....

রেজওয়ানুল হাসানের কবিতা | দিব্যক


কর্মীহীন কর্মী


আলো আধার মায়াময় জগৎ সংসার

কাঠগোলাপের সাদা পাপড়ি গন্ধমুক্ত

কর্মক্ষেত্র যেভাবে ছিল তেমনি আছে

কর্মীরা গৃহবন্ধী হয়ে দিন গুনছে মুক্তির

অনিশ্চয়তার যাত্রা সন্মুখে দ্বার বন্ধ

প্রেমের বীজ মন্ত্র হৃদয়ে ধারন করেছি

মৃত্যু যন্ত্রণা হাসি মুখে সহ্য করব

জন্মের সংবাদ মিষ্টি হাতে বিলায় মা

সন্তানের মঙ্গল কামনায় দুঃসময়ে

ভাইরাস রুখতে পারেনা ভালোবাসা

সবকিছু স্থবীর হয়ে পরেছে কর্মীহীন

ভয় আতঙ্ক জয়ী হবে মানুষের প্রেম॥


বনানী, বগুড়া

৩০.০৬.২০২০


জিওকূপ


লক্ষ্যভেদ করে বেরিয়ে যাওয়া বুলেটের মত

স্থির অবিচল পরে আছি শ্যামল ছায়ায়

প্রত্যেক দিন খবরে বুলেটিনে পড়ি মৃত্যু সংখ্যা

জন্ম মৃত্যু হার দৈনিক আক্রান্তের সমান

তারপরে মানুষ আতঙ্কিত করোনা ভাইরাসের ভয়ে

নাকি ত্রাস সৃষ্টি করেছে কোন স্বার্থবাদীরা

এই দুঃর্বিসহ কালো রাত্রিতে প্রেম সম্বল

ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে ধরেছি কলম

টকটকে জবা ফুলের মত হৃদয় নিঙ্গরানো

যার ফোঁটায় ফোঁটায় জেগে উঠে লক্ষেণদর

জিওকূপে ফেলে দেয়া সৈনিকের মত 

উঠে আসে ভাইরাসে আক্রান্ত পিড়িত মানুষ


বনানী, বগুড়া

০৩.০৭.২০২০


অশুভ সংকেত


খেলতে খেলতে বেলা অনেক দূর গড়িয়েছে

দর্শক সারিতে বসে ¯িœগদ্ধ এক জগৎ দেখি

মসৃণ আলোয় সুঘ্রাণে ভরে আছে সব

ক্ষুধার্ত মানুষগুলি ধরতে পেরেছে বুজরুকী

চেনা পরিবেশ হঠাৎ অচেনা হয়ে গেছে

প্রেমের সাম্পান বেয়ে চলেছি একাকী

ক্লান্তহীন মাঝির মত বৈঠা বাই

দূর আকাশে জ্বলে থাকা তারার মত

মিট মিট করে জেগে থাকে চোখের তারা

আশাহীনদের শুনাতে চায় যেন নতুন গান

সুরেলা শব্দে তাড়ায় যেন সকল

অশুভ সংকেত দূর করে সেই দৃঢ় কন্ঠ


বনানী, বগুড়া

০৩.০৭.২০২০


বিশ্বাসের ভারার


প্রতিদিন মৃত্যু খবর শুনতে শুনতে

মনে হয় দীর্ঘদিন হল মৃত্যুপুরী যেন

ভয় আতঙ্ক গ্রাস করেছে বিশ্ববাসীকে

ফিনিক্স পাখির জন্মানোর সুবর্ণ সময়

ভুলতে বসেছিল মানুষ দুদিনের দুনিয়া

চেনা জগৎটা যেন হঠাৎ পাল্টে গেছে

স্বার্থের ছায়ায় বেড়ে উঠে পরার্থের বৃক্ষ

বৃক্ষমানবের মত হয়ে পরছে মানুষ

ভরসা ফিরিয়ে আনতে হবে নিজের উপর

প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে হবে

অদৃশ্য কিছু আছে যার নিয়ন্ত্রণ

বিশ্বাসের ভারার পূর্ণ কর ভালোবেসে॥


বনানী, বগুড়া

০৬.০৭.২০২০


যান্ত্রিক মানব


লকডাউনের নামে সামাজিক বিছিন্নতা

করোনা ভাইরাসে প্রাণ হারা লাশ

আক্রান্ত সুস্থ ও মৃত্যুর সংখ্যার বৃদ্ধি

মানুষের মনের শান্তি কর্পূর মত উরে গেছে

ঘরে চিন্তা বাইরে ছোয়াছে ভাইরাসের ভয়

ঘরে থাকুন সুস্থ শ্লোগান

সূর্য উঠছে দিন শেষে উঠছে চাঁদ

বাতাসে ভর করে গাছপালা দোলে

বর্ষার বারী বর্ষণে বন্যায় ভাসে গ্রাম

প্রকৃতির কোন কিছুই থেমে নেই

শুধু থমকে পরেছে মানুষের কার্যক্রম

মানসিক চাপেও বেঁচে আছে যান্ত্রিক মানব॥


বনানী, বগুড়া

০৭.০৭.২০


ঝলমলে সূর্য


চালকুমড়ার হলুদ ফুলে ভরে গেছে জাংলা

খেলা করে সাদা কালো প্রজাপতি

নিরব দর্শকের মত এই দৃশ্য দেখি

যাতে ঝিঝি পোঁকার ডাকে নিস্তধ্বতা ভাঙ্গে

আকাশে ঝলমলে পূর্ণ জ্যো¯œা ঢালে চাঁদ

বাঁশ ঝাড়ে ফাঁক গলে উঠলে ছড়িয়ে পরে

ভেজা মাটি শুষে নেয় চাঁদের আলো

প্রেমে পরে যাই এই মায়াবী রাতের প্রকৃতি

একটি অস্তিত্ব জেগে উঠে অন্ধকারে

দুঃসময়ের গল্প দীর্ঘ হয়ে দিনকে দিন

সব দূর্যোগ কাটিয়ে সুবর্ণ সময় আসবে

আবার উঠবে সোনালী সূর্য জলমল করবে॥


বনানী, বগুড়া

০৯.০৭.২০২০


নির্বিকার জগৎ


স্বপ্নের ভিতরে ঘুরে ফিরি অচেনা রাস্তায়

গলি ঘুপচি রাজপথ ঘরবাড়ী স্প্রিং এর মত

প্যাচানো একটা সঙ্গে একটা লাগানো থাকে

পুরুষ মহিলা যার যার মত কাজে ব্যাস্ত নির্বিকার

শব্দহীন একটা জগৎ দেখে বিশ্বাস হতে চায়না

বিভিন্ন প্রকার রঙ্গিন ফুল কিন্তু ঘ্রাণ নাই

আমি হেটে যাই অচেনা রাস্তা ধরে গন্তব্যহীন

অর্থের মাপে ভালোবাসা মেপে দেখা হয়না

কাছের মানুষগুলিকে ভালো বা মন্দ ভাবি

ঘুম ভেঙ্গে গেলে চেনা জগৎ পরিচিত চারপাশ

স্বার্থের কুটচালে আটকে পরা একেকটা জীব

এদেরকে সাইট কেটে নিজের মত পথ চলি॥


সপ্তপদী, বগুড়া

২২.০৭.২০


অবরুদ্ধ ফয়সালা


ঘুরে দেখি প্যাচান সময়ে ফেলে আসা পদ‎চিহ্ন

টুনটুনি পাখি খোকসা গাছের পাতায় বসে দোলে

ছোট পাখিটা ফুরুৎ ফুরুৎ উড়ে এ পাতা ও পাতায়

নিশ্চিন্ত হেটে ফিরি ভবিষ্যৎ ভাবতে ভালো লাগেনা

যমুনা নদীর শান্ত স্থীর অথচ প্রবাহিত পানির ¯্রােত

দূরদূরান্তের গ্রামগুলি ছায়ার মত পানিতে ভেসে থাকে

সূর্যের আলোর ছটায় ঝিকিয়ে উঠে নদীর উপরিভাগ

কত ক্ষুদ্রতা নিয়ে বরাই করি বিশাল হওয়া উল্ফন

এক ফোঁটা পানি আর নদী ভর্তি পানির গুন একই

একাকী একতার মেলবন্দ হয়ে ছুটে চলে দিগন্তে

তোমার কথা ভাবি ভালোবাসার ফয়সালা করি

অবরুদ্ধ হয়েই বিশালতার অনুভব করতে পারি॥


২৬-০৭-২০২০ ইং

শপ্তপদী, বগুড়া


সময়ের গল্প


তরল সময়ের ভিতর দিয়ে আমি হেঁটে যাই

গন্তব্য যানা নাই আন্দাজে চলি পূর্বসুরীর পথে

সহযোগীরা একে একে সরে যায় শূন্যতা সৃষ্টি হয়

পরের ভাষায় লিখে রাখি নিজের অভিজ্ঞতার কথা

পানি ও ভাইরাসে বন্দি হয় কোটি কোটি জনগণ

আশ্রয় খাদ্যের অভাবে অনিশ্চিয়তার জীবন যুদ্ধ

পানিতে ভেসে চলা কুচরিপানার মত ভাসছে

ঘরগুলি যেন এক একটি ছৈঅলা নৌকার মত

তার ভিতরে হাসি কান্না দুঃখের বয়ান চলে

খাটের উপরে চুলা বিছানাপত্র নীচে পানি

আশ্রয় জুটেছে ছাগল ও মানুষের একসাথে

গুনে গুনে সময় পার করার গল্প জমা হয়॥


২৬-০৭-২০২০ ইং

শপ্তপদী, বগুড়া


    রেজওয়ানুল হাসান

    জন্মঃ ৫ই আগষ্ট ১৯৭৯, সোমবার

    জন্মস্থানঃ মডির্ফোড, ঢাকা।

    কাব্যগ্রন্থঃ বঙ্গআবীর, ২০১৫। মোক্ষ, ২০১৭

    র্বতমান ঠিকানাঃ বনানী, বগুড়া।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. ভালো লেগেছে কবির ভাষার ক্রমবিবর্তন, অনেক শুভ কামনা

    উত্তরমুছুন
  2. বিষয় নির্বাচনে কবির স্বাতন্ত্র্য প্রশংসনীয়। শব্দচয়নেও তিনি পরিণত মনোভঙ্গির প্রকাশ করেছেন। এগিয়ে চলুন।

    উত্তরমুছুন

অস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।