....

‘চোখে দেখা পৃথিবীটা আমাকে লিখতে বাধ্য করেছে’ : কবি রাকিবুল হায়দারের সাক্ষাৎকার

কবি রাকিবুল হায়দার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৭ সালে, লক্ষীপুর জেলায়। একাডেমিক পড়াশুনা এসিসিএ পার্ট-টু পর্যন্ত। তারপর আর পড়তে ইচ্ছে করেনি বলে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে ঢাকায় থাকছেন।  'উচ্চারণ', 'সময়ের ছবিঘর', 'এইসব কবিতারা' নামে তিনি কবিতা সংকলন সম্পাদনা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত কবিতার বইগুলো হলো, 'যুক্তি সঙ্গত কারণেই তুমি আমার', 'তুমি আমার শঙ্খ অভিমান', 'আবার কোনো সমুদ্রজন্মে দেখা হবে', 'শূন্যতার আরেক নাম তুমি'। দিব্যক পত্রিকার পক্ষ থেকে আমরা ই-মেইলের মাধ্যমে ৩১ আগস্ট ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সেটি হুবহু প্রকাশ করা হলো। -সম্পাদক

সা ক্ষা  কা 
❑❑


প্রশ্ন
ছোটবেলায় কী হতে চাইতেন? মানে ‘এইম ইন লাইফ’ রচনায় কী লিখেছেন, তা নয়; বরং মনের ভেতরে সুপ্ত বাসনা ছিলো কি কোনো কিছু হবার জন্য?

রাকিবুল হায়দার
শৈশবের চাওয়াটা আকাশের রঙের মতো বদলাতো। কখনো কখনো মুখস্তবিদ্যার সুবিধার্থে বইতে থাকা জীবনের লক্ষ্যগুলোকে নিজের লক্ষ্য বানিয়ে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর তোলার প্রবণতা ছিলো। আবার কখনো কখনো চারপাশের চরিত্রগুলোর উপর নির্ভর করতো জীবনের লক্ষ্যটা। আর দশটা শিশুর মতো ঝালমুড়িওয়ালা, ফুচকাওয়ালা হবার ইচ্ছেটাও হয়তো ছিলো। তবে মনের খুব গহীনে লেখক হবার একটা সুপ্ত ইচ্ছা অবশ্যই ছিলো। নইলে স্কুল ম্যাগাজিনের পাতায় পাতায় কবিতার নামে ছড়া লেখার প্রচেষ্টাটা থাকতো না।

প্রশ্ন
একজন লেখকের ভেতরের ‘মানুষসত্তা’কে কীভাবে ব্যাখ্যা করেন?

রাকিবুল হায়দার
এটার অনেকরকম ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়। তবে আমার কাছে একটা সহজ সরল ব্যাখ্যা আছে। লেখকের ভেতরের মানুষসত্তাকে আমার কেনো যেনো শিশু মনে হয়। এই ভাঙ্গছে, আবার নিজের খেয়াল-খুশিমতো গড়ছে। বেসুরে গাইছে আবার সুর বসিয়ে দারুণ কিছু একটা তৈরি হচ্ছে। লেখকের ভেতরে একটা সহজ-সরল শিশু বসবাস করে। যে খুব খামখেয়ালী।

প্রশ্ন
জন্ম-মৃত্যুর মাঝখানের জীবন সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কী?

রাকিবুল হায়দার
জীবন মৃত্যুর মাঝখানের এই জীবনটাকে আমি উপভোগ করতে চাই। প্রেমে-অপ্রেমে ডুবে থাকতে চাই। মৃত্যুটা আমার ভালো লাগে না। তাই বেঁচে থাকার প্রতিটা মুহূর্ত আমি আমার ইচ্ছেমতো সাজাতে চাই। যদিও সবটা আপনার ইচ্ছেমতো কখনোই হবে না। তবু যতটুকু পারা যায়! আর আমি যতদিন সম্ভব বেঁচে থাকতে চাই।

প্রশ্ন
লেখার ক্ষেত্রে আপনার কোনও প্রেরণার জায়গা আছে কি?

রাকিবুল হায়দার
আমার শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত পড়া বইগুলো, কৈশোরের প্রেম, আমার চোখে দেখা পৃথিবীটা আমাকে লিখতে বাধ্য করেছে। তবে পারিবারিক একটা জায়গা ছিলো আমার। আমার মেজো ভাই প্রচুর কবিতা লিখতেন। তার কবিতাগুলো আমার কবিতা লেখার সাহস অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্রশ্ন
বর্তমানে বাংলা সাহিত্যের আলোচনা-সমালোচনা চর্চা কতটা গঠনমূলক হচ্ছে?

রাকিবুল হায়দার 
আসলে আমরা আলোচনা আর সমালোচনার মধ্যে পার্থক্যটা ধরতে পারি না। কারো প্রশংসা শেষে দুই-একটা কটুকথা বলে সেটাকে সমালোচনা বানিয়ে ফেলার একটা অপচেষ্টা সবার মধ্যেই আছে। তবে আমার মনে হয়, আলোচক-সমালোচক নামের কয়েকটা গোষ্ঠী দাঁড়ানো দরকার। লেখকরা লিখে যাবেন। আর তারা সেই লেখাকে নিয়ে ভাববেন। আমাদের সাহিত্যে লেখককে সব রকমের ভূমিকায় অতি অভিনয় করতে দেখা যায়। এটা ব্যক্তিগতভাবে আমার অপছন্দ। লেখক তার মনের আনন্দে লিখে যাবেন। সাহিত্য নিয়ে জটিল বিশ্লেষণ করতে গেলে, তার চিন্তায় এর বাজে প্রভাব পড়বে। এর জন্য আলাদা একটা শ্রেণী তৈরি হওয়া দরকার।

প্রশ্ন
‘কবিতায় ছন্দ’ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?

রাকিবুল হায়দার
কবিতায় ছন্দ নিয়ে অনেক ধরনের বিতর্ক আছে। অনেকে ছন্দ ছাড়া কবিতাকে কবিতা বলতে নারাজ। আবার অনেকেই ছন্দ একেবারে বাদ দিয়ে লেখেন। তবে কবিতা যেহেতু অনুভূতির একান্ত প্রকাশ, সেখানে ছন্দ নিয়ে ভাবার অবকাশ অনেক কম। আমার মনে হয় সব অনুভূতি কি ছন্দে প্রকাশ করা যায় না, করাও উচিত না। আবার কিছু অনুভূতিতে ছন্দ আপনা-আপনি এসে ভর করে।

প্রশ্ন
ছোটবেলায় কি লেখালিখি করতেন?

রাকিবুল হায়দার
ছড়া, গল্প আর কবিতা। যে বয়সে যখন পা রেখেছি, কবিতা বা গল্পগুলো আমার সে বয়সকে চিত্রায়িত করেছে। 

প্রশ্ন
লিখতে কেমন লাগে?

রাকিবুল হায়দার
মিশ্র অনুভূতি। মাঝে মাঝে দারুণ লাগে। আবার মাঝে মাঝে এ অবৈতনিক চাকরি একেবারে অসহ্য লাগে। পালাতে ইচ্ছে করে। তবে সৃষ্টির আনন্দটা না থাকলে এতোটা পথ আসা হতো না।

প্রশ্ন
আপনি কী ধরনের বই পড়তে পছন্দ করেন?

রাকিবুল হায়দার
সব ধরনের। যখন যা পেয়েছি পড়বার, পড়েছি। ভালো লাগা বা মন্দ লাগা, সেটা অন্য বিষয়। 

প্রশ্ন
এখন কোন বইটা পড়ছেন?

রাকিবুল হায়দার
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘দোজখের ওম’ আর হাসান আজিজুল হকের ‘ফিরে যাই ফিরে আসি’।

প্রশ্ন
আপনি বারবার পড়েন, এমন কবির নাম জানতে চাই।

রাকিবুল হায়দার
জীবনানন্দ দাশ, শহীদ কাদরী, আবুল হাসান আর জয় গোস্বামী।

প্রশ্ন
লেখা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে অন্তর্জালকে কীভাবে দেখছেন?

রাকিবুল হায়দার
অবশ্যই শক্তিশালী মাধ্যম। পাঠক যেখানে যেখানে চোখ রাখেন, লেখা সেইসব স্থানে থাকা উচিত। 

প্রশ্ন
আপনার কি বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক বিশ্বাস আছে?

রাকিবুল হায়দার
আছে। আমি জনগণের অদৃশ্য একটা দলে বিশ্বাস করি। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া প্রবঞ্চনার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়া যায়। আর রাজনৈতিক যে দলগুলো রাষ্ট্র পরিচালনা করে, তারা আমাদের মৌলিক অধিকারই দিতে পারেনি। সেই কারণে তাদের প্রতি ভালোবাসা তৈরিটাও অনেকাংশে কম হয়েছে। তবে কেউ ভালো কাজ করলে ভালো লাগে।


প্রশ্ন
আপনি কি এক বসায় কবিতা লেখেন, না কি বারবার সংশোধন করেন?

রাকিবুল হায়দার
অধিকাংশ সময়ে এক বসায় পুরো অনুভূতিটাকে কবিতা হিসেবে লিখে ফেলা হয়। আর বাকি কবিতাগুলোর সংশোধন বলতে বানান আর একটু-আধটু লাইন বদলে দেয়া, এই তো।

প্রশ্ন
আপনার প্রেমের কবিতাগুলো কি কল্পনাসৃষ্ট না কি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ?

রাকিবুল হায়দার
আমার অধিকাংশ প্রেমের কবিতাই আমার নিজস্ব প্রেমের অনুভূতি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লেখা। আর বাকিগুলো অন্যের প্রেমের গল্প শুনে লেখা অথবা কল্পনাসৃষ্ট।

প্রশ্ন
আপনি দিনের কোন সময়টাতে লিখতে পছন্দ করেন? কোনো রুটিন আছে কি এ ব্যাপারে?

রাকিবুল হায়দার
আমার কবিতাগুলোর অধিকাংশই রাতের শেষভাগে লেখা। এটা অনেকটা অবচেতনভাবে অভ্যাস হয়ে গেছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. রাকিব ভাই, আরেকটু খোলামেলা কথা হইলে আর ভাল লাগতো। তবে খারাপ অয় নাই।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আগামীতে আরও সুন্দর করে উত্তর দেবার চেষ্টা থাকবে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

      মুছুন

অস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।