....

কবি আহমেদ মওদুদ-এর অনলাইন সাক্ষাৎকার


কবি আহমেদ মওদুদ। প্রকাশিত হয়েছে দুইটি কাব্যগ্রন্থ, একটি কিশোর উপন্যাস। আর একটি কিশোর উপন্যাস প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা কয়েকটি প্রশ্ন পাঠিয়েছিলাম কবি আহমেদ মওদুদের কাছে। তিনি উত্তর দিয়েছেন-


প্রশ্ন: কবিতা লেখার ভাবনাটি আপনাকে কবে প্রথম আক্রান্ত করে? বিশেষত সিরিয়াসলি লেখালেখিটা শুরু হয় কবে এবং কীভাবে?

আহমেদ মওদুদ: ঠিক কবিতা নয়, ছড়া লেখার ভাবনাই  আমাকে প্রথম আক্রান্ত করে এবং সেটা ১৯৯২ সালের কথা। তখন আমি ৭ম শ্রেণীর ছাত্র। অবশ্যই তখন ছড়াকেই কবিকা বলে জানতাম। আমাদের বাংলার শিক্ষকও আমাদের কখনো ছড়া মুখস্ত করার কথা বলতেন না, বলতেন আগামীকাল তোমরা অমুক কবির অমুক কবিতাটি মুখস্ত করে আসবা। আমরা তাই করতাম। তো তখন নিজেও কিছু লেখার চেষ্টা করি নিজের বিদ্যায়। এরপর ধীরে ধীরে ছড়া আর কবিতা পৃথক হতে শুরু করে। সিরিয়াসলি লেখালেখিটা শুরু করি আই. এস. সি. চুড়ান্ত পরীক্ষার সময়। ১৯৯৮ সালের কথা। বাংলা আর ইংরেজী পরীক্ষাগুলো ভালভাবেই দিলাম। কিন্তু ৩য় পরীক্ষার দিন পরীক্ষার হলে গিয়ে চক্ষু চড়াক গাছ। পরীক্ষা নয় যেন হল জুড়ে নকলের উৎসব। শোনা গেল ম্যাজিস্ট্রেট আর পরিদর্শনে আসবেনা। এমতাবস্থায় পুঁথিগত বিদ্যা বা অন্তর্গত জ্ঞান কোনোটাই আর কাজে আসলোনা। একমাত্র উপায় নকল করা কারণ পুঁথিগত বিদ্যা ফলানোর পরিবেশ ছিল না পরীক্ষার হলে। পরীক্ষা দেব কিন্তু পড়ালেখা করতে হচ্ছে না। প্রচুর অবসর। অতিরিক্ত অবসর ভেতরে ভেতরে হতাশারও সৃষ্টি করে। ভাবলাম অবসর সময়গুলো লেখালেখি করে পার করি। মূলত তখন থেকেই সিরিয়াসলি লেখার শুরু।

প্রশ্ন: আপনি নিজেকে আধুনিক নাকি উত্তরাধুনিক কবি মনে করেন? নাকি অন্য?

আহমেদ মওদুদ: আধুনিক বা উত্তরাধুনিক নয় বরং নিজেকে একজন কবি ভাবেতই স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। একজন কবি যখন কবিতা লেখেন তখন তার মাথায় আধুনিক বা উত্তরাধুনিক শব্দগুলো থাকে না। থাকে একটি ভাল কবিতা লেখার চিন্তা। কবিতা যেহেতু ভাষাকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে সেহেতু ভাষার গতি-প্রকৃতি কবিতাকে প্রভাবিত করবে এটাই স্বভাবিক। তো সেই ভাষাকে আমরা কখনোই  আধুনিক বা উত্তরাধুনিক ভাষা বলতে পারি না কারণ ভাষা পরিবর্তিত একটি বিষয়। আমরা যদি এসময়ের ভাষাকে ভাষার আধুনিক বা উত্তরাধুনিক রুপ বলে চালাই তাহলে পাঁচ হাজার বছর পরের ভাষার রুপকে কি বলে অভিহিত করবো? এসময়ের দ্রুতগামী বাস বা উড়োজাহাজ যেমন আধুনিক যান তেমনি গরুর গাড়ীও যখন প্রথম পথে চলে তখন গরুর গাড়ীও ছিল আধুনিক। অথচ এসময়ের গরুর গাড়ী পুরনোদিনের বাহন হিসেবেই পরিচিত। আগামীতে উড়োজাহাজও অকেজো হিসেবে পরিগণিত হবে। বাল্মিকী, লুইপা  যেমন কবিতা লিখেছেন মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ এবং ত্রিশ আর নব্বইয়ের কিংবা শূন্য দশকের কবিরা। লিখবেন আগামীদিনের কবিরাও। কবি তার সময় ও সমাজের অন্যদের থেকে চিন্তার জায়গায় এগিয়ে যান কিন্তু ভাষা যখন চিন্তার কাঁচামাল তখন সমাজের ছাঁয়া নিয়ে কবি নতুন ছাঁয়ার জন্ম দেন আবার সমসাময়িক ভাষাকে গ্রহণ করে একটি নতুন ভাষারেখা টানেন। তো একজন কবিকে আমরা যখন আধুনিক বা উত্তরাধুনিক কবি হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করি তখন কবির সমসাময়িক জনতাকে আমরা আধুনিক নাকি উত্তরাধুনিক জনগণ বলবো?আর কবি  যে সময়ে বিচরণ করেন সে সময়কেই বা কি বলবো?

প্রশ্ন: আপনার সাম্প্রতিক কবিতা ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইছি –

আহমেদ মওদুদ: কবিতাকে আমার কাছে কবির অন্তর্দহনের নির্যাসই মনে হয়। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত অনুভুতি। সম্ভবত অন্তর্গত যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য কবিতা লেখা। সম্ভবত আত্মহত্যার পরিবর্তে কবিতার কাছে আশ্রয় নেওয়া। মানুষ মাত্রই আশ্রয় প্রবণ। যুগে যুগে মানুষ আশ্রয় খুঁজেছে। আর সংবেদনশীল মানুষের প্রার্থীত আশ্রয় যতটানা দৈহিক তার’চে অধিক মনোজাগতিক। সম্ভবত কবিতা মানুষের শেষ আশ্রয়। এটা কেবল সংবেদনশীল মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। একজন সাধারণ মানুষও দীর্ঘশ্বাসের পাশাপাশি কবিতার  দু’টি চরণ আওড়াতে আওড়াতে উপসংহারে পৌঁছান। আমি আমার একাকিত্বে কবিতাকে সাথী করি, কবিতার পথ বেয়ে শৈশবে পৌঁছাই, ভবিষ্যতে ঘুরে আমি বর্তমানকে পর্যবেক্ষণ করি কবিতার চোখে চোখ রেখে। কবিতাই আমার দর্শন। দর্শনই আমার কবিতা।



প্রশ্ন: কবিতা লেখার ক্ষেত্রে আপনার প্রেরণার জায়গা আছে কি?

আহমেদ মওদুদ: আমার কৌতুহলই আমার প্রেরণা। এর বিপরীতে তো কেবলই বঞ্চনা, স্রোতের বিপরীতে সাঁতরানোর শ্রম।

প্রশ্ন: নতুন প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে ব্লগজিন নিয়ে আপনার ভাবনা-

আহমেদ মওদুদ: আমি ব্লগার না এবং ব্লগে লেখার অভ্যাসও আমার নেই। তথাপি নতুন প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে ব্লগের গুরুত্ব আমার কাছে অনেক। কারণ এটা গতানুগতিক চিন্তা ও চেতনার বাহিরে নতুন ধারার চেতনা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ