....

মহাশ্বেতা : প্রান্তিক গণ-মানুষের দেবী | তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী



পিতৃপ্রদত্ত নাম তার মহাশ্বেতা ভট্টাচার্য। জন্মেছিলেন এক বনেদী সচ্চল পরিবারে। কিন্তু নিজের ভেতরের তাড়নায়  তিনি সবকিছুকে ছুঁড়ে হয়েছিলেন প্রান্তজনের মা,  রাষ্ট্র ও সমাজ পীড়নে বিধ্বস্হ হতভাগ্য অন্ত্যজ গণ-মানুষের আপনজন "মারাংদাই" (বড়দি), নমস্য দেবী। তিনি বলতেন, "প্রত্যেক মানুষের উচিত কর্মময়তার মধ্যে থাকা। মানুষের জন্য যে কিছু করে না, সে খুব ছোট হয়ে যায়। শুধু নিজের জন্য বাঁচার কোন মানে হয় না"। অভিজাত বংশজাত ও উঁচু মাপের সাহিত্যিক হয়েও অনাড়ম্বর ও বাহুল্যবর্জিত জীবনাচারে অভ্যস্হ মহাশ্বেতা সহজেই মিশে যেতে পারতেন আদিবাসী সমাজের প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষের সাথে এবং তাদের সাথে কাটাতেন দিনের পর দিন। সত্তর দশকে সারা ভারতবর্ষ বিশেষত পশ্চিম বাংলা যখন রাষ্ট্রীয় দমন- পীড়ন ও নকশাল আন্দোলনে উথাল, তখন তিনি নিপীড়িত প্রান্তিক গণ- মানুষের সমাজ বদলের লড়াইয়ে ক্যাথারসিসের মতো জেগে উঠলেন। তিনি বিরসা মুন্ডা, চোট্রি মুন্ডা, তিলকা মাঝি, সিধু, কানু মূর্মূ, হরিরাম মাহাতো, দ্রৌপদী, বসাই টুডু, সুরজ গাগরাইয়ের মতো অনেক ব্রাত্য- দলিত মানুষের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, জীবন সংগ্রামকে উচ্চকিত করে মুন্ডা বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, নকশাল বাড়ি আন্দোলন, ওরাওঁ- লোধা- শবর- দিখারো- কুর্মি -ভাঙ্গারিয়াসহ নিম্নবর্গের অনেক জনজাতিকে তার লেখনীতে যুক্ত করে সাহিত্যের ভূমিকে করেছেন সমৃদ্ধ- উর্বর; যা নিপীড়িত, বঞ্চিত প্রান্তিক জনের যাপনচিত্র, সাক্ষ্য ও দলিল হয়ে তাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে রইল। প্রান্তিক মানুষের স্বর, তাদের সংগ্রামের বিস্তৃত ইতিহাস উপন্যান -গল্পে তুলে ধরে তিনি মহাশ্বেতা ভট্রাচার্য থেকে হয়ে যান অন্ত্যজ প্রান্তিক গণ- মানুষের নন্দিত দেবী --- মহাশ্বেতা দেবী।

মহাশ্বেতা দেবীর জন্ম ১৯২৬ সালের ১৪ জানুয়ারী পূর্ববঙ্গে তৎকালীন পাবনা জেলার ভারেংগা গ্রামে। লেখাপড়ার প্রাথমিক পাঠ নেন ঢাকার ইডেন স্কুলের মন্তেসারিতে। দেশভাগের পর ঘটক পরিবারের সাথে তিনি চলে যান ভারতে। মুশির্দাবাদের বহরমপুরে শুরু করেন বসবাস। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্হান বদল করে  তিনি স্হিত হন কোলকাতায়, বালিগঞ্জে।  বিশ্বভারতী ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্সসহ এম.এ. ডিগ্রীধারী এ কথাসাহিত্যিকের লেখালেখির শুরু বেশ পরিণত বয়সেই। দিনের পর দিন নানা আর্থিক ও পারিবারিক টানাপোড়েনের মধ্যে টিউশনি, কাপড় কাঁচা সাবান বিক্রী, সরকারের পোষ্ট এণ্ড টেলিগ্রাফ দপ্তরে চাকরী, কলেজে অধ্যাপনা ইত্যাদি নানা ধরনের কাজ করলেও তিনি খেয়াল করলেন লেখালেখির ক্ষেত্রেই তিনি বেশী স্বচ্ছ্যন্দবোধ করেন। সঙ্গত কারণেই তিনি নিরলস সাধনা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে লেখালেখির দিকে ঝুঁকে পড়েন, যা তাকে একজন সর্বজনবিদিত ও বহুচর্চিত কথাসাহিত্যিক বানিয়েছে। তার ক্ষেত্রে জীবন ও সাহিত্যের হাত ধরাধরি এমন নিবিড় যে, এ দুটিকে এক সঙ্গে মেলাতে পারার মুন্সিয়ানার মাঝেই নিহিত রয়েছে তার মহাশ্বেতা দেবী হয়ে ওঠার ম্যাজিক।

মহাশ্বেতার  প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় "দেশ" পত্রিকায় ,  সম্পাদক সাগরময় ঘোষের উৎসাহে। তিনি তখন শান্তি নিকেতনে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। এ পর্যায়ে "পদ্মিনী" ও "যশোবন্তী" নামে তার দুটি গল্প প্রকাশিত হলেও তখনো লেখক হওয়ার কোন তাগিদ তার মধ্যে ছিল না। পরবর্তীতে বোম্বেতে বড় মামা শচীন চৌধুরীর বাড়িতে বি.ডি. সাভারকারের "1957" বইটা পড়ে অনুপ্রাণিত হন ইতিহাস চেতনানির্ভর কিছু লিখতে এবং এ থেকেই " ঝাঁসির রাণী" নিয়ে ভিন্নধারার একটি উপন্যাস লিখার সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজের শিশুপুত্র বিজনকে বাবার কাছে ফেলে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহের লক্ষে ক্যামেরা হাতে ছুটে যান রাণীর বংশধরদের কাছে আগ্রার ঝাঁসী। সেই থেকে তার শুরু। কিন্তু এতে তার মন ভরল না। তার সমসাময়িককালে অন্যরা যখন মধ্যবিত্ত জীবন নিয়ে লিখে পাঠকের মন জয়ে ব্যস্ত, তখন তিনি ভিন্ন পথে পা বাড়ান। তিনি অন্তজ্য, প্রান্তিক মানুষ ও তাদের নারীর প্রতি বৈষম্য, অবমাননা, অত্যাচারের কাহিনি, তাদের জীবনাচার নিয়ে একের পর এক লিখতে থাকেন গল্প- উপন্যাস। অবশ্য তারাশঙ্কর রন্দোপাধ্যায়ের "হাঁসুলী বাঁকের উপকথা",  "অরণ্য বহ্নি ( ১৯৬৬)", সতীনাথ ভাদুরীর "ঢোঁড়াইচরিত মানস", বিভুতিভুষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের "আরণ্যক ( ১৯৩৯)" কিংবা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়-- অমিয়ভুষণ মজুমদারের লেখায়ও  এসেছে নিম্নবর্গের প্রান্তিকজন। কিন্তু তারা জীবনের আরো নানা বিষয় নিয়ে লেখার মধ্যেই লিখে ছিলেন এই  নিম্নবর্গের কাহিনি। এক্ষেক্রে মহাশ্বেতা দেবীর লেখার সবটাই জুড়ে আছে সমাজের প্রান্তিক গণ-মানুষ। তিনি তাদের চেতনা, বিশ্বাস, সংস্কার,  প্রথা, আচার- আচরণ--- সবকিছুকে নিয়ে একেবারে শিকড়ে গিয়ে তাদের হয়ে কথা বলেছেন।

মহাশ্বেতা গল্প - উপন্যাস লিখেন এন্তার। তার উপন্যাস -গল্প শুধু কাহিনি নয়, এ যেন প্রান্তিক গণ- মানুষের স্বর। ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত তার উপন্যাস "আঁধার মানিক  বাংলাদেশে বর্গি আক্রমণের করুণ কাহিনি, সাধারণ মানুষের কঠোর জীবন যাপনের রুক্ষ কঠিন দিনলিপি। ১৯৬৭ সালে বেরোয় তার "কবি বন্দ্যঘর্টী গাঞ্চির জীবন ও মৃত্যু" —এতে মধ্য যুগের রাঢ় বাংলার বিশেষত মেদিনীপুরের আঞ্চলিক ইতিহাস ও লোককথার পটভূমিতে আরণ্যক এক যুবকের কবি খ্যাতির আকাঙ্কা ও তার নিমর্ম পরিণতির  কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে; যিনি নিজের জাতির ও জাতকর্মের বিরুদ্ধে অবস্হান নিয়ে প্রচলিত বর্ণশাসিত সমাজব্যবস্হা ও সামাজিক  রীতিনীতিতে আঘাত হেনেছিলেন। ফলতঃ রাজা গর্গবল্লব এই চুয়াড় যুবক বন্দ্যঘটীকে হাতির পায়ের তলে পিষে মারার নির্দেশ দেন। মহাশ্বেতা এমনভাবে এই ট্রাজেডী লিখেন; তা পাঠকের মনে শুধু করুণা নয়, জন্ম দেয় ধুমায়িত ক্রোধেরও। ১৯৬৯ সালের দিকে যখন বঞ্চিত সর্বহারাদের নকশাল আন্দোলনে হত্যা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তখনই তিনি এক সন্তানহারা মায়ের উপলব্ধি নিয়ে "হাজার চুরাশির মা"  উপন্যাসটি লিখেন। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি একটি লাশকে কেন্দ্র করে লিখিত। এক বিপ্লবী সন্তানের মৃতদেহের পরিচয় দিতে কাউকেই দহন সময়ে যখন পাওয়া গেল না, এমনকি আত্নীয়-স্বজনও নয়, তখন হাজার চুরাশি নম্বর লাশটির মা হয়ে একজন মর্গের দরজায় অপেক্ষা করছিলেন, তিনি মা। সিনেমা পত্রিকা 'প্রসাদ' এর শারদ সংখ্যায় এটা প্রথম বেরিয়েছিল। লেখাটি র্রেডিক্যাল রাজনীতির সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করেছিল। চলচ্চিত্র নির্মাতা গোবিন্দ নিহালনী এটিকে নিয়ে সিনেমা বানান। অভিনেত্রী জয়া বচ্চন ছিলেন এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে। ১৯৭৭ সালে মহাশ্বেতা লিখেন "অরণ্যের অধিকার" উপন্যাস। অরণ্য রক্ষা ও  বৃটিশ ঔপনিবেশিক যুগের শোষণ- বঞ্চণার বিরুদ্ধে   নিম্নবর্গীয় মুণ্ডাদের অধিকারবোধ নিয়ে বিরসা মুন্ডার অভ্যুত্থান ও বিদ্রোহ এই উপন্যাসের উপজীব্য। এই গ্রন্থটির জন্য মহাশ্বেতা ১৯৭৯ সালে পান সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার। ১৯৮০ সালে বেরোয় তার গ্রন্থ "চোট্রিমুন্ডা ও তার কীর"। এতে তীরের প্রতীকে মুন্ডাদের ইতিহাস, কিংবদন্তি, প্রতিবাদ আন্দোলনকে উচ্চকিত করা হয়, যা প্রকারান্তরে তাদের হারিয়ে যেতে বসা' মুখফেরতা ইতিহাসের পাঠকৃতি' হয়ে সাহিত্যে স্থান করে নেয়। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয় তার "বিরসা মুন্ডা" উপন্যাস। এ উপন্যাসটি তিনি বিরসার সন্তানদের উৎসর্গ  করেন। এই উপন্যাসে মহাশ্বেতা লিখেন, "বিরসা আজ শুধু মুন্ডাদের নয়, সব দেশপ্রেমিক মানুষকে প্রেরণা দেয়,  তাই উলগুলান সার্থক। আদিবাসী অঞ্চলের শোষিত মানুষের জন্য যে লড়ে, সে উলগুলানের কাজকেই এগিয়ে নিয়ে যায়"। বিরসা মুন্ডা বিনা বিচারে মারা গেলেও তিনি মুন্ডাদের কাছে ভগবান তুল্য। তার ভস্মীভুত ছাই অর্ঘ্যবেদীর জন্য মূল্যবান হয়ে ওঠে। ১৯৯০ সালে বেরোয়  "টেরোড্যাকটিল, পূরণ সহায় ও পিরথা" উপন্যাস। এতে বিশ্বায়নের আগ্রাসী ভূমিকা কিভাবে নিচুবর্ণের জনজাতিকে বিপন্ন করে তুলেছে তা তিনি তুলে ধরেন। এতে পূরণ সহায়ের অনুতাপ, "অজানিত অনাবিস্কৃত রেখেই এক মহাদেশকে ( জনপদ) আমরা বিনষ্ট করলাম। আদিবাসী চায় মানুষের স্বীকৃতি,  সম্মান, কেননা সে প্রাচীন সভ্যতার সন্তান"। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয় তার "ব্যাধখণ্ড" উপন্যাস। এতে আদিবাসীদের জীবনে নগরায়নের আগ্রাসনকে তুলে ধরা হয়।


উপন্যাসের পাশাপাশি তার গল্পগুলোও বিস্ফোরক। প্রান্তিক লড়াকু মানব-মানবীর ফিনিক্স পাখির মতো ভস্ম থেকে জেগে ওঠার মন্ত্র। তার দ্রৌপদী, চোলি কা পিছে,  স্তনদায়িনী, ভাত, বাঁয়েন, সাজ সকালের মা, জাহ্নবী মা,  রুদালী, জগমোহনের মৃত্যু, হারুন সালেমের মাসি  ইত্যাদি গল্প নয়, যেন এক একটা জীবন। "দ্রৌপদী" গল্পে জংলী মেয়ে দ্রৌপদী মেঝেন বার বার ধর্ষিত হতে হতে  যখন ক্ষতবিক্ষত নগ্ন শরীর নিয়ে রুখে দাঁড়ায় আর  নিজের শরীরি অপমান, নগ্নতাকে গ্রাহ্য না করে চুড়ান্ত প্রতিবাদের ভাষায় রাষ্ট্রের প্রতিভু সেনানায়ককে ঘৃণার বারুদমাখা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, "কাপড় কী হবে, কাপড়?  লেংটা করতে পারিস, কাপড় পরাবি কেমন করে? মরদ তুই? ..........হেথা কেউ পুরুষ নেই যে লাজ করব।  কাপড় মোরে পরাতে দিব না। আর কি করবি?" তখন নির্যাতিতের স্বপক্ষে বিপন্ন মানবতা কাঁদে। "স্তনদায়িনী" এক পেশাদারী মায়ের গল্প, যে পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য তার স্তন বিকায়। দারিদ্র কিভাবে এক নারীকে তার মাতৃত্বকে পুঁজি করতে বাধ্য করল, তা এতে প্রতিভাত। গল্পের যশোদা রুগ্ন স্বামী - সন্তানদের মুখে অন্ন তুলে দিতে যখন বার বার গর্ভধারণ করে, তখন কি কোন মানবিকবোধ সম্পন্ন মানুষ স্থির থাকতে পারে?  স্তন্যদায়িনীরা তখন অত্যাচারিত - ধর্ষিত হয়েও শক্তিমন্ত্র। তার গল্পের দ্রৌপদী, যশি, শনিচরী, গৌরবী, রুদালী নারী; কিন্তু তারা প্রান্তিকজন।

মহাশ্বেতা গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাট দশকের দিকেই  বাংলা সাহিত্যে নিজের আসন তৈরী করে নেন। অবশ্য তার বিপুল লেখার সবগুলোই যে নিখুঁত - মানোত্তীর্ণ তা কিন্তু নয়। তারও কিছু দুর্বল লেখা আছে, যা সব সাহিত্যিকের ক্ষেত্রেই কম- বেশী প্রযোয্য। তবে তার লেখার ব্যাপারে তিনি নিজেই বলেছেন,  " উপন্যাস লিখে যাকে সংসার চালাতে হয়, তার সব লেখার গুণ সমান থাকে না। বড্ড বেশী লিখতে হয় যে"। তবে তিনি যে  অনেক মানোত্তীর্ণ উপন্যাস- গল্প লিখেছেন তা স্বীকার করতেই হয়, যা একদিন কালোত্তীর্ণ হয়ে ইতিহাসে স্থান করে নেবে।

সত্তর থেকে নব্বই দশকের মধ্যভাগ —এই ২৫ বছর মহাশ্বেতার লেখালেখির স্বর্ণযুগ। মহাশ্বেতার (১৯২৬-২০১৬) ৯০ বছর বয়সকালের সচল ছয় দশকের লেখক জীবনে তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় তিন'শ,  যার অধিকাংশই গল্প- উপন্যাস। ইতোমধ্যেই ২০ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে তার রচনাবলী। আরো ১০ খণ্ডেের  কাজ চলছে। তার সৃষ্টিশীলতার জন্য তিনি যেমন প্রান্তিক মানুষের কাছে নমস্য দেবী হিসেবে ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন, তেমনি তিনি পেয়েছেন নানা সম্মাননাও। তিনি  ১৯৭৯ সালে সাহিত্য অকাডেমী, ১৯৮৫ সালে পদ্মশ্রী,  ১৯৯৬ সালে জ্ঞানপীঠ, ১৯৯৭ সালে ম্যাগসেসে, ১৯৯৯ সালে দেশিকোত্তম, ২০০৬ সালে পদ্মবিভূষণ, ২০০৭ সালে সার্ক সাহিত্য পুরস্কার, ২০১০ সালে যশোবন্ত রাও চওহান জাতীয় পুরস্কার, ২০১১ সালে বঙ্গবিভুষণ,  ২০১২ সালে সাহিত্য ব্রহ্ম পুরস্কারসহ জীবনে অনেক পুরস্কার পান। এসব পুরস্কারের অধিকাংশের অর্থ তিনি তুলে দিয়েছেন সমাজের প্রান্তিক মানুষ আদিবাসীর  উন্নয়নে।

প্রান্তিক ও নিপীড়িত মানুষের জীবনগাথার স্রষ্টা মহাশ্বেতা উপন্যাসের মাধ্যমে নিম্নবর্গের প্রান্তিক মানুষের বিকল্প ইতিহাস লিখেছেন, রচনা করেছেন মুখফেরতা ইতিহাসে পাঠকৃতি। তিনি যেভাবে সহজ সাবলীল ভঙ্গিতে,  মর্মস্পর্শী ভাষায় আদিবাসী ও প্রান্তিক গণ- মানুষের  জীবনধারা, চিন্তা- চেতনা, বাস্তব জীবনের আখ্যান  কল্পনার মিশেলে তার লেখনীতে তুলে এনেছেন, তা অতুলনীয়। তিনি হয়তো নিজেকে তাদের আপনজন ভাবতেন বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। তিনি তো নিজেই বলেছেন, "সাহিত্যচর্চা আমার কাছে কিছু নিরন্তর সুখপ্রদ ব্যাপার নয়। যন্ত্রণার - বেদনার- প্রশ্নের - আর্তির। আমার সম্পর্কে আমারই আরোপিত এই প্যাটার্নটিই চূড়ান্ত ও শেষ থাকুক এ যাত্রায়। এ থেকে আমি মুক্তি চাই না"।  মহাশ্বেতা আসলে আমাদের সাহিত্য ভুবনে এক বিরল প্রজন্মের কথাসাহিত্যিক। প্রান্তিক গণ- মানুষের নমস্য দেবী। তার কোন পূর্বসূরী নেই, হবে না উত্তরসূরীও।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ