....

লিংকনের কেরিক্যাচার : নভেম্বর ২০২০ | মাহফুজুর রহমান লিংকন




গত কয় দিন থাইকা মন খারাপ করার মত খবর পাইতাছি!   
কবিদের কিছু হইলে আমার নিজেরে বড় অসহায় লাগে। প্রথম খবর পাইলাম, এক কবিরে নাকি পুলিশে ধরছে। আবার রাইতে শুনলাম, কবি রাশেদুন্নবী সবুজ হাসপাতালে! দুইটাই খারাপ খবর। পরে আবার জানতে পারলাম- কবি সাম্য রাইয়ানের মা অসুস্থ… চোখ বন্ধ কইরা অনুভব করতেছিলাম… সাম্য’র উপর দিয়া নিশ্চই ঝড় বয়া যাইতাছে! পরক্ষনেই ভাবলাম, এইটা ভালোও হইতে পারে, যেমনটা আমার বেলায় হয়, যখন বেশি রকম কষ্ট অনুভব করি/ কিংবা যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে নিজেরে যাইতে হয়, তখন ভিতরে সৃষ্টিশীল লিংকনরে জাইগা উঠতে দেখি। সাম্য হয়তো হাসপাতালের বারান্দায় বইসা কিংবা রোগীর বিছানার পাশে বইসা/দাড়াইয়া মোবাইলে লেইখা চলছে… আমি এইটারে বলি কষ্ট যাপন উৎসব! অবশ্য “কষ্ট যাপন” ব্যাপারটাও সাম্য’ই একদিন কইছিলো…

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল হাসপাতালে আমার মায়ের চোখের অপারেশন হইছে গত মাসে। আমি এমন দিনমজুর, একদিন শ্রম না দিলে সংসারে টান পইড়া যায়। ইচ্ছা থাকা সত্বেও উনার কাছে একদিনের বেশি থাকতে পারলাম না, শেষে নিজের কষ্টের বহিপ্রকাশ করতে গিয়া ‘প্রযন্তে ধরলা’ মুক্তগদ্য লেইখা ফেললাম। নিজেরে হাল্কা করার কৌশল কাজে লাগলো…


আজিব ব্যাপার ঘইটা গ্যালো!
আমার লেখালেখির ব্যাপারে মায়ের সাথে কোনদিন আমার বাতচিত হয় না! কিন্তু আইজ মা’য় আইসা স্বপ্নে কয়, “বাবা, দিব্যকে দেবার জন্য যে লিখাটা লিখেছিস, আমার ভালো লাগছে না!” 
জিগাইলাম- “কেনো?”
কয়- “বিষয় ঠিক আছে, তবে- ভাষাটা আমার ভালো লাগে নাই।”
- বিস্তারিত বলো মা
- দেখ তোর জন্ম কুড়িগ্রামে। বড় হইছিস এইখানে। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় কিছুদিন কুষ্টিয়ায় ছিলি।  কর্মদোষে এখন ঢাকায় আছিস। এর মধ্যেই তোর ভাষায় কেমন যেন একটা জগা-খিচুড়ি মার্কা ভাব দেখতেছি। আরো না হইছে ঢাকাইয়া, না হইছে কুড়িগাইয়া!
- এইটা এখন স্টাইল মা। সাহিত্যে, নাটকে, সিনেমায় সবখানে ঢাকার স্থানীয় কিছু শব্দ ব্যবহার হয়। আবার বরিশালের বাসিন্দাদের আধিপত্য ঢাকায় বেশি হওয়াতে, ওই অঞ্চলের ভাষাও মেশানো হয়, এইটা মা বাজারে এখন হিট!
- সব জানি, কিন্তু তোর কাছে আমি অন্য কিছু আশা করি...
- তুমি আমার লেখা পড়ো মা?
- ছেলে যাই করুক, মা জেনে যায়।
মাকে কথা দেবার সময় পেলাম না! ঘুম ভেঙ্গে গেলো । তবে, মস্তিষ্কের ভিতর গেঁথে নিলাম, আর এমন হবে না!
 

বর্তমান সময়... 
একটা গল্প বলি, এক ব্যক্তি ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না ! ঈশ্বরে বিশ্বাস আনার জন্য তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন! গয়া, কাশি, বৃন্দাবন, মক্কা, মদিনা সহ অনেক স্থান তিনি ঘুরেছেন , কিন্তু  ঈশ্বর আছেন এমন কোন ভিত্তি তিনি খুঁজে পাচ্ছিলেন না!
ওই ভদ্রলোক হঠাৎ বাংলাদেশে আসলেন। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তাকে এতোই মুগ্ধ করলো যে, উনি সিদ্ধান্ত নিলেন এখানে কিছুদিন থাকবেন! সিলেটে তিনি সবচেয়ে বেশি সময় কাটালেন... 
কিছুদিন পর, তিনি যখন এদেশ থেকে চলে যাবেন তখন বিমানবন্দরের সকলে তাজ্জব হয়ে দেখলো, ধর্মীয় পোষাকে তিনি আবৃত হয়ে আছেন। নানা জনে নানান কথা বলা শুরু করলেন। কেউ বলছে- দেখ, পীর আউলিয়ার কেরামতি! আবার কেউ বলছে- এর নাম বাংলাদেশ! এর মধ্যে ভিড় ঠেলে এক কবি, সত্য জানার জন্য সরাসরি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন ঘটনার পরিপেক্ষিতে তিনি তার মতাদর্শ পরিবর্তন করলেন।
ভদ্রলোক খুব বিনয়ের সাথে বললেন- দেখুন, আমি বিশ্বের প্রায় বেশিরভাগ দেশ ঘুরেছি, সব দেশই আইনের দ্বারা পরিচালিত। প্রতিটি দেশের জনগন সে দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জনগণ যে আইন ভঙ্গ করে না তা নয়। আইন ভঙ্গ করলে সেই আইনের ধারা মোতাবেক শাস্তিও হয়। 
কিন্তু এই দেশে এসে দেখলাম -আইন আছে, নিত্য নতুন আইন হচ্ছে তবুও এ দেশের জনগণ আইনের কিছুই জানে না, মানেও না। ভয়ও পায় না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বেহাল দশা। প্রশাসন, প্রশাসক, জনগণ কেউ এখানে আইনের তোয়াক্কা করে না, তবুও এই দেশ চলছে... এই সব দেখে আমার মনে হয়েছে, সৃষ্টিকর্তা বলে নিশ্চয়ই একজন আছেন, নাইলে এই দেশ চলে কেমনে!?       

আশেপাশের সকলে চুপ হয়ে একে অপরের দিকে চেয়ে নিজেদের কান আর মুখ চেপে ধরলো। যেহেতু এইসব কথা শোনা পাপ, বলা তো মহাপাপ!


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

অস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।