....

সজীব খন্দকারের কবিতা | দিব্যক




১.

আমার প্রতিদিনের ব্যস্ততা মানে তোমার চোখের ভেতর দিয়ে কোলাহল পেরিয়ে সিগ্রেট টানতে টানতে পৌঁছে যাওয়া উদ্যান গেট,

এক বিন্দু অশ্রুসমেত সাদা টিস্যু দিয়ে খুব সচেতন ভাবে আমাকে মুছে দিলে,

অসংখ্য মানুষের পায়ের তলায় পিষে যাচ্ছি

বৃদ্ধ আর পাগলের শ্লেষযুক্ত নোংরা থুথু ভিজিয়ে দিচ্ছে সমস্ত শরীর,

আমার বেঁচে থাকতে ঘেন্না লাগছে

আমার আর কিছু ভাল লাগছে না।

মানুষ আমাকে কি শেখালো এই প্রশ্ন নিয়ে গবেষণা করছি আজকাল।

পৃথিবীর সমস্ত কারখানায় উৎপন্ন হচ্ছে ভোগ্যপণ্য আর তোমাকে শিল্পের নিপুণ হাতে কে বানিয়ে দিয়েছে আমি জানিনা,

আমি জানিনা— তোমার কণ্ঠে ঈশ্বরের তানপুরা কেমন করে গান গায়,

কেমন করে তুমি হয়ে যাও আমার মায়ের আলমারিতে তুলে রাখা একটা পুরনো শাড়ি!

তোমার কথা ভেবে হয়ে যাচ্ছি মাধবীলতার স্নিগ্ধতা,

তোমার কথা ভেবে হয়ে যাচ্ছি বিদগ্ধ অঙ্গার,

তুমি কি এসেছো তবে? পথের পাশে আর কোনো উৎসুক চোখ নেই জেনে রেখো তুমি।


২.

আমার হলো না কিছুই

যেদিকে তাকাই দেখি কোলাহল, ব্যস্ততা নিয়ে অফিসে যাচ্ছে মানুষ।

উনারা মিছিলে ডাকতো,

সাতপাঁচ না ভেবেই ছুটে যেতাম

অথচ শ্লোগান শিখিনি বলে পেছনের লাইনে হাঁটতে হাঁটতেই দেখতাম ভিখিরি, টোকাই কেমন নির্বাক তাকিয়ে আছে!

যাকে ভালোবাসতাম,

চিরকাল বিপরীতমুখী মেয়ে—

চলে গেলো, চলে গেলো!

তাকে ভেবে আজকাল দুঃখ করি

দুঃখের বিসর্গের দুই ফোঁটা চোখ থেকে ঝরে যায় আমাদের সংশয়, কিছু কিছু প্রেম।

অনেক দূরের সাগরের স্মৃতি মাঝরাতে জেগে ওঠে,

মেহেদী, ফায়েদ পেছনে দৌঁড়ায়, ক্রমশ নিকটে আসে,

জোৎস্নায় ঢেকে যাওয়া সাগরের দিকে তাকিয়ে দেখি আরতির হাসির মতন ঢেউ, উচ্ছ্বাস! 

ওরা কি আমাকে ভালোবাসতো?

মরে গেলে আমি এই প্রশ্ন কাকে করে যাবো?


৩.

জোৎস্নার রং লাগা একটি নদীর ঝিলমিল জল দেখতে দেখতে একা সিগারেট টানি,

বৃহদাকার মরা মাছের মত শুয়ে থাকা নৌকার ছায়ায় ভেসে থাকে জলপতঙ্গ।

নৈঃশব্দের ভেতর বসে থেকে ভাবছি বিগত দিনের কথা, অশ্রু আর প্লাবনের স্মৃতি।

এখন মদ নেই, স্বস্তিকা নেই

বাতাসে পুড়ছে সিগারেট।

তোমার কথা মনে পড়ছে আর আমি আবিষ্কার করছি শরীর জুড়ে এ কেমন জঘন্য অশ্লীলতা, উত্তেজনা, ধিক্কার!

তোমার কথা মনে পড়ছে মানে তুমি স্বস্তিকা অথবা ভিন্ন অর্থবহ আরতির নাম,

যার সামনে প্রেতের ছায়ার মত বহুকাল দাঁড়িয়ে থেকে জেনেছি হৃদয়ের গোপন কেলেংকারি।

আমার কিছু মনে নেই শুধু মাথার ভেতর এক কোটি পাখির কিচিরমিচির,

অসহ্য যন্ত্রনা, অসহ্য যন্ত্রনা!

তোমার কালো চুল ছেয়ে গেছে সমস্ত আকাশে, অন্ধকারে আমি আর কিচ্ছুটি দেখছি না।


৪.

জানতাম অন্ধকার এবং ঈশ্বরের উপস্থিতি,

হয়তো গাছ হয়ে অথবা ছায়ার ভেতর বিড়াল হয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছেন।

ভয়াবহ সাতটি জাহান্নামের আগুনের ইতিবৃত্ত শুনেছি, তখন ভীষণ ভয় হতো— আমার পথ মানেই মসজিদের দিকে একশ কদম পা, আমার পবিত্রতা মানে বার বার মুতে এসে অযুর পানি আর গোলাকার গম্বুজের মাথায় বসে থাকা লম্বা লেজ বিশিষ্ট একটি হলুদ পাখি

তোমাকে দেখার পর আবিষ্কৃত হলো জীবনের প্রথম নাস্তিকতা,

পবিত্র গ্রন্থের সমূহ সত্য বাণী তোমার মাতাল ঘুম ঘুম অস্ফুট চোখ বয়ে অশ্রুর মত ঝরে গেলো,

মস্তিষ্ক তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আমি আর ঈশ্বরকে ডাকবার কোনো মন্ত্র পেলুম না।

একদিন বৃষ্টির মধ্যে তোমার কাঁদতে ইচ্ছে হলো,

একটা বড়ই গাছ, দেয়ালে ভিজে যাওয়া প্রতিবাদী লিপি, তুমি এবং আমি—

তোমার অশ্রু ধুয়ে দিয়ে চিবুক গড়িয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির জল,

পাশাপাশি হাঁটতে গিয়ে প্রথম তোমার স্পর্শ পেলুম, মনে হলো তোমার আংগুল কী প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার!

অথচ, তোমার সমস্ত শরীর একান্ত ধর্মালয় বানিয়ে চেনাসব মহিলার নিতম্বের দিকে আকৃষ্ট হয়ে আত্মমৈথুনে প্রলুব্ধ হয়েছি।

তোমাকে দেখার পর আমার ঈশ্বর বদলে গেলো, মস্তিষ্ক থেকে উধাও হলো প্রাচীন পুলসিরাতের দুর্দান্ত বিবরন অথচ, বুকের ভেতর সাতটা জাহান্নামের আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছো অনায়াসে, কেন?

প্রাচীন রুপকথার পাখি একবার আকাশের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাবার পর তোমার অবিন্যাস্ত চুলের দুরন্ত দৃশ্যায়ন ছিলো বিভিন্ন উপাখ্যানে,

হে লিলিথের কন্যাসম, আমার ধর্ম এবং অন্ধকার বিশিষ্ট মন্দিরের দুয়ারে ঈশ্বরকে পেরিয়ে তোমার কাছে নত হয়ে চিরকাল সিগ্রেট টেনেছি,

নিজেকে গোপন করেছি বিগত স্মৃতির মত জমিয়ে রেখেছি নীল কৌটায়।

স্মৃতি মানে দারুন বিস্ফোরক কিছু তুমি,

তোমার নিকটে প্রেরিত বার্তা আমি এখন কি দিয়ে পাঠাই?


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ