....

চিল

আল-নোমান
ছবি: সংগৃহীত

আমার চিল হবার কোন ইচ্ছাই ছিল না। উড়বার কোন সাধও না (এখন সব করে)। বাচতে হলে খেতে হবে আর পরিত্রানে চিল। এতটা গেলার পরে- এ জালে কি সুধা আছে ছলে।
বারান্দায় তাকিয়ে রোদ দেখছি। শুকনো রোদ। দুপুরের রোদ বা বোধহীন রোদ। ঘরে একটা সিলিং ফ্যানের ভরে ঝুলে আছে খা'ব। ভাবছি চিল হব কি, হব না?
পারছিনা ভাবনার আকাশে কল্পনাকে টানতে। গাঢ় নীল। সময়টা দশটা বেজে বার মিনিট হতে আর চার মিনিট বাকি। আর তিন মিনিট পর ও

আসবে। তারপর দরজা বন্ধ করে জোরে জোরে অকথ্য ভাষায় কবিতা আবৃতি করবে।
প্রতিদিন যেভাবে ভাবি- আজ যদি ও না আসত তবে সত্যি সত্যি চিল হয়ে যাব। সিলিং ফ্যানটাকে বারংবার ঝামেলায় ফেলতাম না।
ও আমাকে এতটা জ্বালায়, কেন বুঝিনা। এই কষ্ট গুলো আমায় এতটা পোড়ায় কেন তাও বুঝিনা। মাঝে মাঝে রাতে ভাবতে সুযোগ পাই- "ওতো এ রকম ছিলনা !" যখন প্রথম আমাদের বাড়ি পড়াতে এসেছিল কি ভদ্রতাই না ওর মাঝে ভাস্যল ছিল। বাবা তো মাস্টার বাবু........ মাস্টার বাবু বলে অস্থির ছিল। সত্যি বলতে কি ওর চোখ দুটো ক্যামন জানি বুঝি না। প্রথম দিন ভ্রু-কুচকিয়ে আমার পানে তাকিয়ে- বিদ্যার দেবী! স্বরনশক্তি ক্যামন?
আমি লজ্জা পাইনি বটে। তবু ওর কথায় ক্যামন একটা পুলক অনুভব করি। এভাবে চলল।
টেবিলের উত্তর-দক্ষিন দিকে আড়চোখে চাওয়া চাওয়ি।
আমার শ্যামলা বরন পয়ে একদিন আলতো ছোয়া দিয়ে বলেছিল- মিথিলা তোমার হাসিটা বেশ সুন্দর! তোমার চোখ দুটো বেশ।
বুকের ভেতর তখন শিউরে শিউরে ঢেউ দোলায় পুলকে। সবে কলেজে পা দিয়েছি তখন। কোন একদিন কবিতা পড়ার ছুতোয় আমার ডায়রিটা আমার ড্রয়ার থেকে হাতে নিয়ে। পড়ল। সবে মাত্র তখনই ওকে ভাললাগাতে চেষ্টা করলাম।
আর ও পকেট থেকে নীল জেলপেন দিয়ে ডায়রির শেষ পাতায় লিখল-
মিথিলা
তোমার পানে বিলিয়ে- দিল
আমি এখন- নীল(...)
আমাকে যে ভাললাগার জন্য চেষ্টা করছে যদিও আমি আগে বুঝতে পেরেছি। তবু লাইন দুটো একবার ভেবেছি দুষ্টুমির ছড়া তারপর চোখ পড়ল- মিথিলা। ভাবনা হল সিথিল।
তারপর আমার অজান্তেই চিল হবার জন্য তৈরি হবার ছোট্ট ছোট্ট নোংরা কাজগুলো করতেও বাধ্য করল। দুবছর আগের কথা তখন। ওর বয়স চব্বিশ আমার সতের।
তন্দ্রা হাওয়া নয়ন আমার তখন একটা ছোট্ট সুখের আবাসের টানে ছুটলাম (মূলত চিল হতে যাওয়ার পথে...)।পরিক্ষাটা দিলাম। ভাল পাশ করলাম। একদিন আমার ব্যবসায়ী রাগী বাবাকে ওর কথা বললাম। বাবা সায় দিলেন না । খুব রাগ হলেন আমার প্রতি তারপরও আমি ছুটলাম (চিল হবই.....)
একদিন রাতে বাবার জমানো একলাখ টাকা নিয়ে ঘর ছাড়লাম। পালালাম প্রেমিকের হাত ধরে। আমি কি তখন পাগল ছিলাম? না ঘুমের ঘোরে? আমরা চলে এলাম চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায়। তখন চোখ বুজলেই বাবাকে দেখতাম। বাবা কেমন আছ? আমাদের মেনে নিতে পারলে না? আমার সুখটুকু তুমি কি চাওনা বাবা? কয়েকদিন পর আর বাবার কথা মনে পড়েনি।
সারে দশটা বাজলো আজ, তাহলে ও আসবে না। যখন ঢাকাতে আমরা প্রথম এলাম তখন ও আর আমি সারাদিন শুধু বাসায় বসে গল্প করতাম। ওর চাকুরী হবার পর থেকে ও আর আগের মত থাকলো না।
হঠাৎ একদিন আমি লক্ষ করলাম বারান্দায় দাড়িয়ে ও ফোনে কথা বলছে প্রায় এক ঘন্টা ধরে। জিজ্গেস করতেই বলল- খালাতো বোন সিলেট থেকে ফোন করেছে। অবশ্য আগেও ও আমাকে বলেছিল ওর এক খালা থাকে সিলেটে।
তারপর উদ্দেশ্যহীন খোজে ওর মানিব্যাগে একটা মেয়ের ছবি দেখলাম।
:কার ছবিটা?
:আমার একটা খুব ভাল বন্ধুর।
:কোথার বন্ধু? আগে তো বলনি!
:মানে? তোমার কি বন্ধু নেই! তাছারা বন্ধু তো থাকতেই পারে।
:আমার এরকম বন্ধু নেই যে, বিয়ের পর স্বামীর বদলে তার ছবি সাথে নিয়ে ঘুরব।
আমার কথা শুনে সেদিন ও কিছুই বলেনি। অনেকদিন পর বাবাকে টেলিফোন করতে গিয়ে শুনলাম বাবা বেচে নেই।
বাবার সম্পত্তি আমার চাচারা লুট করে নিয়েছে।
এই অবস্থা যখন। তখন আমার একমাত্র বেচে থাকার অবলম্বন তো শামীম। আমার প্রেমিক। আমার স্বামী।
শামীমের ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে লাগলো। হঠাৎ একদিন পশু হয়ে গেল। আমাকে প্রচন্ড মার মারল। আমার অপরাধ ওর ইন্টারন্যাল ব্যাপারে কথা বলেছি।
সেদিন অবাক হয়েছিলাম আমি তো ওর বউ, কিন্তু এ অধিকারটুকু থেকে আমাকে কেন বঞ্চিত করল। এভাবে অনেক মার খেয়েছি আমি। অনেকটা সয়ে গেলাম। কোন কারন ছারাই।
ও যখন চিৎকার করে আমাকে গালি দেয় ওর চোখ দিয়ে পানি বেরোয়। মনে হয় আমাকে নিয়ে বেচারা বড় অসহায়। তাই ভাবছি ওকে মুক্তি দেব। আজ এক্ষুনি।
সোয়া এগারটার দিকে শ্যামলীর চার তলা "ছায়ানীড়" বিল্ডিংটার তিনতলার জানালার কাচ ভেদ করে এক অভিমানী চিলের ছায়া স্বার্থপরের মত বেরিয়ে পড়ে অচিনপুরে।
প্রায় তিন ঘন্টা পরে শামীম আসে । আর তাতে কি! লাশ এখনও ঝুলন্ত।
[ গল্পকার পরিচিতি: আল নোমান জন্মগ্রহন করেন বরিশালে। কবিতা, ছবি আঁকা, গল্প লেখা, এই নিয়েই তার জীবন্। ]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ