....

বিস্মৃতির ঘোলাজলে ও অন্যান্য কবিতা | আরিফ ইসতিয়াক



বিস্মৃতির ঘোলাজলে

সম্প্রতি স্মৃতির উপর আর ভরসা পাই না।
কত প্রতীক্ষিত আর প্রতিশ্রুত বিষয় ভুলে গেছি তার ইয়ত্তা নেই!
ভুলে গেছি নীলডানা প্রজাপতি, ঘোলাজলে মাছের গতি,
কথা বলা গাছের পরিচয়, ভুতুড়ে রাতে দাদিমার বরাভয়।

সুতার মাপজোখ কীভাবে দিলে সাধের ঘুড়ি
মুক্ত বিহঙ্গের মতো গগনবিহারী হয়,
কোন দিকে বাতাস বইলে
মা'র বাতব্যথা বেড়ে যায়,
কত বোলে কত আম ধরে
কতক্ষণ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলে
ভেসে আসে শস্যের বিপদ,
গাঙের জলাবর্ত কিসের সংকেত দেয়
সব ভুলে গেছি— সব।

প্রতিশ্রুত স্বাধীনতার কলেবর, আকার
সন্তানের মৃত্যুতে মা'র শোকের লোবান
সেই কবেই ভুলে গেছি।

যাদের সাথে দেশ গড়ার কথা ছিল
শস্যের বিপ্লবে ভরার কথা ছিল দরিদ্রের উদর
তাদের ঠিকানাও আজ স্মৃতির অতীত।

তবে কি আমারই ভুলে সব উচ্ছন্নে গেল—
ভেঙেচুরে গেল আকাশ-মাটি-নৃত্য?


নৃত্য

ভাব নেই ভাবমূর্তি!
লাশের পাশে উদোম ফূর্তি
করতে গিয়ে তাল কেটে যায়,
তবু একটু জিরিয়ে নেবার পর—
সংবিধানের ওপর চড়ে নৃত্য করে কতেক বানর।

রাজায় করে লুটতরাজ!
লোক দেখানো ঝোঁকের কাজ
করতে গিয়ে প্যান্ট খুলে যায়,
তবু একটু উন্নয়নের পর—
সংবিধানের ওপর চড়ে নৃত্য করে কতেক নোঙর।

বোধহীনের প্রতিশোধ!
ভিন্নতর ভিন্নস্বরের কণ্ঠরোধ
করতে গিয়ে ঢোল ফেটে যায়,
তবু একটু মিষ্টি কথার পর—
সংবিধানের ওপর চড়ে নৃত্য করে কতেক হাঙর।



পরিবেদনা

বহু বৎসর বয়ে গেল
ভালোবাসার উচ্চারণ শুনি না,
প্রায় বিস্মৃত এক চারণ কবি
ঘোর লাগা প্রহরে রচেছিলেন কিছু গান
সেগুলোই কেউ সুর তুলছে
তাই নিয়ে করছে দিন গুজরান।

শহুরে ডাস্টবিনের তাবৎ খাবার
কুড়ানিরা সাবাড় করে দিলেও
মড়কের প্রাকমুহূর্তের আতঙ্কে
ক্ষুধাতুর কাকের পরিবেদনা গলায় আটকে যাচ্ছে।

মানুষ কি তবে ভুল পথে এগোলো?

সময় তো আর তৈলাক্ত বাঁশ নয়
যে কিছুদূর গিয়ে আবার পূর্বকালে আসা যাবে।
যুদ্ধ রাঙাতে সৃষ্ট জীবাণু যদিওবা ভুলক্রমে
প্রাণ পেয়ে যায়, বেঁচে ফেরা যায় কি কোনোক্রমে?
আত্মীয়ের মুখ না চিনবার খেসারতই
মানুষ যুগ যুগ ধরে দিচ্ছে,
আত্নীয়ের জন্য জীবাণু রান্নার খেসারত
কীভাবে ভোগাবে মানুষকে?

তবে কি ভুল পথে এগোলো মানুষ?



চিঠি

যদিও মেঘের রাত,
যদিও কোথাও লুকিয়ে আছে চাঁদ,
তবু খুঁজে পাবে আমায়
মুছে যাবে সকল ব্যথা-অবসাদ;
যেমন মুছে যায় জিহ্বা হতে
আনকোরা হাতের রান্নার বিস্বাদ।

হয়তো কোনো কোণে
লোকচক্ষুর গোপনে
জোনাকির মত জ্বলব মিটিমিটি,
দেখা না গেলেও লেখা পাঠিয়ো
পাঠিয়ো মেঘপিয়নের কাছে চিঠি।

যদিও পথ আঁধারিয়া
বিজলি উঠিলে চমকিয়া
পায়ে পায়ে হাঁটব গুটিগুটি,
শোনা না গেলেও কথা পাঠিয়ো
পাঠিয়ো মেঘপিয়নের কাছে চিঠি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ