....

দ্রোহ ও প্রেমের কবিতা :: হানিফ রাশেদীন

আগুন ও বরফের সংঘাত

আঁচল হতে রক্ত ধুয়ে ফেললেই কি দাগ মুছে যায় 
পৃথিবীর ইতিহাস তো আগুন ও বরফের সংঘাত

কে সর্বপ্রথম কেটে নিয়েছে উড়াল দেয়া পাখির ডানা 
সুন্দরবনের কোন বৃক্ষে প্রথম জেগেছিল জ্যোতি

বিভ্রম সামলে দেখো কোথায় বয়ে যায় স্বচ্ছ বাতাস   
কেউ তো সেতারে ধরে রেখেছে মিলনের সুর 

বসন্তের আলোড়নে একদিন কেঁপে উঠবে বৃক্ষশাখা
একদিন নিশ্চয়ই মানুষ মানুষকে মন দিতে শিখবে


পীড়নের চাদর

বিছিয়ে পীড়নের চাদর মাথার উপর রঙিন ছাতা
কোনো ক্ষত প্রস্ফুটিত হয়ে যেন ভাষা না পায়

মুছে যাচ্ছে নীলপদ্ম, ভোরের শিশির, বকুলের ঘ্রাণ
একটু একটু করে প্রতিদিন সবকিছুতে বেদনার রঙ

বিধ্বস্ত জলের আয়নায় কেঁপে ওঠে সুন্দরের প্রতিমা
স্তিমিত হয়ে আসছে তোমার আমার চোখের জোনাকি


চোখের লণ্ঠন

বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলাম
আসন্ন পূর্ণিমায়
প্রত্যেকের চোখের মণি উপড়ে ফেলা হবে
খেজুর কাঁটায় খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে

চোখের লণ্ঠন জ্বেলে
আমরা তো দেখছিলাম আমাদের ভাইদের
বিন্দু... বিন্দু... রক্ত...
আর সরিয়ে ফেলছিলাম পথের কাঁটা


উপসংহার

কোথাও নেই কোনো চিহ্ন
পাওয়া যায়নি ঘাতকের আঙুলের দাগ
কোথাও নেই নখের আঁচড়
না আছে পাটক্ষেতে কারও পায়ের ছাপ
এমনকি বাতাসে ঘাতকের নিশ্বাস
কোথাও নেই কোনো আলামত
কেউ হল না দোষী সাব্যস্ত
ফিরে দেখল না কেউ, কেউ শুনল না
অসহায় রক্তের আর্তনাদ
অবশেষে পাটক্ষেতে ছোপ ছোপ এই রক্ত
ধুলোয় মিশে হবে নিশ্চিহ্ন?


দৃশ্যপট

টিমটিম করে জ্বলছে প্রদীপ
দিক ভুলে
এদিক-ওদিক চলে যাচ্ছে চাঁদের নৌকো
থমকে আছে নদীর ঢেউ
 
কে জানে
কোন মৌসুমে ফুটেছিল সূর্যমুখী ফুল
কোন ঘরের জানালায় 
সর্বশেষ ঘটেছিল বসন্তের আগমন

নক্ষত্রেরা আশায় আছে-
কখন সরে যাবে বিমর্ষ মেঘের ভেলা


হে মাতৃভূমি

পুষ্পোদ্যানে ফাঁদ পেতে আছে শেয়াল 
আকাশে কাকের বিদঘুটে চিৎকার
ধানক্ষেতে ঘাপটি মেরে আছে ইঁদুর
রাজপথে নিষ্পেষণের চাকা
অলিগলিতে ঘুরছে হায়েনার দল
পাটক্ষেতে তোমার ছিন্নভিন্ন প্রতিবিম্ব

সবুজ উদ্যান রক্তে রঞ্জিত
বসন্তের রঙ রক্তে রঞ্জিত
নদীর স্রোত রক্তে রঞ্জিত
রক্তে রঞ্জিত তোমার অশ্রু

হে মাতৃভূমি,
আঁচল হতে ঝেড়ে ফেলো অশ্রু
বুকের অজস্র ক্ষতচিহ্ন
দুঃখ করো না, তোমার দৃষ্টির আলোয়
ফুটিয়ে তোলো চাঁদ আর সূর্য

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ