....

‘শুধু নিজের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে শেষতক বাঁচতে চাই’ : কবি জিনাত জাহান খানের সাক্ষাৎকার

[ কবি জিনাত জাহান খান। ১৯৭৮ সালের ১০ আগস্ট, বাংলােদেশর বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বরিশালেই তাঁর বেড়ে ওঠা, দর্শনশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর এবং বর্তমানে একটি ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক পদে নিয়োজিত আছেন। প্রকাশিত কবিতার বই তিনটি। প্রথম বই "নীল কাছিমের দ্বীপ (শুদ্ধস্বর, ২০১৪)", দ্বিতীয় বই "কথা বলা মাছ (চৈতন্য ২৯১৫) " ও তৃতীয় বই " শর্তহীন দেবদারু (জেব্রাক্রসিং, ২০১৮)"। 
কবির একটি সাক্ষাৎকার নেবার উদ্দেশ্যে আমরা তাঁকে ই-মেইলে প্রশ্নগুচ্ছ পাঠিয়েছিলাম। ২৯ আগস্ট ২০১৯ তারিখে তিনি যে উত্তরমালা পাঠিয়েছে, তা হুবহু প্রকাশ করা হলো। আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। -সম্পাদক। ]

সা ক্ষা  কা 


প্রশ্ন
ছোটবেলায় কী হতে চাইতেন? মানে ‘এইম ইন লাইফ’ রচনায় কী লিখেছেন, তা নয়; বরং মনের ভেতরে সুপ্ত বাসনা ছিলো কি কোনো কিছু হবার জন্য?

জিনাত জাহান খান
স্কুল মাঠের পাশে আরেকটা মাঠ ছিলো। যখন খেলতাম স্কুল মাঠে, অপর পাশের মাঠ থেকে উড়ে যেত ঘুড়ির দল, মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখতাম, ভাবতাম, আহা ঘুড়ি!  উড়তে পারে, যদি আমিও।  এরপর বয়সের উর্ধগতিতে ভেবেছি আয়না কারখানার শ্রমিক হবো,  সারাদিন আয়নায় মুখ রাখা যাবে। বয়সের পারদে তাপমাত্রা এতটাই বাড়ন্ত এখন কবিতার শব্দের আহ্লাদেই আটকে থাকা, ইদানীং কিছুই আর হতে মন চায় না।

প্রশ্ন
একজন  লেখকের  ভেতরের ‘মানুষসত্তা’কে  কীভাবে  ব্যাখ্যা  করেন?

জিনাত জাহান খান
সত্তা বিষয়টি ব্যক্তি প্রতীতি নির্ভর। কেননা পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীরই আলাদা আলাদা সত্তা আছে শুধু প্রকাশ ভঙ্গিটা আলাদা।  একজন লেখক আগে মানুষ। দার্শনিক বিশ্লেষণে সত্তা বিষয়টি পৃথক এবং আলাদা অস্তিত্ব নির্ভর, এ অস্তিত্ব পার্থিব নাও হতে পারে। জীবনের প্রয়োজনীয় যাপনের কাছে সাহিত্যচর্চা তুচ্ছ। ব্যক্তির জীবন সত্তা যত উন্নত হবে ততই লেখক সত্তা সমৃদ্ধ হবে।

প্রশ্ন
জন্ম-মৃত্যুর  মাঝখানের  জীবন  সম্পর্কে  আপনার  অনুভূতি  কী?

জিনাত জাহান খান
যে বিষয় দুটি নিয়ে অনুভূতির প্রশ্ন তার কোনোটাই মানুষের হাতে নেই।  একটা সরল রেখা, যার এক প্রান্তে জন্ম এবং অন্য প্রান্তে মৃত্যু আর মাঝের সময়টাতে শুধুই অভিজ্ঞতায় বাঁচা। সেই অভিজ্ঞতায় মানুষ মানুষের পাশে থাকবে, ভোগ ও ত্যাগের মহিমা শিখবে, এইভাবেই জীবন এগিয়ে যাবে। আসল কথা,  বৈপরীত্যকে পাশ কাটিয়ে নিজের মতো করে যাপন করার আপ্রাণ চেষ্টা মাত্র। 

প্রশ্ন
লেখার ক্ষেত্রে আপনার কোনও প্রেরণার জায়গা আছে কি?

জিনাত জাহান খান
প্রেরণার জায়গাটা অনেক বিস্তৃত। তাই ওটা নিজের কাছেই থাক, প্রেরণা হয়েই।

প্রশ্ন
বর্তমানে  বাংলা  সাহিত্যের  আলোচনা-সমালোচনা  চর্চা  কতটা  গঠনমূলক হচ্ছে?

জিনাত জাহান খান
ভীষণ সীমাবদ্ধতা কাজ করছে আলোচনা - সমালোচনাতে। তবে থেমে নেই ভালো কাজ, চলছে। পেশাদারী সমালোচক থাকলেও আপাততঃ দৃষ্টিতে মনে হয় শুধুই যেন প্রশংসার ক্রয়-বিক্রয়ের হাটবাজার। 

প্রশ্ন
‘কবিতায় ছন্দ’ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?

জিনাত জাহান খান
ছন্দ খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয়। কথা হচ্ছে, একজন কবি যখন ছন্দ না জেনেই শুধুমাত্র চিত্রকল্পের প্রতি অনুরাগী হয়ে একটি ভালো কবিতা লিখে ফেললেন, তাহলে সেই কবিতাকে কি অকবিতা হয়ে যাবে?  কবিতা হয়ে ওঠা বা না হয়ে ওঠা নিয়ে অনেক বাক বিতন্ডা বা তর্কযুদ্ধ থাকছেই...  সাহিত্যে যেহেতু সার্বজনীন মত নেই সেহেতু লেখকের মেধা মননে ভালো কবিতাই আসুক। তবে ছন্দ জানা আবশ্যক।

প্রশ্ন
ছোটবেলায় কি লেখালিখি করতেন?

জিনাত জাহান খান
মূলত স্কুল জীবন থেকেই শুরু, তবে মজার ব্যাপার এমন যে কবিতা না, নাটক লিখতাম তখন। হাসি পায়, সেইসব নাটকগুলো আবার নির্দেশনাও দিতাম। বয়স / সময়ের হাত ধরেই কবিতায় থাকা।

প্রশ্ন
লিখতে কেমন লাগে?

জিনাত জাহান খান
লিখতে যতটা ভালো লাগে তার-ও অধিক লেখা নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে।

প্রশ্ন
আপনি কী ধরনের বই পড়তে পছন্দ করেন?

জিনাত জাহান খান
বই বলতে সবধরনের বই পড়ি, তবে কবিতার বই প্রীতি একটু বেশি।

প্রশ্ন
এখন কোন বইটা পড়ছেন?

জিনাত জাহান খান
"সপ্ত সিন্ধু দশ দিগন্ত " সম্পাদনায় আছেন শঙ্খ ঘোষ ও আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত।

কবি জিনাত জাহান খানের তিনটি কবিতার বই।

প্রশ্ন
আপনি বারবার পড়েন, এমন কবির নাম জানতে চাই।

জিনাত জাহান খান
"থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার নাটোরের বনলতা সেন " ঘুরেফিরে সেই জীবনানন্দ দাশের কাছেই আসি।

প্রশ্ন
বর্তমান  সময়ের  কবিতার  বিরুদ্ধে  জনবিচ্ছিন্নতা  ও দুর্বোধ্যতার  অভিযোগ  বিষয়ে  কিছু  বলেন। কবি  কি পাঠকের  রুচির  সাথে  আপোষ করে  কবিতা  লেখা উচিত?

জিনাত জাহান খান
কবিতা পাঠক বিচ্ছিন্ন না । শুধু " জন " শব্দটা সযত্নেই এড়িয়ে গেলাম, কারণ দেশের সব জনগণ যে কবিতাপ্রেমী হবে তার কোনো অর্থ নেই। কবিতা পাঠকগণ কবিতা পাঠ থেকে কেন বিচ্ছিন্ন তার প্রসঙ্গেই দুর্বোধ্যতার অভিযোগ আসে। একদল কবিতা পড়ার জন্যে পড়ে অন্যদল আত্ম উপলব্ধিতে পড়ে।  এ বোধের অতীত, তাই অন্যকে ভাবতে বাধ্য করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পাঠকের সাথে আপোষ!  কখনও না, তা আত্মঘাতী সামিল।

প্রশ্ন
লেখা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে  অন্তর্জালকে  কীভাবে দেখছেন?

জিনাত জাহান খান
লেখক তো চাইবেই প্রকাশ হোক, পাঠক পড়ুক। আর অন্যান্য মাধ্যমের মধ্যে অন্তর্জালের বিষয়টি খারাপ না।

প্রশ্ন
আপনার কি বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক বিশ্বাস আছে?

জিনাত জাহান খান
শুধু নিজের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে শেষতক বাঁচতে চাই।

প্রশ্ন
আপনি কি এক বসায় কবিতা লেখেন, না কি বারবার সংশোধন করেন?

জিনাত জাহান খান
কবিতার শরীর তৈরি হয় এক বসায় কিন্তু শরীরের বাড় বাড়ন্ত, রূপ রূপান্তর চলে বারবার সংশোধনেই।

প্রশ্ন
আপনার প্রেমের কবিতাগুলো কি কল্পনাসৃষ্ট না কি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ?

জিনাত জাহান খান
কল্পনা ছাড়া কি কবিতা হয়?  সে যে বিষয়টি নিয়েই কবিতা লেখা হোক না কেন প্রেম কিন্তু কবিতা জুড়েই থাকে।  আমার ক্ষেত্রে কল্পনা ও অভিজ্ঞতা মিলেমিশেই কবিতা হয়। 

প্রশ্ন
আপনি দিনের কোন সময়টাতে লিখতে পছন্দ করেন? কোনো রুটিন আছে কি এ ব্যাপারে?

জিনাত জাহান খান
মন চাইলেই সেই সময়টা কবিতার সময় হয়, আলাদা সময় নেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. বেশ জমেছিল! যেন হঠা/ই শেষ হয়ে গেল! লেখকের জীবনদর্শন, শিল্পবোধ আর নিজের চিন্তা ও ভাষার স্বচ্ছতাকে আন্তরিক সেলাম!

    উত্তরমুছুন

অস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।