১.
শব্দহীনতার শব্দে প্রতিদিন
গভীরের গভীরতায় তলিয়ে যাচ্ছি।
তুমি বলছো— দৌঁড়াও...
দেহের এপিঠ-ওপিঠ জুড়ে
অতিক্রান্ত সময়ের বিশ্বাস ভাঙার গল্পে
না-তেই বেঁধে দিয়েছি অস্পষ্ট জীবন।
জীবনকে পাঠ করতে পারিনি উচ্চারণে
তাই আজও না-এর উপর দাঁড়িয়ে
গল্প পাঠ করি তোমার এবং তোমাদের।
পাশাপাশি পা দুটিতে বিরোধের দেয়াল
বিবাদে নয়, নিষিদ্ধতায় অচেনা চিরদিন।
হাতের দশ আঙুলে স্থির হয়ে আছে সময়...
মৃত কথাগুলিকে গলায় জড়িয়ে
আমি তলিয়ে যাচ্ছি গভীরের গভীরতায়,
আমার অস্তিত্বকে গিলে খাচ্ছে
আমার দিকেই ছুটে আসা একঝাঁক তেলাপোকা
ওরা আমার প্রতিপক্ষ নয়।
প্রতিপক্ষ হিসেবে তোমাকেই চিহ্নিত করেছি
তুমিই শেখাচ্ছো হেরে যাবার গোপন মন্ত্র।
শব্দহীন শব্দকে স্পষ্ট করতে চাইলে
তোমার চোখ ভবিষ্যৎ দুঃখের কথা বলে...
অস্পষ্টকে ভালোবেসে ভাবি—
তুমিই আমার শব্দহীন শব্দ, আমার দুঃখ।
২.
জীবন চিহ্নের প্রথম কান্না
আজও ধ্বনিত হয়,
আমি বেঁচে আছি।
সত্যকে শরীরে মেখে
একগুচ্ছ দুঃখ হাতে দাঁড়িয়ে
অবহেলা আর মিথ্যায়
আহত হয় বিবেক।
পরাজিত বিবেকে যে মৃত্যু
অন্ধকারকে উপেক্ষা করে
ভাসিয়ে নিয়ে যায় গাঢ় অন্ধকারে
সেখানে জন্মের কথা লেখা নেই।
জন্মকে অশুচি করেছে আমার যে পাপ
পবিত্র জলে অবগাহনের পরেও
তার দাগ স্পষ্ট।
সে তো কেবল স্নান হয়েছে!
নিঃশ্বাসে বেঁচে থাকা একফোঁটা সুখে
জন্মের পাপকে নয়
জীবন খুঁজছি।
৩.
শরীর গড়িয়ে পড়া নীরব স্নানজল
অনুচ্চারিত শব্দদের ভাসিয়ে নিয়ে যায় গভীরে।
শব্দের গভীরতাকে স্পর্শ করতে গিয়ে
শব্দ ভুলে তোমাকেই ভাবতে থাকি।
তোমার চোখের গভীরতায়
শব্দরা হয়ে ওঠে এক একটি কবিতা।
স্নানঘরের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিদিন
চিৎকার করে কবিতাদের শোক...
রাতের বড় হওয়া দেখি একা।
রাত শৈশব পেরিয়ে যৌবনে এসে গভীর হলে
তুমিই হয়ে ওঠো কবিতা...
৪.
—ফোঁটা ফোঁটা জল ধীরে ধীরে ঢেকে দিলো সবকিছুকে। আমার প্রতিশোধ বুঝি এবার সত্যি শোধ হলো, সন্ধ্যামালতি!
—তুমি যে আবার তাকে নতুন করে ডাকবেনা; তা কিন্তু নয়। সেই তো তাকে আবার শোধ করতে আসতেই হবে।
—সে কি আবার আসবে? আসবে, সন্ধ্যা?
—তার বাঁশি যে তোমার কাছেই। সুর কখনো মিথ্যে বলেনা..
—তাকে লিখতে বসলে আমার আঙুলগুলি আগের মতো কেঁপে উঠেনা! মনের ভিতরে কেবল জলের শব্দ শুনতে পাই। যে সত্য তুই আর আমি জানি, কেবল সেটুকুই আমার রইলো; চিরদিনের।
—সে-ও তো তোমার কাছে মিথ্যে নয়।
—যে শরৎ একদিন শিউলি-ভোর এনেছিলো, ঋতু শেষ হবার পর তার সেই সত্যটুকু সে ছাড়া আর কেউ কি মনে রেখেছে, সন্ধ্যা? সবাই তো নতুন শরৎ কে বরণ করবে বলেই অপেক্ষা করে।
—সে অপেক্ষা তো বিদায় দেবার। পাতা তার সবুজেই হলুদকে লুকিয়ে রাখে গোপনে, একদিন ঝড়ে পড়বে বলে।
0 মন্তব্যসমূহ
অস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।