....

পাণ্ডুলিপি থেকে : কালের কফিন / জুলকারনাইন স্বপন



প্রাণের কুড়িগ্রাম

ভালোবাসি, বড় ভালোবাসি
ধরলা নদী পাড়ের
ছোট্ট কুড়িগ্রাম শহর
শৈশবে ধুলোয় লুটোপুটি
কৈশরে দুর্দান্ত ছোটাছুটি
যৌবনে কবিতা, গান আর ভালোবাসাবাসি
তার সবই এই শহরে
এই শহরের আকাশ-বাতাস
মনে হয় একান্ত আপনার
শুধুই যেন আমার

ভালোবাসি, বড় ভালোবাসি
কোলাহলহীন নিষ্প্রভ এই প্রাণের শহর,
আর ভালোবাসি এই শহরের
অভাবী মানুষগুলোর হৃদয়ের বিশালতা



কালের কফিন

শূন্যতা, শুধুই শূন্যতা
সীমাহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত জীবন।
একটুও পলিমাটি পড়ে না বিবেকের জমিনে
স্বত্বা আজ লাশ হয়ে পড়ে আছে কালের কফিনে।

জাগো-জাগো বলে ডাক আসে না
সুউচ্চ মিনার থেকে!

রুদ্ধ— রুদ্ধ—
বিবেকের দ্বার আজ রুদ্ধ।
সহ¯্র আঘাতেও খোলে না কপাট!
কোথায় যাবে তুমি?
অনন্তের পথে?
সকল পথ রুদ্ধ
সীমাহীন অন্ধকারে!



পথ

হাঁটিতেছি পথ আদিকাল থেকে
খুঁজিতেছি পথ জন্ম-জন্মান্তর।
এক সভ্যতা পেরিয়ে আর এক সভ্যতায়।

লক্ষ কোটি বছর পরিক্রমা শেষেও—
পথের দিশা তবু মেলেনি এখনও!
আদিম থেকে আধুনিকতার রং শরীর-মস্তিষ্কে
আঁধার কাটেনি কোটি ওয়াটের বৈদ্যুতিক আলোতেও।

পৃথিবীর পথ এখনও ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত
তারপরও খুঁজিতেছি পথ গ্রীস থেকে চীনে
সীমানার পর সীমানা পেরিয়ে—
কালো চামড়া হয়নি কখনো সাদা
রক্তের রং এখনো দেখি তো লাল
প্রথম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং আবারো যুদ্ধ-যুদ্ধ!

খুঁজিতেছি পথ ইতিহাসের পৃষ্ঠায়।
নতুন মানুষের আসা যাওয়া এই ধরায়
খুঁজিতেছি পথ চিরশান্তি ও মুক্তির ঠিকানায়।




আসন্ন

সময়টা বুঝি বন্ধ্যা—
লিখতে ইচ্ছে করে না কবিতা,
চলায়-বলায়
কেমন যেন আড়ষ্টতা।
মনেও খেলা করে না কোনও সুর,
উদাস দৃষ্টি চেয়ে থাকে বহুদূর।

প্রকৃতিতে ছন্দঃপতনের হাওয়া
পাখিরাও ভুলে গেছে গান গাওয়া।
হতাশা আগ্রাসন চালায় রক্তের গতিতে,
অশুভ ছায়া নাচানাচি করে দিনরাত্রিতে।

দুঃখের লু-হাওয়া বয়ে যায় হৃদয়গ্রন্থিতে
শান্তি চিৎকার করে কাঁদে মনুষ্য জনপদে।
তেমন কোন ওলট-পালট কি আসন্ন বিশ্ব তল্লাটে!



নিজেকে আঁকি

এক পলকে দেখা দু’টি চোখ,
হৃদয়জুড়ে অংকিত যে হলো
মাঝে-মধ্যে মনের গহীন কোণে
মুখখানি তার ভাসে যেন
হাজার তারার আলো।

মিষ্টি মধুর চোখের ভাষা
যেন শতবর্ষের চেনা,
পলকে তার ঝলক পড়ে
ও সেই ভাবের লেনাদেনা।

যায় কি ভোলা সেই চোখের মায়া,
শত চোখ তো দেখি—
তোমার চোখে আজও সখি
এই নিজেকে আঁকি।



কষ্টের ডাক

কষ্টেরা         ডাক দিয়ে যায়
দিন-রাত্রি              বেলা-অবেলায়।
কষ্টেরা                 ডাক দিয়ে যায়
বেসুরে          সময়-অসময়।

কষ্টেরা ডাক দিয়ে যায়
জীবন নদীর বেসামাল ভেলায়।

কষ্টেরা ডাক দিয়ে যায়
ভাতের থালায়,
জীবন চলার রূঢ় বাস্তবতায়।

প্রেম-পিরিতের রহস্য ইশারায়
কষ্টেরা ডাক দিয়ে যায়।



জীবনের খোঁজে

নিঝুম কালো রাত্রির পথ বেয়ে
দুঃস্বপ্ন হানা দেয় চোখে;
কষ্টেরা দানা বাঁধে বুকে।
হতাশা গ্রাস করে সকল অস্তিত্ব!

একটুখানি চাঁদের আলো পড়ে না
আঁধারের কোলে।

পেঁচার অশুভ ডাক আলোড়ন তোলে—
সারা মস্তিষ্কে।
অজানা আতঙ্ক বিকল করে দেয় স্নায়ুগুলো,
কণ্ঠরোধ করে দানবীয় আঙুলের বেষ্টনী,
শূন্যে হাত-পা ছুঁড়ি বাঁচার তাগিদে
আবার নেতিয়ে পড়ি।

তবে কি আমি নিথর হয়ে যাব!
জেগে উঠবো না কোনদিন জীবনের খোঁজে?
স্বপ্নের তরী বেয়ে জীবনের নিত্য জাগরণে!



কালো শাড়ি

কতবার তোমাকে বলেছি— কালো শাড়িটি পরো না
যদিওবা কালো শাড়ি তোমাকে মোহনীয় করে তোলে
যেন রূপশ্রী রাধিকা।
তবুও একটা অশুভ ছায়া খেলা করে যেন
কালো শাড়ি... কালো দিবস... কালো পতাকা।

বায়ান্নর একুশ বারবার হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায়
নাড়া দিয়ে যায় মস্তিষ্ক-রক্ত-শিরায়
বাঙালির নবজাগরণের মহাচেতনায়
মনে পড়ে যায় সালাম, রফিক, শফিক,
বরকত ও জব্বার
বুকের রক্তে ভিজিয়েছিলো জমিন বাংলার।

ওদের রক্তে লেখা হয়েছিলো
রক্তাক্ত ইতিহাস আর মৃত্যুজয়ের কবিতা।
সেই একুশ! বাংলার একুশ! বায়ান্নর একুশ!
মাতৃভাষার একুশ!
আজও আমাকে জীবনযুদ্ধে আলোড়িত করে,
তাই বলছি— কালো শাড়িটি পরো না তুমি ভুলে
তুমি নও শুধুই শোকের,
তুমি উদ্দীপ্ত স্বপ্নের।



কিছু মেঘ ছায়ার শরীর

শীতের কফিনে পড়ে আছি আমি
তৃতীয় বিশ্বের মানুষ নামক ঘৃণিত জীব।
পেটে ক্ষুধার আগুন দাউ দাউ জ্বলে,
পাশে ঠাঁই নেয়া কুকুরের লোমের উত্তাপের আশায়
ঘনিষ্ঠ হতে চাই।

সেও আঁকড়ে ধরতে চায় আমাকে আপন ভেবে
অনুভব করি তার শরীরের কম্পন,
একাকার হয়ে যাই নিবিড়ভাবে দু’জনে।
প্রতীক্ষায় থাকি—
কখনো ফুটবে ভোরের আলো, উঠবে সূর্য
সোনালি সূর্য-উত্তাপ ছড়াবে শীতের চাদরে?

আমিও মা-নু-ষ, সেই মানুষ
অন্য মানুষ—ভিন্ন মানুষ।



কালো চামড়ার স্বাধীনতা

সেই কবে— কতদিন আগে—
একদিন—
ইতিহাসের পৃষ্ঠায়,
কালো অক্ষরে ঠাঁই নিয়েছিলো
বর্বরতার এক করুণ ইতিহাস।
গোলামীর শেকল পরার ইতিহাস।

কোচকানো কালো চামড়ায়
রক্তজবার মতো টকটকে লাল
চাবুকের দাগের ইতিহাস।
জোয়াল টানার ইতিহাস।
ঘানি টানার ইতিহাস।
শেকল পরার ইতিহাস।
সেই কালো এখনো অবিকল।

গোলামীর জিঞ্জিরে বাঁধা
তাদের জীবন-স্বাধীনতা।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

7 মন্তব্যসমূহ

  1. খুব একটা ভালো লাগলো না।

    উত্তরমুছুন
  2. প্রাণের কুড়িগ্রাম
    কবিতার শেষ অংশ আমার জীবনের উদ্দেশ....
    কবি ও কবিতার দীর্ঘায়ু কামনা করি।

    (আর ভালোবাসি এই শহরের
    অভাবী মানুষগুলোর হৃদয়ের বিশালতা)

    উত্তরমুছুন
  3. মোটামোটি চলে৷ কবিতা লেখার চেষ্টা চালু থাকুক৷ শুভকামনা

    উত্তরমুছুন
  4. না, মাইকেল, ভালো লাগলো না৷ এই লোক কেন যে কবিতা লিখছে, তাই বুঝলাম না৷ সাহিত্য অন্য জিনিস ভাই, এত তরল নয়৷

    উত্তরমুছুন
  5. বুঝতে পারছি, আজ আমার কপালে এটাই ছিল। দুঃখিত, কবিতাটা ভাল লাগল না। লেখক এইসব ছাইপাশ লেখা ছেড়ে হালচাষ করলে দেশ সিডলেস লেবু ফলনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হইত।

    উত্তরমুছুন
  6. এইসব যদি কবিতা হয়,তাহলে বাংলা সাহিত্যের কপালে দুর্গতি আছে। আসলে আছে কি হয়েই গেছে। না হলে কি এইসব আপনি ছাপেন? মর্মান্তিক!

    উত্তরমুছুন
  7. মিজান মোল্লা১ মার্চ, ২০২১ এ ৮:৪৯ AM

    কী মিষ্টি কবিতা॥ খুউউউউব ভালো লাগলো। কবির জন্য দোয়া করি, যেন আরও এমন কবিতা লেখেন।

    উত্তরমুছুন

অস্বাভাবিক মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।