১.
'ঋতব্রত'র প্রিয় কবিতারা' নামে এই-যা হাবিজাবি লিখছি, তা কে কিভাবে নিচ্ছেন জানি না। তবে আমার কাছে ভালোই লাগছে। যদিও লিখতে গিয়ে মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হচ্ছি, মনে হচ্ছে ধুর এসব আজুরে, ভ্যাজালে গদ্যের প্যাঁচাল লিখে শুধুশুধু সময় পার করছি। কিন্তু লেখাটি একেবারে শেষ করে যখন পড়ছি তখন বিষয়টি দারুণ উপভোগ্য হয়ে ওঠছে।
আদতে আমি গদ্যে অতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না, যতটা স্বাচছন্দ বোধ করি কবিতায় ও আঁকায়। যদিও অনেকেই বলে থাকেন গদ্য লেখাটা এমন কিছু কঠিন কাজ নয়, একটু পরিশ্রম করলেই গদ্য লেখা যায়। যাক সেসব কথা!
এই 'ঋতব্রত'র প্রিয় কবিতারা'য় এবারও প্রিয় কবি ও কবিতা নিয়েই লিখবো তবে তার সাথে একটু ভিন্ন ও ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতাও শেয়ার করব।
২.
তখন ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়, হুট করে আমার আর এলিনার তুমুল প্রেম ভেঙ্গে গেল। আরসব সাধারণ প্রেম যে কারণে ভাঙ্গে আরকি সেরকমই;— অই কিছুটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা মানুষ যে বহুগামী (এই তথ্য ভুল মনে করে নব্য প্রেমিক-প্রেমিকারা) এসব কারণেই। যাক সেসব কথা না বলাই শ্রেয়।
পুরুষের ক্ষেত্রে ব্রেকআপের পর প্রথম কয়েক দিন খুব ভালো লাগে। তারপর যত অশান্তি— প্রেমের সুখময় সময়, প্রেমিকার চলন-বলন-ভাব-ভঙ্গি-শারীরিক বিষয়াদি ইত্যাদি সমস্ত কিছু মগজের ভেতর পাক খেতে থাকে আর উনুনের তাপে ফুটন্ত জলের মতো টগবগ করতে থাকে।
আমার নিজের ক্ষেত্রেও এমনই ঘটেছে। মোবাইলে এলিনার কিছু ছবি ছিল— একদিন সেসব প্রিন্ট করে, ছিঁড়ে কুটিকুটি করে, দিয়াশলাই দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। তাতেও কি মন হাল্কা হয়েছিল? যাক সেসব যত্তসব পাগলামো ব্যাপার-স্যাপার। তবে মজার ব্যাপার হলো এই যে প্রেমে ব্যার্থতা, উপহার নষ্ট করা, ছবি-টবি পুড়িয়ে ফেলা ইত্যাদি সমস্ত বেদনা নিয়ে সেসময় লেখা হয়েছিল 'ছবি পোড়ানো' নামে একটি কবিতা।
ছবি পােড়ানাে
—এই যে ভাই শুনুন,
দেখছেন তাে ছবিটা কত সুন্দর!
কত সুন্দর ঠোঁটের হাসি ।
ফর্সা দেহের রঙ, যেনা সত্যিকারের অপ্সরা।
এই ছবিটা প্রিন্ট করে দেনতাে?
—হমম... আসলেই তাে
সত্যিকারের হুর যেন
এই পৃথিবীতে এসেছে।
এই নিন প্রিন্ট।
—মু! হা! হা! হা...
—আরে ভাই এত সুন্দর ছবিটা ছিঁড়ছেন কেন?
আরে আরে আগুন ধরালেন যে ?
—আরও কয়েকটা ছবি প্রিন্ট করেন,
আমি কিছু দিয়াশলাই নিয়ে আসি।
তারপর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে লিটলম্যাগ 'উত্তরা এক্সপ্রেস' এর দ্বিতীয় সংখ্যায় আমার একগুচ্ছ কবিতার সাথে এই কবিতাটিও ছাপা হলো। ছাপার পর কবিতাটি সম্পর্কে অনেকের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা বাক্য, নিজের ভাললাগা, আবেগ ইত্যাদি সব মিলিয়ে ভাবলাম কখনও বই করলে কবিতাটি বইয়ে রাখবো।
৩.
তারপর এই কবিতা প্রকাশের প্রায় মাস-ছয়েক পরের কথা। হঠাৎ একদিন আড্ডায় শাবাব ভাই(কাজী শোয়েব শাবাব) অথবা সমতোষদা(সমতোষ রায়) আমাকে বললেন,— 'ছবি পোড়ানো' নামে তোমার যে কবিতাটি ছাপা হলো, এর সাথে অনেকাংশে মিল আছে এরকম একটি কবিতা পড়লাম কবি ওমর আলীর।
একদিন একটি লোক
একদিন একটি লোক এসে বললো ‘পারো?’
বললাম, ‘কি?’
একটি নারীর ছবি এঁকে দিতে, ‘সে বললো আরো।’
‘সে আকৃতি
অদ্ভুত সুন্দরী, দৃপ্ত, নিষ্ঠুর ভঙ্গিতে—
পেতে চাই নিখুঁত ছবিতে।’
‘কেন?’ আমি বললাম শুনে।
সে বললো, ‘আমি সেটা পোড়াবো আগুনে।’'
কবিতাটি পড়ে আমি অবাক! এ কিভাবে সম্ভব? এই কবিতার থিম আর আমার লেখার থিম প্রায় হুবুহু একই।
৫.
পরে আরও কিছু কবিতা পড়ে ওমর আলীর কবিতার প্রতি ভালোলাগা আরও বাড়তে থাকে। শেষে তাঁর কবিতা সমগ্র পেয়ে যাই। আর সমগ্র পড়ে ঋতব্রতর প্রিয় কবিতাদের ভেতর ওমর আলীর আরও কিছু দারুণ কবিতা যুক্ত হয়ে যায়। সেসব নিয়ে পরে কখনও লেখা যাবে।
শেষ কথা: যদিও আমি 'ছবি পোড়ানো' কবিতাটিকে বাতিল ঘোষণা করেছি। কিন্তু প্রকৃত সত্য এ-ই, মনে এখনও কবিতাটির রেশ থেকে গেছে; যা হয়তো কখনোই— কিছুতেই বাতিল হবে না এখান থেকে।
4 মন্তব্যসমূহ
সাবলীল কথন। ভাল লাগল। যদিও গদ্য না পদ্য পড়লাম কিছুই বুঝলাম না।
উত্তরমুছুনআহা
উত্তরমুছুনএকদিন একটি লোক এসে বললো ‘পারো?’
উত্তরমুছুনবললাম, ‘কি?’
একটি নারীর ছবি এঁকে দিতে, ‘সে বললো আরো।’
‘সে আকৃতি
অদ্ভুত সুন্দরী, দৃপ্ত, নিষ্ঠুর ভঙ্গিতে—
পেতে চাই নিখুঁত ছবিতে।’
‘কেন?’ আমি বললাম শুনে।
সে বললো, ‘আমি সেটা পোড়াবো আগুনে।’'
ভালো লাগে
উত্তরমুছুনঅস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।