....

চৌধুরী মুহাম্মদ রাশেদ -এর পাঁচটি কবিতা


খোশ আলাপ

তোমার ঠোঁটে কথার পাহাড়। তার ঠোঁটে খুব জ্বর
গল্প আজও আগের মতোই। পাল্টে গেছে শ্রোতা,
অবহেলার পায়ের নিচে, অভিমানের ঘর
অপেক্ষারা ছড়িয়ে রাখে, নিজস্ব স্নিগ্ধতা।

তোমার হাতে বসন্তকাল। তার দুহাতে মেঘ।
সর্বনাশের ঝরনা নামে, ভাগ্যরেখা বেয়ে..
তোমায় ভুলতে হবে ভেবেই, যার বাড়ে উদ্বেগ
আজকে সে তোমার কাছে দায় আর একঘেয়ে।

তোমার চোখে ভ্যালেন্টাইন। তার দুচোখে ভয়
অধিকারের আয়না ভাঙে! ফুরিয়ে আসে দ্যুতি,
জীবন মানে পিছুটান আর মায়াকে সঞ্চয়
মিথ্যে কথায় ভরিয়ে দেওয়া সস্তা প্রতিশ্রুতি।

এখন তোমার চোখের পাতায় রূপকথারা জাগে
অন্যকারোর গভীর ছোঁয়ায় ব্যস্ত হৃদয়ভূমি,
তবুও তার শেষ বিকেলের লোডশেডিং'র আগে
ক্লান্ত হওয়া চোখের কোনে, থাকবে শুধুই তুমি।।


অঙ্ক ও কবিতা

তোমার আমার প্রথম দেখা, ইলেভেনে, অঙ্ক ক্লাসে
বোর্ড জুড়ে স্রেফ বীজগণিত, মাথায় কিছু ঢুকছিল না,
হঠাৎ তোমার পড়ল পেন, ছিটকে এলো পায়ের পাশে
আলতো করে এগিয়ে দিলাম। সেখান থেকেই আলাপ বোনা।

অসীম শ্রেণীর মতই ক্রমে বাড়ছিল টান, মনের মিলও
ভীষণ ভালো বন্ধু হলাম, আলফা এবং বিটার মতো,
তোমার হাসি চোখের কাজল অঙ্ক ভীতি সামলে নিল
এবং সকল বিষয় ছেড়ে, অঙ্ক হল জীবন ব্রত।

দীর্ঘ  ছুটির পরে, নিজের উপর ভরসা করে
ভালোবাসার বৃত্ত এঁকে, তোমায় দিলাম প্রেমের চিঠি,
আলতো করে হাসলে তুমি। হারিয়ে গেলাম নেশার ঘোরে
আস্তে আস্তে সত্যি হলো, তোমায় পাওয়ার প্রোবাবলিটি।

এই ভাবে বেশ কাটছিল দিন। তোমার হাসি কথার ঘোরে
আমার জীবন অপেক্ষকে, থাকছিলে স্পর্শকের বেশে,
কিন্তু সবই বদলে গেল। সকল মায়া ছিন্ন করে
কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে, আলগা হলে বছর শেষে।

দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে, দশটা বছর জীবন থেকে
সঙ্গী বলতে নিজের লেখা, আর যা কিছু তোমার স্মৃতি,
রাত বাড়ে আর ফোন স্ক্রিনে, হারিয়ে যাওয়া তোমায় দেখে
কষতে থাকি বুকের ভেতর, মন খারাপের ত্রিকোণমিতি।।


ছাড়পত্র

অতীতগন্ধী আতর ক্ষরণের তাড়নায়
পড়ন্তবেলার পরিচিত কপাটে টোকা মারতেই
স্মৃতিরা চিচিংফাঁক--

খদ্দের পাঞ্জাবীর জলপাই রঙে
হোঁচট খাওয়া মুঠো মুঠো লাজুক কারুকাজ
আরশিনগরের গলিতে,
তাঁতের শাড়ীর একঝলক সদ্য যুবতী
ব্যস চোখের আঠায় জড়িয়ে যাওয়া...
কলেজের ফেরত পথে
রাধাচূড়ার ছায়ায় বাদাম ভাঙে
নির্বাক কথা চালাচালি।

বাদুড় ওড়া সন্ধ্যে নামার মুখে
দরজা ঠেলে উঠোন পেরোনো চুপিসারে
ধাপ ভাঙে পায়ের তলার চরকি..
মুখোমুখি ছাদে একটাই পাঁচিল;
সীমারেখার ওপারে আলোর দেশ
কাঁটাতার ভেঙে দিলেও
ছাড়পত্র মেলেনি কখনও---


নভেম্বর

কাশেরবেলা পড়ে এলো…
উৎসব ক্রমশঃ ম্রিয়মাণ বিসর্জনের স্রোতে;
গুঁড়ো গুঁড়ো কুয়াশা ছড়ায় নভেম্বর;

ঝাপসা সকাল জানলার কাচ
আমি অগোছালো ঘুম ফেলে
পাহাড়ী সবুজ ভোরে রূপকথার সূর্য দেখি।
সাতটি ঘোড়ার খুরের ধুলোয় আলোময় দিগন্ত
একফালি রোদ এসে পড়ে
আমার দেরাজে অতীত বন্ধ চিঠির খামে;

চন্দ্রমল্লিকার গন্ধ আসে,
একঝাঁক বুনোহাঁস স্মৃতি কার্তিকের কুয়াশায়
পথ হারায়…
নভেম্বরের ডাকবাক্সে জমে থাকা দিনগুলো
শিশির স্বচ্ছ তোকে ঘিরে টুপটাপ স্ফটিক বিন্দু;
পবিত্র  উজানে পুণ্যতোয়া প্রথম প্রেম—


বিভ্রাট

মাথা ঘুরছে শব্দ উড়ছে
ছন্দ জুড়ছে অতঃকিম,
নয় তো সস্তা কঠিন রাস্তা
হালত খাস্তা ঘোড়ার ডিম।

দিনান্তে রাত এই বিভ্রাট
মন্দ বরাত ফুটো কপাল,
ধুত্তেরি ছাই কোত্থেকে পাই
শব্দই নাই ঘোর আকাল।

এমন  ছন্দে পড়েছি দ্বন্দ্বে
কলির সন্ধ্যে নাভিশ্বাস,
চলছে চেষ্টা বুকেতে তেষ্টা
হবে কি শেষটা সর্বনাশ !

দেখি শেষমেশ ঘেঁটেঘুঁটে
হলো জম্পেশ গণ্ডোগোল,
খুঁজি অভিধান বেচারা এ প্রাণ
খুঁজে হয়রান খাচ্ছে ঘোল!!

...............

চৌধুরী মুহাম্মদ রাশেদ
সম্পাদক- চৌকাঠ
একাডেমী রোড, ফেনী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ