....

শামীম আহসান -এর একগুচ্ছ কবিতা


তবুও সে তোমার

ভবানিকা!
দিব্যক তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখছে।
কবিতার শব্দের জোগান দিচ্ছে,
পরিবাবুর স্বচ্ছ কমদামি দেশি মদের বোতল।
কবিতার শব্দের জোগান দিচ্ছে,
পাঁচ টাকার সস্তা সিগারেট,
বেশি খেলে কাশিও হয়।
কবিতার শব্দের জোগান দিচ্ছে,
ভবানিতলার মাগি রুপালি।
কবিতার শব্দের জোগান দিচ্ছে,
দূষিত শহরের একা থাকা রাস্তা।
কবিতার শব্দের জোগান দিচ্ছে,
তুমি ছাড়া একা কাটানো অন্ধকার রাত্রি।
ভবানিকা!
দিব্যক কিন্তু তোমাকেই নিয়ে কবিতা লিখছে!
দিব্যক বেঁচে আছে ভবানিকা!
দিব্যক মিথ্যাবাদী!
তোমাকে ছাড়া ভালো থাকবেনা,থাকতে চায়না বলেছিল,
কিন্তু ভালো আছে।
দিব্যক মদ খায়, সিগারেট খায়, রুপালির কাছে যায়,
একা একা গন্তব্যহীন রাস্তা হাঁটে, রাতে জাগে, প্রচুর রাত জাগে।
তারপরও তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখে যায় দিব্যক।


জেগে ওঠো

শহরে বৃষ্টি নেমে আসুক,
তমালিকারা ঘুমে যাক।
প্রেমিকেরা অপেক্ষা করে থাকুক প্রেম পিপাসায়।
তমালিকাদের কাছে বৃষ্টির শব্দগুলো বলে যেন,
অপেক্ষা করছে তোমার জন্য সে,
তোমায় নিয়ে স্বপ্নে দেখছে তমালিকা তোমার প্রিয়,
তমালিকা জেগে ওঠো!
তোমাকে বকুল ফুল দিবে সে,
তোমাকে নিয়ে মেঘ দেখতে চায় সে,
আকাশ চমকানিতে না তুমি ভয় পাও!
জড়িয়ে ধরো তাকে,
তোমাকে কাছে চায় সে,
খুব করে চায়।
তমালিকা জেগে ওঠো!
তোমার নীল শাড়িটা পরো,
ঠোঁটটা লাল করে রাঙাও তমালিকা!
তোমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে  ভিজতে চায় সে,
তোমার না বেশিখন বৃষ্টিতে ভিজলে শীত করে,
ঠোঁটের কাঁপন শুরু হয়,
তমালিকা আজ তোমার কম্পিত ঠোঁটে চুমু খেতে চায় তোমার প্রিয়।
তমালিকা,
ও তমালিকা!
জেগে ওঠো না!
ওঠো।


অভিজিত

একজন অভিজিত
 তাঁর হয়েছে যে জিত।
বাবা অজয় আপনার হয়নি পরাজয়,
শুধু ভেঙ্গেছে বাংলারই হৃদয়।
মা শেফালীর মানিক -রতন,
প্রগতির মাঝে থাকবে আজীবন।
অবিশ্বাসের দর্শন আর বিশ্বাসের ভাইরাস,
আমাদের বাঁচার নতুন আশ্বাস।
দু হাজার পনেরো এর ২৬ ফেব্রুয়ারি,
অভিজিত দিয়েছেন নীল আকাশে দিয়েছি উড়ি।
তোমারই গড়া মুক্তমনা,
মৌলবাদের ঘরে দিয়েছে হানা।
একজন অভিজিত
তাঁর হয়েছে যে জিত।
তারই দর্শন শপথ নিলাম,
করবো সর্বদা স্মরণ।


ওলটপালট

পৃথিবীর সমস্ত চাষি জমি আমাকে দিয়ে দাও,
আমি তাতে আকাশ বানাবো,
সব সবুজ আজ নীল হয়ে যাবে,
তাদের বুকে সাদা মেঘ উড়বে,
আজ কৃষকদের ছুটি।

পৃথিবীর সমস্ত কল-কারখালা শ্রমিকদের ঘুমুতে দাও,
তাঁরা আজ থেকে বসে খাবে, ঘুমুবে আর কবিতা পড়বে,
শ্রমিকদের ঘাম,শরীরের গন্ধ,শক্তপেশি মেশিনের ভেতর প্রবেশ করিয়ে কবিতা তৈরি করবো।

পৃথিবীর সমস্ত শহরের মানুষদের বাতাসে মিশিয়ে যেতে বলো,
তাদের সম্পত্তি আজ লুট হবে,
উঁচু উঁচু দালান মাটির সাথে পিশিয়ে দেওয়া হবে,
কিছু আক্কাস-কুদ্দুসরা আসছে,
তাঁরা আজকে শহরে একচালা ছাউনি ঘর তুলবে।

সাদা পাঞ্জাবিওয়ালা  নেতাদের রাষ্ট্র থেকে বের করে দাও,
বলে দাও,
তাদের জোচ্চুরি আজ থেকে বন্ধ,
রোদে পোড়া কালো চামড়ার মহা-মানবেরা আসছে রাষ্ট্র চালনা করতে।

বড় বড় চুল,দাড়ি,গোঁফওয়ালা গাছ, নদী,আকাশ খেকোদের কলম ফেলে দিতো বলো,
কিছু রাতজাগা, দূগন্ধযুক্ত মাতাল সস্তা কলম নিয়ে আসছে মেরুদণ্ড শক্ত  করা কিছু সাহিত্যকর্ম নিয়ে।


তবুও অনুশীলারা নবদাদের

আমি দেখেছি নবদাদের সাথে অনুশীলারা ভালো নেই।
আমি যখন আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখি,
অনুশীলারা তখন দেখে,
নবদাদের মদ খাওয়া চোখ লাল করানো ধমক।
আমি যখন বাতাস খাওয়ার স্বপ্ন দেখি,
অনুশীলারা দেখে,
পুঁইশাকের সাথে কৈ মাছ রান্না করলে কতোটা মানানসই,
নবদা খেতে পারবে কিনা,
লবণ বেশি হলো কিনা,
নবদা খেতে খেতে রাগ করলো কিনা!
আমি যখন কবিতা নিয়ে ভাবি,
অনুশীলারা তখন ভাবে,
তার সন্তান কোন বিষয়ে কতো নম্বর পেল,
ছেলেটাকে আরো পড়াশুনায় কতোটা উন্নত করা যাবে।
আমি যখন বকুল ফুলের মালা প্রেমিকার গলায় পরানোর অপেক্ষা করি।
অনুশীলারাও অপেক্ষা করে,
এই বুঝি সংসারের কোন কাজে ভুল হলো,
এই বুঝি সে এসে আমার গলা চেপে ধরে বলে,
'তুই ভুলটা করলি কানো'।
আমি যখন রাস্তায় হাঁটি আর বৈচিত্রময় মানুষ দেখি।
অনুশীলা তখন দেখে,
শাশুড়ির রাগান্বিত শক্ত মুখ দিয়ে বের হওয়া বিচ্ছিরি সব কথা,
অনুশীলারা ঘরের কোণে বসে কাঁদে।
আমি যখন বসে বসে দামি সিগারেট আর কফি খেতে খেতে অনুশীলাদের কথা ভাবি।
অনুশীলারা তখন,
সবার খাওয়ানোর পর খায় পাতিলে তলায় পরে থাকা এক মুঠো ভাত আর ভালো ভালো মাংস খাওয়ার পরে বেঁচে যাওয়া   আদা,রসুন,পেঁয়াজ।
অনুশীলাদের খেতে হয়,
অনুশীলারা খায়।
আমি যখন গভীর নীল আকাশ দেখতে দেখতে প্রিয়তমার ওষ্ঠে চুম্বনের স্বপ্ন দেখি,
অনুশীলারা তখন অপেক্ষা করে নবদাদের পৈশাচিক সঙ্গমের জন্য,
নবদারা শান্তি পায়,
অনুশীলাদের অনেক কষ্ট হয় জানেন।
অনুশীলারা ভালো নেই,
বিশ্বাস করেন।
অনুশীলাদের স্বপ্ন হারিয়ে গেছে,
কোন শকুন জানি অনুশীলাদের স্বপ্ন ঠুকরে ঠুকরে খেয়ে ফেলেছে।
অনুশীলারাও আমার মতো স্বপ্ন দেখতো একদিন।
অনুশীলাদের নেই, কিচ্ছু নেই।
তবুও অনুশীলারা বাঁচে,
বাঁচতে হয়।
কার জন্য সেটা তারা নিজেরাও জানেনা!
অনুশীলারা ভালো নেই নবদাদের কাছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

অস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।