....

সাঈদ বিলাস -এর ১২টি কবিতা


দৃশ্য

ঝরে যাওয়া পাতার দুঃখে
বৃক্ষের ক্ষরণ-
শুধুই কী দৃশ্যের অবতরণ!
আমাদের অধোমুখ অবনমন
দৃশ্যের অতিরিক্ত কিছু বলে কী তোমার নয়ন?

ল্যাক্রিমাল গ্লান্ড- আনন্দ অথবা দুঃখের তীব্রতা অথবা অজানা কোনো অনুভবে-
চোখের জল- নোনতা স্বাদ।
এইসব চেয়ে ছিনে তুমি হইতেছ কাতর-
ভালোবেসে তুমি হইতেছ লীন-অনুভুতির ধূসর সংগ্রহশালায়!
তবুও তোমাকে ঘিরে কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়।

বিশুদ্ধ হাওয়ায়-
খেলা চলে জানা-অজানা অসংখ্য অনুভূতির-
দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত-কাশফুল-নীলাকাশ-সাদা বক
কেবলই কী দৃশ্যের অনুভব!

সারি সারি কৃষকের উঠোন বৈঠক
ধানের ভাগ লইয়া ক্যাচাল
জমির মালিকের লাঠিয়াল;
আগুয়ান ক্ষোভে ক্ষয়ে যাওয়া কোটর হইতে ঝরে পড়ে-
-প্রতিবাদ
-শোরগোল
-হৈ-হট্টগোল
এইসবেও তো দৃশ্যের জন্ম হয় অনবরত।

তুমিও কী ভালোবাস ওই উদ্ধত অহংকার!
অধিকার আদায়ের ঝংকার-
নাকি খেলার ছলে কেবলই খেলে যায় আমাদের মাথা।
বিমূর্ত শব্দচয়নে কেবলই দৃশ্য গাঁথা!


সঙ্গম

জীবন ক্ষয়ে ফেলা একটি ট্র্যাক
ইঞ্জিনের মাথাটা মাটিতে গুঁজে দিয়ে বডি রেখেছে ভূমির সাথে তেরচাভাবে
বডির সমান্তরালে একটি রেখা আর ইঞ্জিনের অসমান্তরালে আর একটি রেখা কল্পনা করলে
একটি ট্রাপিজিয়াম তৈরি হয়।
সেই ট্রাপিজিয়ামের গা ঘেষে পরিত্যক্ত আসবাবপত্রের দুঃখে
নীরবে ঝরে পড়ে কিছু পাতা, বৃক্ষের হৃদয় ক্ষরণ করে।
এই সব দৃশ্য গেঁথে নিয়ে খা খা রোদে
একটি ডাহুক হু হু করে ডেকে যায় তার বিগত যৌবনের দুঃখে।
কিছুদূর এগুলে, চিতায় শুয়ে সান বাথরত কুকুরের দেখা মেলে
আচমকা ঘাই মারে কিছু মাছ, শিকারীর চোখ ফাঁকি দিয়ে!
পাশেই সঙ্গমরত একজোড়া কুকুরের শীৎকার শুনে
শিকারী পাখির নির্ভুল নিশানা ভুল হয়ে যায়।
আমারও হিসাব ভুল হতে থাকে-তোমার বুকের দুই পাহাড়ে উঠে
ভুলের মাত্রা বাড়তেই থাকে যতই নিচে নামি-মনে হয় য্যানো খনি
তারপর এক সময় ভুলের নহরে ভাসি
ভাসি আর ডুবি, ডুবি আর ভাসি
এই ভাসা ডোবার খেলায়
সাগর-গিরিপথ-পাহাড়-পর্বত কিংবা অন্তরীক্ষ ঘুরে
এক সময় ফিরে আসি মাটিতে।


নাবিক

তোমার বুকের দিকে
তাকিয়ে দেখি দুই পাহাড়,
অসীম এক শূন্যতা!
মাঝে আমি ক্রুশবিদ্ধ -নাবিক
খাবি খাই অতল সমুদ্রে!

বুকের ভেতর বেদনার
এক জীবন লইয়া
পড়ে থাকি
ভারাক্রান্ত এই শহরে
হাটু থেকে একটু উপরে।

তোমার লাগি জীবন আমার
বেসুরেও সুরাসুর, মধুর!


কবি

১.
কবি-
এই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন বৃক্ষ,
বিস্তৃত এক বন সৃজন করে চলে, প্রাণের স্পন্দনে-!
বয়ে চলে, বয়ে চলে-
বাতাসে রেণু ছড়ায় প্রাণের বিপুল সম্ভাবনায়।

২.
কবি-
ভালোবেসে কিংবা না বেসে
এক পাহাড়সম বেদনা-
এই জগতের সমান বয়সী ভালোবাসায়-
জীবনের সীমাহীন, সীমাহীন ভারত্বের সাক্ষ্য নিয়ে
হেঁটে চলে পৃথিবীর পথে পথে, জীবনের বাঁকে বাঁকে।

৩.
কবি-
ভাঙে, গড়ে
আবার ভাঙে, আবার গড়ে!
এক অনন্ত চক্রাবর্তে-
জীবনের সাথে খেলে যায়-আজীবন।

৪.
কবি-
এক অভিশপ্ত নগরী!
খুঁজে ফেরে অন্তর্গত ঘৃণার এক জমিন-
খুঁড়ে তুলে নেয়, তার ভালোবাসার পবিত্র হেমলক!
পান করে যায় আজীবন-
হৃদয়ের, হৃদয়ের একান্ত তৃষ্ণায়।


ফ্যাসিস্ট বাতাসে মুখ লুকাই গোপনে

বিবিধ যন্ত্রণা
বিবমিষার মতন
তোমার আবছায়া শরীর-
চষে বেড়ায় ব্যর্থ পুরুষ-!

কবি ক্ষয়ে যায় তার ব্যর্থ শব্দের লানতে।

আহাজারি শেষ হলে-দূরে
খোকসার বনে শোনা যায়
আম্মার মিহি সুরের করুণ বিলাপ!
সেই সাথে ভেসে উঠে
আব্বার হাসিহীন রাগত মুখের করুণ রেখাচিত্র।
সেই সুর-সেই মুখ
ভালোবাসায় ঢাকা গোপন রহস্য য্যানো!

কবি ক্ষয়ে যায় তার ব্যর্থ শব্দের লানতে।

আমিও ফিরি কার্যত-
এক রাজনৈতিক লোনলি হাওয়ার মৌসুমে;
ফ্যাসিস্ট বাতাসে মুখ লুকাই গোপনে
তোমার নাভিমূলকে কেন্দ্র করে রচিত বৃত্তে।

অথচ,
কবি ক্ষয়ে যায় তার ব্যর্থ শব্দের লানতে।


রাজনীতি

প্রিয়তমা
মনে রেখ,
তুমিও মানুষ!
দিন শেষে রাজনীতিই
তোমারে চালায়!


আমি বরং তোর বিপরীতেই কথা বলি

ভেবেছিস কী?
আজীবন মুখ বুজে সয়ে যাবো
অন্ধ থেকে-বেদনা কুড়িয়ে বুড়িয়ে যাবো
জীবনের আলো থেকে!

বরং
     দেখেছি
                ও
                   ভেবেছি
                             ভীরুতায়
                   ক্যামন
       ভূলন্ঠিত
হয়ে
      ভেসে
               ভিজে
      যাচ্ছিস
তুই

এক ফ্যাসিস্ট সময়ের কাছে!

তুই বরং তোর অন্তর্বাসটুকুও বেচে দে
মাথা বিকিয়েছিস তো সেই কবেই?
আমি বরং হা হা করি
বকবক করি
ওলট-পালট করি
তোর বিপরীতে কথা বলি!

আমি আমি মিলে আমরা হলেই
তুই নিমেষেই মিলিয়ে যাবি হাওয়ায়।
জানিস তো
মুখ বন্ধ করলেই থেমে যায় না
বাতাসের মুক্ত গতিপথ!

তুই বরং ওমুখো হয়েই থাক
জাবর কাটতে থাক,
আমি দু কদম হেঁটে আসি
বিরুদ্ধ বাতাসের ট্যানেলের মুখে।


জালিম~১

তোমার মুখ ভর্তি হাসি
কিন্তু অন্তর ভর্তি নোংরামো!


জালিম~২

তুমি ভালোবাসার অভিনয় জানো
তাই কাছে টেনে
ছলনা করে পুড়িয়ে মারো!

জালিম~৩

তুমি নাচতে জানো
তাই নাচতে নাচতে
নাচাতে নাচাতে
ঘোমটা খুলে লাথি মারো!


জালিম~৪

তুমি মোহনীয়
ফলে আবেশন জানো
তাই তোমার সঙ্গ বর্জনীয়
কেননা তোমায় ছুঁলে
বিলীন হয়ে যায় আমার অস্তিত্ব!


জালিম~৫

মুখে বলো ভালোবাসো-আমায়
কিন্তু মারা দাও ও লুটিয়ে পড়ো
কোনো লুম্পেনের শরীরে!
ঠিক য্যানো রাষ্ট্রের মতোন
বলে সে সবার
কিন্তু সেবা করে একটা বিশেষ শ্রেণির।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ