....

একরাম আজাদ -এর কবিতা


পতাকা

পতাকা টাঙানোর মতো বিশেষ কোনো আল্লাদ আমাদের কারুরই ছিলো না। তবুও টিনের চালায় একটা পতাকা দেখা দেয় - সকাল-সন্ধ্যা পতপত করে নাচে। পরে জানা যায়, কাণ্ডটা আমার স্কুলপড়ুয়া বোনের-  সাধ করে কিনেছে মেলায়।

যদিও আমার ধর্মভক্ত পিতা পাকিস্তান-ভাগ নিয়ে বেজায় অতুষ্ট আর আমি দেশভাগের সুফল-কুফল নিয়ে দু’টানায় ভুগছি আজন্ম, তবুও পতাকা নিয়ে আমাদের কারোর আপত্তি উঠেনি। হিসেবি মা একবার শুধু র্দীঘশ্বাস ফেললেন। এরপর অনেক বছর গত হলো। আমাদরে বয়স বাড়ে। পতাকার কথা আমরা ভুলে যাই।

এক সন্ধ্যায় আমাদের উঠোনেও একটি লাশগাড়ি দেখা যায়। আমার বোনকে দিতে এসছে। শি হেজ বিন রেপড বাই এ গ্যাং আন্ডার সান শাইন! হঠাৎ আমার চোখ চলে যায় কোণার সেই পতাকার দিকে। আমার বোনের মতো খামচে যাওয়া পতাকাটি তখনও পতপত করে নেচে যাচ্ছে।

প্রচণ্ড ঘৃণা নিয়ে বাবা বলে উঠলো 'অই দ্যাখ বাংলাদেশ'!


ল্যাজের কামড়


এবার এক মামুলি পুঁটি খোদ বক ধরবার আশায় অপেক্ষা করছে কয়েকটা মনসুন! তার একমাত্র এম্বিশান বক ধরা! নানান জাতের বক - দ্য র্লড অনলি বাই র্আমস। কিন্তু সে জানে, পৃথিবীর খাদ্যজাল তাকে আর তার পূর্বপুরুষকেই  যুগে যুগে শিকার বানিয়েছে কানা-বুগীদের; তাঁরাই পুঁটির অপেক্ষারত সবক'টি মৌসুম।


তাই শুধু বক শিকারের লোভেই জন্ম থেকে গিলে আছে সে সুচালো বর্শী এক - কোনোদিন পরাক্রম মোড়লের গলায় গিয়ে আটকাবে বলে।


স্বপ্ন


জন্ম থেকেই এত বিধ্বস্ত ছিলাম যে স্বপ্নের সাথে পরিচয়টা হয়েই উঠেনি। যখন বর্ণমালা শেখার বয়স, মা আমাকে ভয় শিখিয়ে ফেলেছিলেন ভুলে; তখন থেকে রোজ রাতে আমি দুঃস্বপ্নের পাঠ নিই।


একবার পা পিছলে প্রেমে পড়ে গেলে প্রেমিকার উষ্কানিতে আমি মায়ের অবাধ্য হয়ে ওঠি । হঠাৎ এতগুলো স্বপ্ন ঝেকে বসলো- আমি রাতে ঘুমাতেই ভুলে গেলাম। আমার সমস্ত দিন আর রাত স্বপ্নের দখলে চলে যায়। এভাবে আমার মা এবং মায়ের পাঠ দেওয়া দুঃস্বপ্নের স্কুল থেকে পাঠ চুকে নিই।

কিন্তু সরকার এবং প্রেমিকা যেহেতু নিয়ম মাফিক বদলায়, আমার পিছলে যাওয়া পাটা আগের জায়গায় আসতে খুব দেরি করেনি। কিন্তু স্বাধীনতা বস্তুটার কুফল এই যে, মানুষ একবার অবাধ্য হতে শিখে গেলে তাকে আর নিয়মে বাঁধা যায় না। অতঃপর, আমি একে একে মা, দুঃস্বপ্ন এবং স্বপ্নকেও ডিঙিয়ে গেলাম! এরপর তারা কেউ কখনও আমার কাছে পৌঁছাতে পারিনি!



ফ্রাইডে’তে আমার জ্বর হয় খুব

ফ্রাইডে-কে আমাদের পাড়ায় শুক্রবার নামে ডাকা হয়। শৈশবেই মুখস্থ করেছি শুক্রবার মানে ছুটির দিন। যেহেতু ছোটাছুটির অভ্যেস নাই-  প্রত্যকে ফ্রাইডেতে আমি অলস হয়ে পড়ি আর আমার জ্বর হয় খুব। তাই  নাম দিয়েছি ফেইবার ডে ।

ইদানিং আমার আরও বেশি জ্বর হয়। জ্বর হলে আমি সিংহাসনচ্যুত সুলতানের মতোন হয়ে পড়ি । যেনো সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব'নে যাই হাবসি দাস। কিন্তু দাসত্ব আমার একদম পছন্দের নয়। ফলে খুউব অসহায় লাগে ।

যতবার অসহায় হই, আমার সুবোধের কথা মনে আসে।সুবোধকে বড় ভালোবাসি।কখনও তাই সমেবেত কণ্ঠে বলা হয়নি 'সুবোধ তুই পালিয়ে যা'। বরং তখন তাকে সঙ্গ দিতে খুব ইচ্ছে হয়। এ-সময় মাউথঅর্গানের খুব দরকার প'ড়ে (কেনোনা মমিদের জাগাতে হবে মিছিলের পক্ষে)। কিন্তু অভাব আমাকে মাউথর্অগান কিনতে দিলো না!


জন্মদিনেই কী করে বলি


দু'হাজার তেরো থেকে আমি এপ্রিলের পাশাপাশি অক্টোবরকে রাখি।  এদের দু'জন ক্যালেন্ডারের কোনো এক র্বষে অন্তঃসত্ত্বার দায়মুক্তি পেয়েছিল বলে উৎফুল্ল হই। ভালোবাসি।


আজ অক্টোবরের সাতাশ তারিখ- মৃন্ময়ের জন্মদিন। মৃন্ময় আমাকে ভালোবাসে। আমিও; সে মনে করে। জানি, খুব করে চেয়েছিল এই দিনে আমাকে বিয়ে  করবে। আমি অবশ্য বৈশাখে আগ্রহী ছিলাম;  আমার জন্মদিনে। কিন্তু কোনো কথা না রেখে বিয়েটা জুলাইতেই হয়েছিল আমাদের। ইউ হেইট জুলাই!

জন্মদিন এলে আমাদের সমজোতা চুক্তি হয়। ভালোবাসাবাসি বেড়ে যায়। স্মৃতিদের যৌথভাবে ডেকে তুলি ৷ ওখানে নষ্টের ঘষামাজা হয়। কিন্তু আজকাল আমার খুব অভাব। অভাবের কালে আমি সবার অপ্রিয় হয়ে উঠি। ক্রমে পৃথিবীর প্রতি ক্ষোভ জমে। যেহেতু প্রেম পার্থিব বস্তু-  তাকেও বাদ রাখতে পারি না। ফলে প্রেমিকাও।

কিন্তু জন্মদিনেই কী করে বলি আমি 'ভালোবাসি না'?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ