....

আরিফুল হাসান -এর একগুচ্ছ কবিতা


কত দূরে যাবে

যতোই নির্জনে যাও
কিছু কিছু বিষয় থেকে যায় তোমার
যেমন তোমার হাত দু'টো-
রসদ সংগ্রহ ও অশ্রু মোছা ছাড়াও
যাদের কাজ থাকে।
তোমার দু'টো পায়ের কথা ভাবো
যারা শুধু হাঁটেই না বা
ভর দিয়ে শুধু দাঁড়ায়ই না
এছাড়াও যাদের আরো কাজ আছে।
তুমি তোমার চোখের কথা ভাবতে পারো
ভাবছো শুধু দেখাই হলো এদের ক্রিয়া
না, এছাড়াও অন্য অনেক ক্রিয়া আছে।
তোমার কান দু'টোর কথা ভাবো,
এরা শুধু শুনে অথবা বধিরই হয় না
আরও অনেক ক্রিয়াদি সম্পন্ন করে তারা
তোমার মুখের দিকে তাকাও-
এটি শুধু খেতে বা বলতে আসেনি
আরও কিছু কাজ রয়েছে তার।
তোমার মস্তিষ্কের কথা ভাবো-
সেখানে শুধুই জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ভার নয়
আরও কিছু সংরক্ষিত আছে, সেখানে।
তোমার হৃদয়ের কথা ভাবো,
সে শুধু ভালোবাসে বা রক্ত সঞ্চালন করে
এমন না
আরও কিছু কাজ আছে তার।
তোমার কলবের কথা ভাবো,
সে শুধু অচিন, একা নয়
আরও কিছু আত্মীয় আছে তার


তুমি ভুল বুঝতেই পারো

তুমি ভুল বুঝতেই পারো
এবং সত্যি বলছি-- তুমি ভুল বুঝতেই পারো

আমাকে আমার স্বত্ত্বা কাটে ভেংচি। তুমি কানামাছি খেলো
আমি সত্যি বলছি-- তুমি ভুল বুঝতেই পারো।

নিঝুম রাতের অবগাহনে কল্যাণী হেসে উঠে
তুমি পইঠায় বসে তামাক সাজাও
আর শুনাও পবনদিঘীর গল্প
অল্প অল্প করে আমি আঁচ করতে পারি,
তুমি সত্যিই ভুল বুঝতে পারো

দোয়েলের নেমন্ত্রণে মানস গেলো স্বর্ণপ্রভা নিয়ে,
তুমি কোকিলের স্বর চুরি করে হয়ে গেলে বর্ণ-বিলাসী।
না গৌতম, এই মাঠ, এই নদীজল কিছুই তোমার না
আমি হলফ করে বলতে পারছি
তুমি অবশ্যই ভুল বুঝতে পারো

রাত হলে তোমার মিলনে ছটফট
দিন গুণে টাকার ফুয়ারা
আর আজব সন্দেশ-দেশে তুমি পূর্বরাগ হতে বিরত থাকবেই।
কেননা তোমার যে বৃহস্পতি সেখানেই বাতিধুম।
তুমি অশ্রুবাগ রচনা করতে পারো-
ধরে নিতে পারো আমি বলতে চাইছি এটিই যে,
তুমি তো ভুল বুঝতেই পারো।

তোমার নাকের আগাটা ঘামছে
তুমি বুঝতে পারছো সাগরের লবনাক্ত সব ফুরিয়ে এসেছে।
তুমি তলানী বিহীন সাগরের বুক থেকে ধেয়ে এলে ফণি
আমি সাপের মুখেও ব্রজগীত শুনেছি
শুধু তোমাকে শুনাতে পারিনি। কারন
তুমি ভুল বুঝতেই পারো

আমার সন্ধ্যাগুলোকে সাথী করে
আমার উরুগুলোকে করে জমাটবদ্ধতার সাক্ষী,
তুমি ঠিক হারিয়ে যাবে না পাখি। তবু ভয় হয়,
তুমি ভুল বুঝতেই পারো।

মুখের ভেতরটা শুকানো রোদের মতো হলে
চকচকে ব্লেডের পোঁচে কল্লা পড়ে গেলে
হঠাৎ কোথাও কোনো নদী বয়ে গেলে
আমি জানি-- তুমি ভুল বুঝতেই পারো

ভাবছো কে এমন স্বর্গ গড়ে দিলো হাতের যাদুতে
কার চোখে এতো মায়া রেখে, তুমি জাগলে আবার
আবার সে ভয়ানক কালো ঘুম দেশে
তুমি জাগলে কেনো?
আমি ঠিক বলতে পারছি, তুমি অবশ্যই ভুল বুঝতে পারো

তুমি চাইলেই সহজে হতে পারো হাতকড়া
তুমি নিষিদ্ধ লোবানের জল হতে পারো
হতে পারো চকমকে পৃথিবীর মাঝে মরিচিকা।
অথবা তুমি সান্ত স্নিগ্ধ দিঘীটির জল করতে পারো ঘোলা
আর একচালা হরিয়ানা প্লাজায় বাধতে পারো মাতাল সংসার
কে তোমাকে প্রক্ষেপ দেবে?
কে দেখাবে পথ?
তুমি ঠিক উন্মূল হেঁটে যাবে বায়বীয় পথে
আমি সত্যি বলছি, তুমি ভুল বুঝতেই পারো আমার কথাতে


বিনীত নিবেদন

আমার কবরে দিও এক মুঠো মাটি
আর কোনো চাওয়া পাওয়া নাই
অন্তিমে পাই যেনো ভালোবাসা খাঁটি
এই হোক জীবনের একমাত্র কামাই।
হাসি মুখে জানাইয়ো বিদায়
চেপে রেখে অফুরান শোক
দু' হাতের মোনাজাতে স্মরিও আমায়
এই তবে অঙ্গীকার হোক।
আমার যাতনা যত সব যাইয়ো ভুলে
ক্ষমা করে দিও অপরাধ
মনে রেখো অভাগারে, রেখো যে খেয়ালে
যদি নেই মৃত্যুর স্বাদ


জুঁই ফুল ও বাদাম জলের আখ্যান
(ইকবাল আনোয়ার শ্রদ্ধাষ্পদেষু)

অবারিত সুন্দর। আমি একটি বিস্তৃত মাঠের পাশে একটি খোলা জানালার কথা কল্পনা করতে পারছি। যাকে ছুঁয়ে যায় বিষন্নতা ও তামা-রোদ

তোমাদের জীবনে একপশলা বৃষ্টির রং মেখে আমার আজন্ম পরবাস। তুমি ঈশ্বর অথবা স্বপ্নের সংক্ষেপ করতে পারো না

রোদ-ঝর্ণায় মদিরা ঘুমে মন্দিরের চেতনা নেই। এই অহংকার আমার পুর্বপুরুষের। এই অহংকার আমার আত্মার


একাকী লাবণ্য আঁকে

একটা খোলা হাওয়ায় অবারিত হয়ে
অপেক্ষার দিনরাত্রিগুলো দীর্ঘতরো হয়।
চুপ শয্যায় একা ঘুমায় নির্নিমেষ চাঁদ।

নারকেল পাতার দোল খাওয়া দেখে,
অসংখ্য পাতার সবুজ নৃত্য থেকে
একটি মরা পাতাই শুধু চোখে পড়ছে

কাক ডাকছে, দাঁড় কাক। থমথমে।
দুপুরের ভাঁজে বিহ্বল রমনীরা কি জানে,
গোসলের মানে

জলঘাটে দুটো নৌকো প্রারম্ভিক
একটিতে বধু আসে, একটিতে মৃত লাশ


দৃশ্যযোগ : বিরহপর্ব-১

ব্যাথাটা কমলে আবার উঠি। আবার আঘাত করতে থাকি নিজেকে
চাবুকগুলো কাটতে থাকে পিঠ। রক্ত বেরোয় ফিনকি দিয়ে।
আমার পাগলা কুকুর গুলো আমাকে কামড়াতে থাকে
আর আমি নিজের উপর ছেড়ে দেই বিষধর সাপ।

আরও বেশি ব্যাথা পাবার জন্য আমি ছটফট করতে থাকি
আর নেমে যাই অগ্নিকুন্ডের ভয়ানক নিচে।
আমি আমার চোখগুলোকে উপড়ে ফেলি। দাঁতগুলো খুলে ফেলি
আর গায়ের চামড়া খুলে নেই কসাইয়ের ছুরিতে।


‘বিরহের গান’ পর্বযোগ-১

খুব ব্যাথায় শুয়ে না পড়লে আমি লিখতে পারি না
তোমার দেয়া ব্যাথাগুলো, তোমার তিরস্কারগুলো
আমাকে শুইয়ে দ্যায়। আমি বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠি।

খুব বেশি ভেঙে না পড়লে আমি লিখতে পারি না
তোমার ছলাকলাগুলো, তোমার প্রতারণাগুলো
আমার হৃদয়কে ভেঙে টুকরো টুকো করে দ্যায়
আমি বেশ গর্জে উঠি। আমি বেশ লিখতে থাকি তখন

খুব বেশী অনাথ না হলে আমি লিখতে পারি না
খাখা রোদে আকাশ কাঁপিলে, মস্তক আমার টগবগ করিলে
আমি বেশ হুংকার ছাড়ি তখন। আমি বেশ লিখতে পারি

খুব বেশি নিঃসঙ্গ না হলে আমি লিখতে পারি না
তুমি ছেড়ে চলে যাও, আমি একা হয়ে যাই
আর গাইতে থাকি বিরহের গান, যার কোনো শেষ নেই।

লেখকের ই-মেইল: md.arifulhasan@outlook.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ