কানে গুঁজে রাখি কলমির ফুল...
লাল চোখের নিচে জমেছিল পাপের সিরিজ...
প্রেমেতে মজিয়া মন—গেছে দেখো দূর কোনো বনে, আমারে রাখিও পুরে আগুনের খামে। ভেতরে পাতার অক্ষর সাজায়ে রাখিও বেণীর কাতারে। তখনো সোনালি মাঠ—ধান কাটা হয় নাই কাস্তের ধারে। আকাশে জমায়ে রাখো চোখের অশ্রু ওই মেঘ সরোবরে।
পাহাড়ে সূর্য যখন ওঠে ওই জংলার ওপাশে, তখনো ঘুমায়ে থাকো মিহি মিহি তুলার ওপরে। যে আমারে রেখেছে মনে হৃদয়ের কুসুম বাগানে; তারেও বলেছি আমি চুল শুকাও রোদের ঝিলিকে... আমারে ছাড়িয়া তুমি যেয়ো নাকো কোকিলা পাখি—ময়না ও মুনিয়া বলে আমি শুধু তোমারে ডাকি।
ধান কাটা হয় নাই দেখো ওই সোনালি মাঠে—মাদুলি হারায়ে গেছে জলহীন প্রেমের ঘাটে। এত কেন খোঁজাখুঁজি? পাখি-টাখি নাই বুঝি আর; সে বুঝি উড়িয়া গেছে গারো ওই পাহাড়ের ওপার...
পৃথিবীর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে আগুনের হলকা...
লিখে ফেলো বাদামি দিনের জলজকাহিনি...
সুন্দরবনে নেচেছিল বানরের দল...
ঘূর্ণায়মান জলে—ঘুরছে...
মাথা ঘুরছে শুধু মাথাই ঘুরছে...
তাই যা কিছু ইচ্ছে করতে পারো...
ধরে রাখতে পারো না নিজের শরীর...
আগুন মানে লু হাওয়ার বলকানো ঝাঁঝ...
স্পিরিট গন্ধে ছোট ছোট সাবু দানা...
একজোড়া ক্র্যাচের বেদনা...
দৌড়াচ্ছে বাঘ...
শিশিরে জমাটবাঁধা ঝরনা প্রপাত...
পাথরের চোখ
পাথরের চোখ— অশ্রু পড়ে না, দুঃখ ঝরে না
গাবগাছের নিচে জালবোনা দিনে কুড়িয়ে আনি
কিছু নিমপাতা রঙের মনের ময়না!
পাথরের চোখ শুধু চেয়ে থাকে, পলক পড়ে না...
অনেক নিশুতিরাতে যখন হরিণশিশু লুকিয়ে থাকে
বনের ভেতর আর খাঁ খাঁ প্রান্তরজুড়ে শোনা যায় না
কোনো শুকনো পাতার মর্মর—
ডানা ঝেড়ে বিরহীঘুঘু ফেলে যায় ছোট্ট পালক
তখন অরণ্যময় জেগে ওঠে প্রাচীন বেদনা...
পাথরের চোখ শুধু চেয়ে থাকে, পলক পড়ে না
এদিকে মৎস্যশিশুর অভিমানী ঠোঁটে বাড়ছে ক্ষরণের ঢেউ
কালোরাতে জোছনার জাল পেতে বসে আছে চাঁদ
সমুদ্র নেচেছে তার উড়িয়ে শীতল বাতাস
মোহনায় এসে নদীরা ফেলছে দীর্ঘশ্বাস—
এত সুদূর বসন্তে কেন তবে কোকিল ডাকে না
পাথরের চোখ শুধু চেয়ে থাকে—
কেন তার অশ্রু পড়ে না, দুঃখ ঝরে না...
কৃষ্ণ বুকের চাতালে
কুয়াশার শাড়ি পরে বসে আছে দূরের সবুজ
কে এসে খুলে নেবে ঘোমটার ভাঁজ
ভেতরে অঢেল জোনাকি স্রোতের ইশকুল
নামতার মতো ফোটে মহুয়ার ফুল।
হাতের রেখার মতো জেগে আছে ঘাসপত্র
আর রেখাচিত্র আঁকা দেখো পাথরের গুহায়
প্রযত্নে সবুজ রেখে বিলি করো পাতাঝরা দিন
কৃষ্ণ বুকের চাতালে জমছে প্রণয়ের বীজ...
কে তাকে পরাবে নিষেধের বেড়ি?
শেকলে বাঁধবে তার প্রাণের তাবিজ!
রোজ এসে ফিরে যায় পাখিডাকা বিকেলের রোদ
মরাবৃক্ষে লেগে থাকে সবুজের ওম—
দোয়েলের ঠোঁটে ভাসে অবিনাশী শিস
তাক করে আছে কোন শিকারির তীর?
কুয়াশার শাড়ি পরে বসে আছে দূরের সবুজ
কপালে দিয়েছে এক ছোট লাল টিপ।
প্রান্তের কোকিল
নিঝুম গ্রামের মতো কে তুমি হাতছানি দাও
নিশ্বাসের মতো যাওয়া-আসা এই বায়ু প্রবাহে
দেখো জমা করছে মনের ইথারে সহস্র বাসনা...
আর আমি মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রাখছি স্বপ্নের কুসুম।
ওই পাহারাদারের চোখ ফাঁকি দিয়ে এইমাত্র
যে ঘুঘুটি উড়ে গিয়ে বসলো দূরের ডালে
আর করুণ ও মধুর সুরে ডাকলো যে ডাক
যেন বুকের ছাতি ফেটে ঝরে পড়লো অঢেল বেদনা...
যদি কোনোদিন বর্ষার আগে গভীর নিশ্বাসে
সেই নিঝুম গ্রামের মতো কেউ হাতছানি দিতো
তবে অদৃশ্য খাঁচা ছেড়ে এক লহমায় উড়ে যেত
দূর প্রান্তের পোড়খাওয়া আহত কোকিল...
পাখি ও বিমান
পাখিদের রানওয়ে থেকে পালক ঝরছে
দুহাত পেতে কুড়িয়ে নিচ্ছি—
গুঁজে রাখছি কানের পাশে; বান্ধবীর খোঁপায়।
পেটভর্তি যাত্রী নিয়ে উড়ছে বিমান
বিমানের রানওয়েতে ঝরছে পালক
আর ঝরে ঝরে পড়ছে নিচের দিকে
সদ্য পেতে রাখা দুহাতের তালুতে...
কে জানতো পাখি ও বিমান—
একই রানওয়েতে উড়ছিল সেদিন!
নীল সাইকেল
মাটিপথ কাদাপানি মাড়িয়ে
আলো ঝলমল সিল্করোডে—
ভিড়-ভাট্টা, বাস-ট্রাক, রিকশার ফাঁক গলে
চলতেই থাকে—ঘুরতেই থাকে...
মাঝে মাঝে বিষণ্ন বাড়িফেরা রাতে
কিংবা পাখিডাকা আলো ফোটা ভোরে
আমার ক্লান্তিহীন বন্ধু ঘূর্ণায়মান চাকা
ঘুরতেই থাকে—চলতেই থাকে...
গোলাপ-প্রিয় প্রেমিকার মতো—
আমি বন্ধু ভাবি তাকে।
লোককাহিনি
রাতকে বলি রাত্রি জেগে মেঘ নামিও না
ওই মেঘগুলো এসে জমা হয় চোখের কার্নিশে!
দেখো না সমুদ্র কেমন গর্জন তুলে—
কাঁপিয়ে দেয় পাড়ের শরীর...
তুমি কোনোদিন অশরীরী হয়ো না।
লোককাহিনি থেকে উঠে এসে—
অযথাই ভয় দেখিও না।
চিতাকাঠ ছাই হয়
আমাকে পোড়াবে তুমি জলহীনা পতঙ্গহৃদয়
হাওয়ার ঘূর্ণিতে আমি পেতে রাখি ফাঁদ
আর কানে গুঁজে রাখি সমূহবিনাশ
শুধু শুধু পোড়াতে এসে নিজে হবে ছাই!
দহনে দাহ হয়ে কেঁপে ওঠে ঠোঁট
স্মৃতির রুমাল থেকে সুতা ছিঁড়ে—
এই অবারিত সবুজ প্রান্তরে কেন
সাজালে তুমি চন্দনের চিতাকাঠ?
মনে রেখো ও জলহীনা পতঙ্গহৃদয়
ফিনিক্স স্বভাবে আমি বারবার—
পোড়াতে থাকি নিজেরই হৃদয়
চিতাকাঠ ছাই হয়; পড়ে থাকে শুধু সংশয়।
চরকিপথ
চরকির মতো ঘুরে ঘুরে উপরে উঠছি
উপর মানে সিঁড়ি ঘোরানো চিলতে ছাদ—
উপরে তার জেগে আছে একাকিনী চাঁদ;
জোছনার বন্যায় কেটে গেছে প্লাবনের মেঘ।
বহুদূর সবুজ মাঠ—তারো দূর রেলগাড়ি পথ
সেই পথে পড়ে আছে ধুলোমাখা দিন...
চরকির মতো ঘুরে ঘুরে নিচে নামছি
নিচে মানে একাকিনী চাঁদ দেখে—
সিঁড়ি ঘোরানো পথে নামছে দু’পা
সঙ্গে তার পায়ের আওয়াজ...
খুব কাছে বিলবোর্ড—তারো কাছে বহুতল ছাদ
সেই ছাদে জেগে থাকে একাকিনী চাঁদ...
কন্যার প্রতি
নক্ষত্রের চামচ মুখে জন্মাও নি কন্যা আমার
এমনকি পিতলের চামচ মুখেও না!
বাজারের অতসব দামি জামার বদলে
দিয়েছি তোমাকে পাতার পোশাক!
আহা কন্যা আমার!
লিচুফুলের মধুটুকু ওর মুখে তুলে দাও এবার।
যখন তুমি খুলেছো চোখ পৃথিবীর মায়ায়
বাণিজ্যের বাতাস পাক খেতে খেতে
ছুঁয়েছে শহরের উঁচু মিনার—
আর অক্ষমতার দড়ি ঝুলিয়ে গলার ভেতর
মরাঘাসে দাঁড়িয়ে রয়েছি অপার!
আহা কন্যা আমার!
লিচুফুলের মধুটুকু ওর মুখে তুলে দাও এবার।
চাঁদের কুসুমিত পথে হেঁটে যাও তুমি—
বেড়ে ওঠো মাটি—ঘাস—তৃণের ভেতর
ঝরাফুল কুড়িয়ে বানাও গহনা তোমার
ঝলমলে ঐশ্বর্যগুলো চোখে মেখো না।
আহা কন্যা আমার! জেনে রেখো—
তোমার পিতা ছিল শুধু অক্ষরের দাস।
খুব বেশি নিকটে এসে
খুব বেশি নদীর নিকটে যাই
খুব বেশি গাছের নিকটে যাই
নতজানু হতে হতে নক্ষত্র মেখে
খুব বেশি মানুষের নিকটে যাই...
যখন বৃষ্টিকাতর সন্ধ্যাগুলো
রাতের গভীরে যেতে যেতে
কুসুম হবার অপেক্ষায় থাকে—
আয়নায় নিজেকে দেখে দেখে
খুব বেশি তোমার নিকটে যাই!
দেখো এই হাতের তালুতে
কোনো ভাগ্যরেখা নেই—
কপালেও নেই কোনো
জোছনামাখা ভাগ্যলিপিকা...
চাঁদকে সঙ্গে করে নিকটে এসে
দেখি দূরত্বের অনাগত রেখা
ফণা তুলে ছড়িয়েছে বিষ—
তাই খুব বেশি নিকটে গেলে
সমান দূরত্ব ধেয়ে আসে খুব...
জামা
তাকিয়ে থেকে নড়ছে-চড়ছে
হাত উঁচিয়ে ডাকার ভঙ্গিতে
নানা কসরত চালিয়ে যাচ্ছে—
যেন শরীর সে; অশরীরী হয়ে
আমারই ঘরে ভয় দেখাচ্ছে!
আলো-আঁধারে সারাঘরে
হেঁটে হেঁটে চৌকাঠ ডিঙিয়ে
হঠাৎ ঢুকছে—হঠাৎ বেরুচ্ছে
মাথা ও শরীরবিহীন—
নড়ছে-চড়ছে ভৌতিক জামা...

মধুগ্রাম
পায়ে পায়ে মধু লেগে থাকে
রূপপুরের ঘাটে। এ গ্রামে রমণীরা
বাঁশফুল খোঁপায় গোঁজে আর
মাটি দিয়ে চুল ধুয়ে রাখে!
সেই এক প্রাচীন মহুয়াবাগানে
অন্নদাসুন্দরী একা একা হাঁটে।
প্রাসাদে পাহারা নেই। প্রজা সব
রাজা হয়ে বেচাকেনা করে।
দূর ওই মাঠে—আলিফ লাইলার
টি-শার্ট পরে কাকতাড়ুয়া হাসে।
এ গ্রামে মধু, ঠোঁটে নয়—
পায়ে লেগে থাকে!
গল্পাংশ
তোমার কোনো গল্পে যিশু হাঁটেন না।
আমি হাঁটি। আমার কৃষিগন্ধা হাত—
ছুঁয়ে আসে—তোমার মাটিমগ্ন মৌনতা।
হয়তো পাতার জাহাজ জলহীন স্রোতে
ফ্রেমে আটক ছবির মতো ধূসর—
বহু প্রাচীন কোনো জাদুর বাক্স
মেলে ধরছে কিছু বাজির খেলা...
তুমি মৌন—নির্বিকার—স্থীর—
চোখের কোণে এক ফোঁটা জল
তাপ ও হাওয়ায়—রেখা হয়ে
ফুটে থাকে লতা ও পাতায়!
অনেকটা পথ হেঁটে এসে আমরা—
বসি। যিশু বসেন। মৃদু হাসেন।
তোমার ধ্যান ও ধারণায় আমি
নতুন কোনো গল্প হয়ে যাই...
বসন্তসূত্রে
মেয়েটি এখন প্রজাপতি। দেয়ালজুড়ে
ছড়িয়েছে চোখ—মেঘদৃষ্টির রেখা
পাখি হবার বাসনা নিয়ে বসন্তসূত্রের
ধরেছে হাত। গভীর রাতে ফুল হয়ে
ফুটেছে কোনো শীতের বাগানে!
হাওয়ার সান্ধ্য-বিকেলে—নদীতীরে
সূর্যকে ধরে ঢুকিয়েছে ব্যাগের ভেতর
আর নদীচিত্রে এঁকেছে ঢেউয়ের হাসি—
রঙে রঙে রাঙিয়েছে তার আকাশপথ;
মেয়েটি হেসেছে আর চোখ ভরেছে জলে।
কুণ্ডলী পাকানো কুয়াশায় ফুঁ দিয়ে—
মেয়েটি পাড়ি দিচ্ছে দীর্ঘ মিলনের পথ...
অন্ধত্ব
অন্ধকার প্রতিমার সামনে দাঁড়াই।
চশমার ফ্রেম মুছে রাখি পাতার ওপর—
অনেক শুকনো পাতা; যায় বসন্তদিন।
পাথরে পাখির কণ্ঠে কথা ফোটানোর আগে
আলোবিনাশী প্রবণতা ছুঁয়ে যায়—
কাঠ-কয়লার তামাটে শরীর...
কে আমাকে আজ দাঁড় করিয়েছে—
শ্মশানের মতো নীরব এই ভিটের ওপর!
সামনে আঁধারপ্রতিমা—
আলোর বিপরীতে আত্মহননের পথ...
উপড়ানো চোখ হাতে নিয়ে—
কার সামনে দাঁড়াবো এখন!
দূতিকা
নগ্ন হওয়ার আগে পোশাক পরতে হয়!
কাঁকরপথে বিছিয়ে রেখে লাল মার্বেল
ইতিহাসে ভিজিয়ে রাখি হাতপাখা ঘুম...
দূরের বাঁকে জেগে আছে কচুপাতায়—
শিশিরকণা—সাপের ফণা—লুডুর পাতা...
বায়োস্কোপের সকল ফুটো বন্ধ রেখে
দৃশ্য যদি ডেকে আনে দুধমাখা ভয়!
পোশাক পরার আগে নগ্ন হতে হয়!
অনুচিন্তা
টেবিল-বাতির আলো জ্বালিয়ে রাখো
সারা রাত্রিময়—গোলাপ জলের গন্ধ
থেকে থেকে বুকের কাছে বয়—
হাওয়ার ভেতর তুমিই লুকিয়ে থাকো।
দূরের কোনো ভাঙাচোরা হাটের
পায়ে পায়ে ধুলোওড়া বিকেল
চুপি চুপি তোমার কাছে গেলে
হালকা করে কেন সরিয়ে রাখো!
মনে মনে বাগান করা ভালো
চারাগাছে ফুটুক কিছু ফুল
শীতের মতো তুমিও বুঝি ফের
ঘুরে-ফিরে এক ঋতুতে আসো।
ভ্রম
চুল দেখলেই চিরুনি এগিয়ে আসে
যেমন তিল দেখলেই তাল ভেবে
অনেকেই ছড়িয়ে দেন গুজবের হাট!
এক অন্ধ ধীবরের হাতে লেগেছিল
মৎস্যগন্ধা ভোরের নদীর জল—
সেই জল ও জালের ফাঁদে কাঁদে
বেহুলার নদীবাসী গোপন হৃদয়...
কাজল এঁকে দেয় চোখের নিচে
হারানো কোনো রাত্রির আঁধার
একা একা ঝিঁঝিডাকা বিন্দুর মতো
শুয়ে থাকে দূর অরণ্যের পথ...
তাল ভেবে তিল দেখে অনেকেই—
কপালে লাগিয়ে দেন রূপের তিলক।
কৃষ্ণের জ্বর হলে
লৌকিক রাধা এসে ঘুরে গেছেন পার্বতীপুর!
সে এক প্রাচীন বট—ঝুরি দিয়ে বিছিয়েছে পথ
চোখবন্ধ অন্ধকারে ধাওয়া করে মোহনীয় সুর...
অসংখ্য প্রাণকণা সাপের লকলকে জিহ্বার মতো
নিশ্বাসের বায়ুজুড়ে খেলা করে বুকের ভেতর।
পাথরের প্রেম গেছে—দেহভর্তি যমুনার জলে
দেখো—কার সুরে কে নাচে সুদূর মাধবনগরে!
শত বছরের প্রত্নরাত ঘুম পাড়ে শাড়ির আঁচলে
কী মায়া বয়ে যায় যোজন হৃদয়ে-হৃদয়ে...
কৃষ্ণের জ্বর হলে রাধা পোড়ে শীতের আগুনে!
বিন্দু-পাথর
ও প্রাচীন ট্রাক, তোমার চাকায় পিষ্ট করো আমার মস্তক...
গুণটানা দুপুরগুলো হারিয়ে যাবার আগে বলেছে এ কথা!
নদীতীরে জলতরঙ্গে যখন এসেছিল সূর্য গড়ানো রোদ
দেবীও প্রতিমা হয়ে বালুচরে ছড়িয়ে যায় মিলনের ডাক...
কৃষ্ণের রথের বিপরীতে দাঁড়িয়েছিল এ কালের বিন্দু-পাথর!
শীতকালে নদীকূলে
গভীর কুয়াশা আমি চোখে পুষে রাখি—
প্রজাপতির পাখায় লিখি যাপনের ভার
তোমাদের হরিৎবাগানে জেগে থাকে চাঁদ—
হাত নেড়ে ডেকে আনে পাথরের যুগ।
বিলবোর্ড ভিজে গেলে বোকা বোকা লাগে—
শিশিরে লেপটে যায় মডেলের গাল; নাকউঁচু
ভবনের জানালার কাচজুড়ে ফুটে ওঠে টুকরো
বিষাদ; দরোজায় আঁচড় কাটে হারানো বিড়াল!
দেখো গভীর কুয়াশা আমি চোখে পুষে রাখি—
শীতকালে নদীকূলে তাই কোনো ভণিতা করি না।
অন্ধ বিড়াল
অন্ধ বিড়াল এসে প্রতিদিন দুধ খেয়ে যায়
এ-বাড়ি ও-বাড়ি হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত দুপুরে
ডুমুর গাছের নিচে চুপ করে বসে থাকে
অনুমানে গন্ধ শুঁকে শুঁকে মাথা নাড়ায়।
দিনের আলোয় ঝকমকে সূর্যের রোদে
অথবা রাতের বেলায় ঘুটঘুটে অন্ধকারে
ঝড়-বৃষ্টি প্রহারের ভয় ছাপিয়ে বিড়াল—
গৃহিণী রাখেন যে দুধ—সেখানে যায়।
শুনেছি বুড়ো এক লোক আমাদের পাড়ায়
রেখে গিয়েছিল শাদা এই জন্মান্ধ বিড়াল
কোনো কারণে দুধ কমে গেলে সকলে বলে—
অন্ধ বিড়াল এসে প্রতিদিন দুধ খেয়ে যায়!
1 মন্তব্যসমূহ
কিছু ভাল আছে৷ তবে খুব একটা না
উত্তরমুছুনঅস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।