....

পাণ্ডুলিপি থেকে : দুঃস্বপ্নের চিরস্থায়ী বাগানে / আহমেদ মওদুদ

 




ছায়া

সহায় সম্পদহীন যুবকের হাত ধরে হেটে যাচ্ছে যুবতীর বিস্মিত ছায়া। তাদের
জীবন থেকে সম্পত্তি উধাও হেতু আনন্দ যাপনে তারা ডুব দিচ্ছে অভিন্ন
সম্পদে।



ইচ্ছে

আমাদের ইচ্ছেগুলো ধুলি হয়ে উড়ে যায়। ফিরে আসে পৌষের শীত হয়ে, শিশিরের কণা
হয়ে হয়ে। কবির চপ্পল হয়ে ইচ্ছে ফিরে আসে। আমাদের ইচ্ছে গুলোই দৃশ্যমান
সকল কিছু।



নামফলক

যে পথ হারায় সে-ই পথিক। যে কূল হারায় সে কি? প্রশ্ন করি নদীকে। নদী তো
উত্তর দেয় না। বলে, দক্ষিণে যাও উত্তরের দেখা পাবে। আমি ভুলপথে পশ্চিমে
চলে যাই। আমার নামে নামফলক লেখা হয় পথে পথে।



ছায়াপাত

পিতৃহত্যার দায়ে পুত্রগণ কারারুদ্ধ। কণ্যাগণ অবাক বিস্ময়ে দেখে নিচ্ছে
মাতৃভূমীর আহাজারী। চারিদিকে শোক। শোকের ত্রিপলে ঢাকা বিরুদ্ধ সমাজ। আজ
এই শোকাঞ্চলের ছায়া মহাবিশ্বে বিস্তৃত হোক।



ছলচিত্র

অতীতের প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক ছবি বানিয়েছেন পরিচালক মহোদয়। খ্যাতিমান
হচ্ছেন আর পুরস্কার নিচ্ছেন বর্তমানের স্বৈরশাসকের হাত থেকে। বর্তমান
নিয়ে চলচিত্র হয় না। ছলচিত্র তৈরি হয় অনেক।



স্মরণ-বিস্মরণ

বৃষ্টি ও বর্ষার কথা ভেবে ছাতা তৈরি হলো। কেনা হলো, বেচা হলো, কিন্তু মেঘ
হলো না। তাতে কী, রোদ হলো যে অনেক! তবুও মেঘের কথাই মনে পড়ে। ঘোর বর্ষায়
কচুপাতা মাথায় এগিয়ে আসা কিশোরিটির কথাই মনে পড়ে। আর যা যা মনে পড়ে ভুলে
থাকতে চাই। বেঁচে থাকতে চাই আগামী বর্ষা অবধি। জানি, বিস্মরণ বেঁচে থাকার
প্রথম শর্ত।



কলকব্জাদের ভীড়ে

আত্মহত্যার জন্য যা দরকার তা হলো সাহস। জীবননাশক দ্রব্যাদির যোগাড়
ভীরুরাই করে দেয় আর তারা প্রস্তুত থাকে বিলাপ ও সৎকারের জন্য। বেঁচে
থাকার জন্য দরকার বিলাপ ও ক্রন্দন। ক্রন্দনরত কলকব্জাদের ভীড়ে বেঁচে থাকি
প্রতিদিন।



দুঃশ্চিন্তার আসর

চিন্তা করার জন্য মাথার কোন অংশটা কাজে লাগে তা শরীরবিদরাই ভালো জানেন।
আমি জানি দুঃশ্চিন্তার কথা যা পুরো মাথাটাই দখলে রাখে।



স্কুল পালানো পাখি

মূর্খরা স্কুলে ভর্তি হয় জ্ঞানীরা স্কুল থেকে পালিয়ে যায়। আমরা পালাতে
গিয়ে বন্দী হলাম। আমাদের শাস্তি হলো শিক্ষকতা। সরকারি কায়দায় পড়ালেখা
শেখাই আর মূর্খদের সনদ প্রদান করি। মূর্খদের পাস করতে দেখে সরকারতো খুশি
হয়ে গেল। আমাদের চাকুরী গেল অখুশিতে। এরপর আমরা মাছ চাষে মনযোগি হই এবং
মাছরাঙাদের শিকার জ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে ভাবি, এরা নিশ্চয় স্কুল পালানো পাখি।



হন্তারক মন আমার

পথে-ঘাটে অনেকের সাথে দেখা হলেও কথা হয় অল্প ক’জনের সাথেই। বাকিরা মৃত
আমার কাছে। আমি তাদের খুন করেছি অনেক আগেই। চাপাতি কিংবা বল্লম দিয়ে নয়,
মনে মনে। ভুলে গেছি তাদের। কাউকে খুন করতে চাইলে তাকে ভুলে যাওয়াই
যথেষ্ট। অর্ন্তজাল না বুনলে অন্তর্জ্বালা বাড়ে না কখনো।



বিষ্মরণের বিষ

দেহভার নিয়ে দূরে চলে গেছ। মনোভার নিয়ে আজো নুয়ে পড়ি, শুয়ে পড়ি ধারাপাত,
ধরার পতন। রতন বোসের কাছে এই অভিযোগ আমি আগেও করেছি, পুড়েছি চাঁদের আলোয়
নিরুত্তাপে, নিরুদের উত্তাপে। আত্মায় হত্যার চাপে রক্তপথ বয়ে গেছে কত।
তবু বেঁচে আছি; বিষ্মরণের বিষ বুকে নিয়ে।



ফাঁদ

যাকে তুমি ঘুম ভেবেছিলে তা ছিল নিরব এক ফাঁদ তোমাকে ধরার। অতপর তুমিও
ঘুমিয়ে পড়লে পাশে অথবা পেতে রাখলে উন্মাদনার ফাঁদ জেগে উঠি আমি। তুমিও
জেগে উঠলে পরস্পরের ফাঁদে পড়ে রক্তে রঙিন হলে দেহ, বুঝতে পারি এই ফাঁদ
পরস্পরের পাতা, পেতে রাখেনি অন্য কেহ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ

  1. ছায়া, ছলচিত্র, নামফলক, স্কুল পালানো পাখি কবিতাগুলো ভাবিয়ে তুলল। সকালটা যেন সার্থক হল আপনার কবিতার ছোঁয়ায়। ধন্যবাদ কবি, ধন্যবাদ সম্পাদক মহোদয়কে।

    উত্তরমুছুন
  2. ছায়া ছাড়া আর কোনটা তেমন পছন্দ হয়নাই৷সরি

    উত্তরমুছুন

অস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।