....

মহসীন আলম শুভ্র -এর একগুচ্ছ কবিতা


কবিতা

এককাপ গাঢ় লিকারে ঠোঁট রেখে চোখ রাখি উদয়ে
জলময় হরফে রঙের হেরফের
ক্রমশ প্রগাঢ়
প্রয়াত দিনে মন জড়সড় হলে নাড়ে মহাকাল
এইসব দিনরাত্রি শেষে গড়েছো কি কবি উত্তরাধিকার?


প্রেম

দেখো,ঝরাপাতার অন্তঃস্থে কে যেন ধুকপুক ধুকপুক করছে।


কালো বোতল

ঘুমচোখে ক্লান্তি নিয়ে রাত এসে বসে আছে শিমুলে
ভৌতিক পুকুরপাড়ে
পায়ের ছাপ আর ফসিলের আলিঙ্গন
নড়ে যায় উত্তর হাওয়ায়
আহত ধ্বনি এসে কানে বাজে,খপ করে ধরে ফেলে বিষণ্ন পেঁচা নৈঃশব্দ্যে।
মৃত ইদুরের গর্তের বিপরীতে
বাঁশের বাকলে শিলালিপি কে যেন উৎকীর্ণ করে খিটখিটে মেজাজ নিয়ে চুপচাপ গেয়ে যায় প্রশস্তিগীত
আর তখন জলের শরীর বেয়ে গন্তব্য খোঁজে
এই প্রদেশের একমাত্র ডোরাসাপ
আনমনে।


স্বজাত

একটি কালো বিড়াল রোদে
আমি ছায়ায়
অন্তঃস্থে দুজনের চুপচাপ মিল
বাঁধা একডোরে,মায়ায়।


ব্যাঙ

ইলশেগুঁড়ি
কুয়ো
খনা
ঘ্যাঙরঘ্যাঙ।


পেঁচার গান

খেঁকশিয়ালের  ছাপ জমা কোনো রাস্তায়
নষ্ট ক্যাসেটের ফিতার মতো অন্ধকার জড়িয়ে রেখেছে এক বাউলকে একতারা সহ।
 কেউ নেই
যেন নৈঃশব্দের তামলুক
 মিহির ধুলোমাটি,বিরান আকাশ অথবা
 শেষ বিকেলে জমা ক্লান্ত ঝরাপাতা
কিছু নেই
 শুনে না কেউ  আহত কণ্ঠস্বর
কেউ বলে না নিয়ন আলো জ্বালিয়ে শুধু
ডর নেই, নেই ডর
ভরা জোস্নায় আলোর খেলাঘর বেঁধেছি,প্রিয়,  বুকের ভিতর।


উত্তর

আর সব প্রশ্ন শেষে তুমি বলে দাও---
আমরাই তৈরি করেছি আমাদের কাল।


ধ্বনি

যে পাখির গন্তব্য নেই; বেলা শেষে তার সাথে দেখা হয়
একটি বাদামি গান আমার দিকে ছুড়ে সে দেয় গোধূলির ইশতেহার
অন্ধকার কূপে নগ্ন ব্যাঙ গায় না খনার গান
অঙ্কুরোদগমনে অপ্রকাশিত দোল
বর্ষার হাওর
আর  কাহ্ন পা তালপাতায় বলে না জীবনের ধ্বনি
দেহের গিলাফ ছেড়ে প্রকৃতির উঠানে সাজ সাজ রব
বৈঠকি চালে উদাম কণ্ঠস্বর
আর সানাইয়ের মৌসুমে কোনো আয়োজন নেই
সবুজ শিশিরে মাকড়শার খাশ বুনন
প্রয়োজন নেই, শোনো
আয়োজন নেই কোনো
হয় না রাগ:নিশ্চল তানপুরা

ক্লান্ত কেউ জেগে থাকে ঘুমপাড়ানিয়া? নৈঃশব্দের ঢেউ?
ডাকে না কেউ  অবশেষে কাছে থেকে কাছে তাই
যে পাখির গন্তব্য নেই--তার সাথে আমি সহজিয়া গান গাই।


ঘোর

কিম্ভূত আঁধারে জল ফোঁটা শুয়ে আছে কেয়া পাতায়।ওদিকে ঢেউ এসে পলাতক ঢেউ ধরে নিয়ে যায়।মাঝ সৈকতে অগণিত পায়ের ছাপ।
ক্লান্ত নাবিক।ঘুমের শ্রেষ্ঠ সময় পার হয়ে যায় ---এমনি সময় স্বপ্নের ঘোরে দেখো তুমি কে  যেন স্নিগ্ধ গোলাপ হাতে  দাঁড়িয়ে তোমার দুয়ারে বারান্দায়।


শ্যামল

পুতুলের বুকে পোড়ামাটি আমি গাঙে ডুবিয়ে তুলোবতী করে দেবো
উঠোনের চাকায় হাত রেখে বলছি
কলা পাতায় একসাথে খাবো নিরামিষ আগামীকাল
আলবৎ শাপলার ডাটায় পয়সা করে
ঝিনুক মালা তোমার গলায় শখ পড়িয়ে দেবো
দেখো যদি বেঁচে থাকি বিপ্লবের পর
তোমার হাতে হাত রেখে কবিতা হবে
এই প্রত্যয়ে আজ
শিকল ভাঙার  আওয়াজ তুলি দলিত কিশোর।


বাৎসায়ন

শুক্লা দ্বাদশ
সাপের ঝুড়ি
ঘন শীৎকার
বেহুর বেদিনী।


যাপন

হাওয়াই মিঠাই রেখে মাটির চাকায় আমি পুতুল বানাই
আর
চরকার সুতা চুরি করে স্যাকরাইন
এই সংক্রান্তিতে
তোমাদের প্রেমিকারা আমার প্রেমিকা সেজে রঙ মেখে দেয়,আগুনে পোড়ায়
রোদের সঙ্গম শেষে বউলমেলায়
আমি তাদের পয়সা করে সঞ্চয় বাড়াই।


ধনদাস

জীবন যে খেলাঘর গড়েছে সেখানে বাঁশির চেয়ে সঞ্চয় জরুরি।নাকফুলের চেয়ে
তাসের বরাত
কুঁপির ছায়াঘেরা মুখের চেয়ে সাতনলি জমি
সোনার সময় থেকে মোহরের উত্তরাধিকার --
আমি সেই ধ্যানে শিখে অঙ্কের ধারাপাত
এক দুই তিন করে জমাই মৃত্যুর পাহাড়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ