সে-ও দুষ্প্রাপ্য!
চাচাতো ভাইয়ের ফোন; বলি—
চাচা'কে ডাক্তার দেখানোর সুযোগ নেই শহরে
প্রাইভেট প্র্যাক্টিস বন্ধ, ভিজিট দিয়েও
ডাক্তার মিলছে না!
ফোন কেটে দেই। চোখে ভাসে
বৃদ্ধ মানুষটার শ্বাসকষ্ট!
এখন লক্ডাউন
সরকারি হাসপাতালের সম্মুখে দালাল নেই
বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক
বন্ধ সবকিছু।
করোনার লক্ষ্মণগুলো জেনে গেছে মানুষ
সন্দেহজনক রোগীকে নিজ দায়িত্বে তুলে নিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন।
চিকিৎসা শেষে বেঁচে থাকলে ফিরে আসছে
ঘরে — নয়তো বেওয়ারিশ লাশের মতো দাফন অথবা সৎকার!
আত্মীয়-পরিজন কেউ যেতে চাইছে না
পরিজনের সাথে হাসপাতালে,
জানাযায়, কবরস্থান কিংবা শ্মশানে!
জীবন বাজী রেখে দায়িত্ব পালন করছে প্রশাসন, ডাক্তার, নার্স।
একটা রোগ নিয়েই ব্যস্ত সবাই—
কেউ ঠেকাতে, কেউ পালাতে
কেউ বা আখের গোছাতে।
কাজের খোঁজে বের হওয়া কিছু মানুষ
লুঙ্গি তুলে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছে এদিক-সেদিক
করোনা'র বিস্তার রোধে
সামাজিক রক্ষীদের লাঠির তোপে
কেউ বা ত্রান প্রদানের খবরপানে
কাজ পড়ে আছে—কাউকে ডাকছে না কেউ
সত্তর টাকা কেজি মুল্যের চাল দোকানশূন্য
ওএমএস এর দশ টাকা কেজি চালের
দোকানে মধ্যবিত্তের ভীড়,
নিম্নবিত্ত, দিনমজুর উপোস!
ছাত্র-মেসে কাজ করা মাসী
অভুক্ত সন্তান কোলে হাঁটছে ফুটপাথ ধরে
মুখের মাস্ক সরিয়ে শিশুটি তাকিয়ে আছে আকাশপানে—
নিষ্প্রভ আলোহীন
পড়ন্তবেলার চাঁদ
রসুইঘরে উপুড় করে রাখা
মাটির হাড়ির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বারবার।
হকার এলো।
পত্রিকার খবরে নতুন শিরোনাম—
দিনমজুর হতদরিদ্রের ত্রানের চাল পুকুরে,
কোথাওবা ঘরের মেঝের গুপ্তগুহায়
সয়াবিন তেল বক্সখাটের বক্সে
প্রবাসী স্বামীকে ঘরবন্দী করে
পুলিশে খবর দিয়েছে স্ত্রী।
অসুস্থ মাকে
পথে ফেলে রেখে গেছে তার সন্তান!
চাকরি হারানোর হুমকিতে
পায়ে হেঁটে ঢাকামুখী হাজারো গার্মেন্টস শ্রমিক
করোনা আক্রান্ত হয়ে জনগণের ডাক্তারের মৃত্যু
করোনা আক্রান্ত একজন পুলিশের আহাজারি—
"আমার কিছু হলে দয়া করে আমার সন্তানকে
কেউ অবহেলা করবেন না!"
রাতের পথঘাট এখন জনমানবহীন
বড়বাজারের লাইলী গলির মুখে
উঁকি মারছে ভরদুপুরে। ফ্যাকাসে মুখ
রিজার্ভ রিকশাটা নেই, পানের রস
চুঁইয়ে পড়ছে না চিবুকে
খদ্দেরের সাথে বাক-বিতন্ডার
কোন ভাবলেশ নেই চোখে মুখে।
আলাপ জমাতে, কৌতুহলে
সার্টার ফেলা দোকানীর কাছে জানতে চায় সে—
"কোথায় নাকি দুইজন হিজড়া আর একজন
ফকির ত্রান বিতরণ করছে — ফেসবুকে দিছে!"
দোকানীর চাপা চিৎকার ভেসে আসে
"আজাইরা প্যাঁচাল— চুপ!"
ভ্যাবাচ্যাকা লায়লীর করুণ মিনতি ভেসে আসে—
"একটা পান খাওয়াবি ভাই
কাজ হলে দিয়ে দিবো..."
বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কঠিন রচনাশৈলী থেকে চোখ তুলে
তাকিয়ে থাকি অনিশ্চিত আগামীর বিরানপথে—
জীবনশৈলী আরও কঠিন।
জীবনের এখন সামন্ত সময়
অজানা আশঙ্কায় অবরুদ্ধ আর
অসহায় দু'চোখ ঝাপসা হতে থাকে,
দু'চোখের পাতা ভিজে যায়। টুপ করে
একফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে বইয়ের পাতায়
অশ্রুফোটায় স্পষ্ট ফুলে ভেসে ওঠে
মানুষ।
আহা! মানুষ কত অসহায়!
1 মন্তব্যসমূহ
যিনি বিদ্যাসাগর সম্পূর্ণ পড়েননি, তার পাঠের মান নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়৷ তার রচনা যে রচনামাত্র, সেকথা বলাই বাহুল্য৷
উত্তরমুছুনঅস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।