....

মাহবুবুল ইসলাম'র কবিতা | দিব্যক




সুই আর সুতোর কবিতা


এক একটা 

শিমুল বৃক্ষে ফেলে এসেছে সুতোর সোনালি শৈশব,

তার জমাট তুলোর পরিবার। 

এখন

ক্ষুধার্ত্ত সুঁইয়ের আহবানে সুতো বিরামহীন ছুটছে বস্ত্রসভ্যতার পথে, সেলাই কলের যুগে।

অথচ

রঙিন সুতোর বাইনে আড়াল করে রাখে মানুষ সকল অন্ধকার জগত।

বিচিত্র বেশে বেশে

মানুষ আজ ছদ্মবেশী।

মানুষ কি খুব বেশি এগিয়েছে?

সভ্যতার অনেক হয়েছে 

আজও

মানুষ হয়ে উঠা হয়নি।

আমাদের চোখের নীচে 

ক্রমাগত বাড়ছে রাত্রীর আয়ু।

ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার,

বাইরে আলোর বাণিজ্যিক উৎসব। 

এক একটা

শিমুল বৃক্ষ জানে

বস্ত্রসভ্যতার এক একটা মানুষ 

ভেতর থেকে কতটা নগ্ন।




পূজিবাদী ঈশ্বর 


কোন কেন্দ্র নেই,

ভরকেন্দ্রও নেই।

প্রান্ত থেকে সবাই করে ভ্রান্তিবিলাস।

যেখানেই দাঁড়ায় মানুষ,

পায়ের তলায়

শেকড়ে থেমে যায় 

সব প্রস্বেদন ক্রিয়া।

সকল চুম্বকত্ব হারিয়ে জং ধরা লোহার মত পড়ে আছে

বিকল প্রতিষ্ঠানগুলো।

জল ও জীবন থেকে দূরে গিয়ে

স্তন্যপায়ী প্রাণি হারিয়েছে মাতৃত্বের ভূগোল। 

রোদের কফিনের ভেতর

শিশির লিখে যায় মৃত্যুর এফিটাপ।

পরম বলতে কিছু নেই,

নিখাদ বলতে কোন কিছু নেই।

প্রত্যেকটা আলোর নাভির নীচে

জন্মের কালো দাগ।

দেখ,

মৃত্যুর মিছিল নিয়ে 

হেঁটে যায় নগরের যিশু,

বলপেনের বলের মত ঘুরাচ্ছে 

সবাইকে আধুনিক, 

পূজিবাদী ঈশ্বর।




ঘর


ঘরে ফেরা খুব জরুরী। 

বুনো বাতাসে লাউয়ের ডগার মত 

কাঁপতে থাকা একটা শৈশব, 

এক একটা বক পাখির ধৈর্য্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ গ্রাম,

সংসারের সমস্ত ভার কাঁধে নিয়ে প্রতিদিন হেঁটে যাওয়া একজন ক্লান্ত যিশু,

সেইসব স্মৃতি, হ্যামিলনের বাঁশির মোহনীয় সুরে সবাইকে ডাকে--

ফেরার জন্য।

তবে অনেকটা পথ, মহাসড়ক, ফ্লাইওভার মাড়িয়ে মানুষ কোন্ ঘরে ফিরতে চায়! 

আদৌ কি ফেরার থাকে কোন ঘর কিংবা গন্তব্য? 

একটা নদীও ফিরতে পারে না তার উৎসমূলে।

সেও জানে--

তার দুই তীর মিশে গেলে জলের অস্তিত্ব হারায়।

মানুষও দূরত্বে, বিচ্ছেদে খুঁজে ফিরে প্রকৃত ঘর।

অথচ

গৃহের সব রসদ জুগিয়েই মানুষ হয় সবচেয়ে বেশি গৃহহীন। 




জীবন


জীবনের কথা বললেই দার্শনিকগণ আমাকে খাঁড়া, দন্ডায়মান বৃক্ষের কথাই বলে বেড়ায়।

অথচ 

আমি তো একটা আনুভূমিক জীবনই চেয়েছিলাম।

মাটির কংকালে মাংসের মত লেগে থাকা গুচ্ছ গুচ্ছ ঘাসের জীবন, ভাসমান,

একদম মিডিয়া বিমুখ,

পরস্পর একসাথে জড়িয়ে থাকে

যে জীবন,

মেটান্যারেটিভ বৃক্ষের অগোচরে।

আমি সেই

মাটির বাকলে বাস করা একদল নির্ঘুম পাখির জীবন খুঁজে বেড়াই,

এদের কাছে জেনে নেয়া যায়,

শিখরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সবাই ভুলে যায়,

শেকড়ের খুব কাছকাছি তৈরি হয় এক একটা জীবনবৃক্ষের ভিত্তি।




বলপেন


পাথরে পাথর ঘষে আলো জ্বালাতে

শিখেছ,

তবে অস্থি ঘষে ঘষে আমি যে শব্দের তিমিরে মরছি,

সেটা কি কখনো দেখেছ?

আমি সভ্যতার এক ক্ষয়িষ্ণু লাঙ্গল,

ভিতরের কালো রক্ত ঝরিয়ে

শব্দচাষ করে যাচ্ছি

শাদা কাগজের ভূ-গোলে...

পৃথিবীর সবচে' শিক্ষিত, সন্ত্রাসী

আঙ্গুলগুলোই

আমাকে ক্লান্ত করে, রক্তাক্ত করে,

আমার অস্থি পুড়িয়ে কালো ছাইয়ে

লিখে রাখে

বিপণ্ন সভ্যতার ইতিহাস।

আর আমি বৃত্তাকার শরীর নিয়ে

ক্লান্তিহীন ঘুরছি

কর্তার মর্জিমত…

জানি

থামার অপর নামই মৃত্যু।

মানুষ, তুমিও কি

টের পাও? তোমরাও কি

বলপেনের বলের মত ঘুরছ

পৃথিবীর শক্তিমান লেখকের ইশারায়?



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ