....

একরাম আজাদ এর কবিতা | দিব্যক




বিবর্তন
খুব ধীরে সন্তর্পণে
      গুটিয়ে নিচ্ছি নিজের আকাশসীমা
      সংকোচিত করছি ইচ্ছের তেপান্তর
      আর বিশ্বাসের আওতা;
সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে জীবনের সব ছোট্ট গলি আর রাজপথ।
ক্রমান্বয়ে
      হ্রস্ব হচ্ছে দৃষ্টিসীমা
      ক্রমহ্রাসমান ধারায় হৃদয়াবেগ,
      অগোচরে আবদ্ধ হচ্ছি বৃত্তরেখায়
      আর, নিদারুণ অনুভবে পরিণত বিন্দুয়।
স্বার্থান্ধ এ বৃহৎ ধরায়
এভাবে... হয়তো অজান্তেই...
রূপান্তরিত হবো কলুষিত এক স্বার্থপরে!


তৃতীয় চোখ

আজকাল কত সহজেই সব বুঝতে পারি!
     মাজারের পেছন থেকে আসা গাঁজার গন্ধ
     স্যুটপরা কসাইয়ের আশটে ঘ্রাণ
     ই'ন করা পকেটমারের তির্যক চোখ
     বোরখা ঢাকা বেশ্যা
__কাউকেই আমার বুঝতে দেরি হয় না!
     ভরা মজলিসে কোন বক্তা নিখুঁত মিথ্যা বলে যাচ্ছে
     নির্বাচনি ইশতেহারের মতন
     কোন নেতাটি জাতীয় সংগীতও মুখস্থ রাখে না
     কোন মোড়ল সালামের লোভে রাস্তায় বেড়ায়
__আমি অনায়াসেই বুঝতে পারি আজকাল!
            এমনকি
মৃতের মিছিলে দাঁড়িয়ে কোন যুবক দ্বাদশতম প্রেমে পড়ছে
ছত্রিশতম বিয়েবার্ষিকীর উৎফুল্ল মৈথুনে কে প্রাক্তনের মুখ আঁকছে
কোন কিশোরীটি বারবার কিছু বলি বলি করে বলতে পারছে না
অথবা আমার কোন বন্ধুটির প্রেমে তুমি বুঁদ হয়ে আছ, সব
__সব বুঝতে পারি!
তবু তৃতীয় চোখের মতন আমি অদৃশ্য রেখে যাই সমূদয় বৃত্তান্ত


খামোশ

খবরদার, মুখ খুলবেন না!  এক লমহাও না!
ভুলে যাবেন না --এইখানে ঈশ্বরীর একচেটিয়া রাজত্ব।
জানেন তো সবখানে বাতচিত নাজায়েজ
এবং ঈশ্বর বেত্তমিজি পছন্দ করেন না
বরং চেপে যান। চেপে গিয়ে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচতে দিন।
এত চাই চাই কীসের বাপু?
কোন তালুকে এত দাবি?
স্বাধীনতা? কে দিছে আপনারে?
আপনার বাপ যুদ্ধে গেছিল?  দাদায়?
চৌদ্দগোষ্ঠীর কেউ?
নাফরমানি করবেন না।
পারেন তো আনুগত্য বাড়ান, প্রসাদ জুটতে পারে।
কিন্তু... তর্ক নয়! নয় মানে নয়!

*কোটা আন্দোলন নিয়ে ব্যাঙ্গ করে


আর কতকাল

না! এভাবে তো চলতে দেয়া যায় না!
এ কেমন মনুষ্য জীবন লালন করছে ঈশ্বর!
নাকি সেও পাপী --সৃষ্টির মতন?
তারও রয়েছে কি কলুষিত হাত --অলৌকিক ছোরার?
না আদিমতম সৃষ্টিতে পুঁতে দিয়েছে বীর্যের পাপ?
যার ভার বহন করে
      একেকজন 'আরিফ আজাদ'
      একেকজন আইএস
      একেকজন তালেবান
      একেকজন লস্করে তৈয়্যেবা
      একেকজন শিবসেনা?
আর নয়!
এবার উগরে নাও সব ঐশ্বরিক পাপ
পোড়াও সব বিষাক্ত ঠোঁট
উপড়ে ফেলো সব বিষদাঁত!
       হিন্দুর নয়
       মুসলমানের নয়
       শিখের নয়
পৃথিবী হোক কেবল মানুষের!


তবু আশাবাদী

কথা না-রাখা বরুণার প্রতারণা আমায় হতাশ করে না
কেননা নিদাঘ কুয়াশার ও-পাড়েই
আমি দেখি পরম নির্ভরতার বনলতা সেন
তাই আমি আশা রাখি
একদিন ধ্বংসের ধ্বংস হবে
নিটোল হাসি ফুটবে যক্ষ্মারোগীর ধসে-পড়া চোয়ালে
কোমল বর্ষা ধুয়ে দেবে সব ধূলির আস্তরণ
শিশিরকণা জমবে প্রস্ফুটিত গন্ধরাজে
স্বপ্ন রেখে যাই
গাঁজাখোর নেতাটি একদিন ঠিক শেখ মুজিব হবে
নামকরা চাঁদাবাজও বনে যাবে মুহসীন
জনতার দখলে আসবে যত মন্ত্রণালয়
আর খাজনার বদলে হবে আয়করের রেওয়াজ
এবং
একদিন আমি কবি হবো
কালচে অক্ষর রূপ নেবে সোচ্চার মিছিলে
কবিতার নাম হবে গণমাধ্যম, আর
প্রথাভাঙা মানুষগুলো যোগ দেবে আমার কাতারে...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ